রাজশাহীর বাঘা প্রাচীন স্স্থাপত্যের নিদর্শন সমৃদ্ধ অন্যতম দর্শনীয় স’ান। প্রায় ৫০০ বছরের পুরনো মসজিদ ৫০ টাকার নোটে ও জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত শাহী মসজিদ শোভা পাচ্ছে। সুবিশাল দীঘি, মহিলাদের প্রাচীন আন্দর মহল পুকুরের ধ্বংসস’ুপ, হযরত আব্দুল হামিদ দানিশ মান্দ ও তদ্বীয় হযরত মুয়াজ্জেম দানিশ মান্দ শাহ্‌দৌলা ৫ জন সঙ্গীর মাজার ঐতিহাসিক ভ্রমণপ্রিয় ধর্মানুরাগী মাুনষের জন্য এক আকর্ষণীয় স’ান। পদ্মার তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা ঐতিহাসিক স’াপত্য কীর্তির প্রাচীন নিদর্শনটি দেশের অন্যান্য পর্যটন শিল্পের চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়।
১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীনের পর থেকে রাজনৈতিক দলের প্রধানসহ এমপি, মন্ত্রী, বাঘাকে পর্যটন কেন্দ্রে হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিলেও তার কিছুই বাস-বায়িত হয়নি। পর্যটন শিল্পের অন্যতম আকর্ষণ হতে পারে শাহী মসজিদ। ব্যিখাত ও বহুল প্রচারিত শাহী মসজিদ এককালে এতদঞ্চলে ইসলাম প্রচারে নিবেদিত এক সাধকের প্রতি বাংলার সুলতানি আমলের অন্যতম সুযোগ্য শাসকের স্বীকৃতি ও শ্রদ্ধার নিদর্শন। যা বর্তমানে ৫০ টাকার নোটে ও ১০ টাকার ডাক টিকিটে শোভা পাচ্ছে।
রাজশাহী শহর থেকে ৪৫ কিলোমিটার পূর্বে পদ্মা নদীর তীরে প্রায় ২৫৬ বিঘা জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত দর্শনীয় শাহী মসজিদ। সুবিশাল দীঘি ও আউলিয়াদের সমাধি স’ান দরগাহ্‌। সমতল ভূমি থেকে প্রায় ৮-১০ ফুট উঁচু একটি বেদির উপরে মসজিদটি তৈরী করা হয়েছে। এর দু-পাশ দিয়ে দুটি বিশাল গেট রয়েছে। তৎকালিন বরেন্দ্র অঞ্চলের ঐতিহ্যকে টেরাকোটা তথা পোড়ামাটির কারুকাজের দেশজ নিদর্শন দিয়ে শাপলা ও লতা-পাতাসহ পর্সিয়ান খোদাই শিল্পে ব্যবহৃত হাজার রকম কারুকাজ। মসজিদটিতে রয়েছে ৫টি দরজা, ১০টি গম্বুজ, ৪টি ষৌচালা গম্বুজ, ভেতরে ৬টি স-ম্ভ, ৪টি অপূর্ব কারুকাজ খচিত মেহেরাব। দৈর্ঘ্য ৭৫ প্রস’ ৪২ উচ্চতা ২৪৬ দেয়াল চওড়া ৮ গম্বুজের ব্যাস ২৪ উচ্চতা ১২। মাঝখানের দরজার উপরে ফার্সি ভাষায় লেখা একটি শিলালিপি রয়েছে।
প্রতিষ্ঠাকাল ১৫২৩-২৪ খ্রিষ্টাব্দ। ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে স’ানীয় অন্যান্য ঐতিহাসিক ইমারতের সঙ্গে শাহী মসজিদটিরও ক্ষতি হয়। পরে ১৯৭৬-৭৭ সালে তা পুনঃনির্মাণ করা হয়। মসজিদ প্রাঙ্গণের উত্তর পাশেই রয়েছে হযরত শাহ্‌দৌলা ও তার ৫ সঙ্গীর মাজার। ১৯৭২ সালে এখানে তৈরী হয়েছে শাহ্‌দৌলার নামে বাঘা শাহ্‌দৌলা ডিগ্রী কলেজ। সুরমা মসজিদ দর্শন ও মাজার জিয়ারত করতে আসে দুর-দুরানে-র লোক শরিক হয় শুক্রবারের জামায়াতে। লোক সমাগম বেশি হওয়ায় ভেতরে আর জায়গা ধরে না। এজন্য ৯০/৪০ একটি বাইপাস চত্বর বেঁধে দেয়া হয়েছে মসজিদের বাইরে। এছাড়া প্রতি ঈদুল ফিতরে এখানে লক্ষাধিক লোকের আগমন ঘটে এ উপলক্ষে ঈদে বিশাল জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়।
অনেকেই বলে থাকেন, শোলাকিয়ার পরই বাঘা ঈদগাহের স’ান। এ উপলক্ষে যুগ যুগ ধরে এখানে চলে আসছে বিরাট ঈদ মেলা। ৫০০ বছরের অন্যতম এ স’াপত্য কীর্তির সংস্কার ও সংরক্ষণ অতীব গুরুত্বপূর্ণ। ২০০৮ সালের আগষ্ট মাসে ফুর্তি এফএম রেডিও গ্রামীনফোনের মাধ্যমে দেশের ২১টি প্রত্নতাত্ত্বিক স’াপনা থেকে ৭টিকে এসএমএসের মাধ্যমে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় নির্বাচনের জন্য দেশবাসীকে আহ্বান জানালে বাঘা শাহী মসজিদ প্রথম স’ান অধিকার করেছে। আরো আছে জহরখাকী পীরের মাজার। মূল মাজারের উত্তর পাশেই এটি অবসি’ত। কথিত আছে হযরত জহরশাহ (রহ:) ১৪ তোলা বিষ খেয়েও দীর্ঘদিন জীবিত ছিলেন। তার কবরের পাশেই রয়েছে ৩ গম্বুজ বিশিষ্ট একটি ছোট মসজিদ। একই ধরনের ইট, চুন সুরক্ষিতে গাথা সুদর্শন এ মসজিদটির দৈর্ঘ্য ২০, প্রস’ ১৩। জানা গেছে রইশ পরিবার ও বাইরের পর্দানশীল মহিলাদের জন্য তৈরী হয়েছিল মসজিদ। সমপ্রতি মাজার ঘেঁষে আরও একটি মোজাইক বিশিষ্ট নতুন মসজিদ নির্মিত হয়েছে অপরূপ কারুকাজে। এর দৈর্ঘ্য ৫০, প্রস’ ৫৫, উচ্চতা ১৩। আরেকটি অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে সুবিশাল দীঘি। বাংলার স্বাধীন সুলতান আলাউদ্দীন হুসাইন শাহ্‌র ছেলে নাসির উদ্দীন নুশরত শাহ্‌ মসজিদের সঙ্গেই জনকল্যাণের নিমিত্তে খনন করেন এ দীঘি। শাহী মসজিদ ও মাজার সংলগ্ন দীঘিটি ৫২ বিঘা জমির উপরে রয়েছে। প্রতি শীত মৌসুমে সুদুর সাইবেরিয়া থেকে দীঘিতে আগমন ঘটে অসংখ্য অতিথি পাখি। যা ভ্রমণ বিলাসী মানুষের নজর কাড়ে। এখানে রয়েছে পিকনিক কর্ণার। প্রতি শীত মৌসুমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হাজার হাজার মানুষ ছুটে আসে বাঘায়। ১৯৯৪ সালে স’ানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের মাধ্যমে এটি পুনঃখনন করানো হয়। নতুন করে বাঁধানো এর ৪ পাড়ে লাগানো হয়েছে সারি সারি নারিকেল গাছ। ফলে বৃক্ষরাজি পরিবেষ্টিত দীঘি ও মসজিদের সৌন্দর্য্য বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। ভ্রমণ বিলাসী মানুষের মন কাড়তে এই স’ানের কোন জুড়ি নেই।

এসএমএ হাসনাত, রাজশাহী

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here