প্রভাব পড়বে আগামী নির্বাচনে নৌকার পালেস্টাফ রিপোর্টার :: সাম্প্রতিক সময়ে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরএলাহীতে একটি মহল বিশেষের কৌশলী অপপ্রচারে জাতীয় নির্বাচনের বছরে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে আওয়ামীলীগ। এই মহল বিশেষটি এতবেশি উৎসাহী যে, তারা বছর দুয়েক আগের কথিত ধর্ষণ সহ অলৌকিক ঘটনাবলিকে পুঁজি করে স্থানীয় পর্যায়ে ভাড়াটিয়া লোকজন দিয়ে মানববন্ধন এবং মানববন্ধন পরবর্তি সংবাদ স্যোসাল মিডিয়া সহ কিছু অনলাইনে প্রকাশ করে ক্ষতিগ্রস্থ করছে আওয়ামী রাজনীতিকে।

বিভিন্ন সূত্রমতে উপজেলা পর্যায়ের কতিপয় আওয়ামীলীগ নেতার গোপন ইন্ধন এবং জামাতের সাথে সখ্যাতাকারী কতিপয় সাংবাদিকের অতি বাড়াবাড়িতে এই এলাকায় ম্লান হতে যাচ্ছে আওয়ামীলীগের সকল উন্নয়ন কর্মকান্ড। প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে আওয়ামীলীগ। এমন দাবী খোদ দলের স্থানীয় নেতাদের। তাদের দাবী এর সুদূর প্রসারি কুফল আগামী জাতীয় নির্বাচনে নৌকার পালে লাগবে।

সরজমিন অনুসন্ধান এবং বিভিন্ন সূত্রমতে জানা গেছে চরএলাহী দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি মোজাম্মেল হোসেন মেম্বারের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর নামে চরএলাহী যুবলীগ উত্তরের সাধারণ সম্পাদক বর্তমান ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাকের সমর্থিতরা যেসব কর্মকান্ডে লিপ্ত তাতে ভাবিয়ে তুলছে দলের নেতাকর্মীদের।

বৃহস্পতিবার হাসেম বাজার সংলগ্ন জনৈক ইসমাইলের বাড়ির সামনে মানববন্ধন করে তারা। মানববন্ধনকারীরা মোজাম্মেল মেম্বারের বিচার দাবী করে। পরবর্তিতে স্যোসাল মিডিয়ায় এবং কতিপয় অনলাইনে মানববন্ধনকারীদের বরাত দিয়ে প্রকাশিত সংবাদে মোজাম্মেল মেম্বারকে নোয়াখালীর এরশাদ সিকদার, তার বিরুদ্ধে খুন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি সহ নানাবিধ অভিযোগ আনা হয়।

মানববন্ধনে কথিত ধর্ষণের স্বীকার তরুণীটির বাবা মোস্তফা এবং মাতা ছেমনা খাতুনকে হাজির করে তাদের আবেগজড়িত বক্তব্য জনসম্মখে প্রকাশ করা হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে কথিত এই ধর্ষণের ঘটনাটি দুই বছর আগের। ঘটনায় হাছিনা আক্তার বাদী হয়ে একটি মামলা করে, কোম্পানীগঞ্জ থানায় মামলা নং-০১, নাঃশিঃ নং ৭৩৫/১৬। এ মামলায় মেডিক্যাল রিপোর্টে ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি বলে জানা গেছে। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন। স্যোসাল মিডিয়ায় ধর্ষণ সহ যেসব মামলাগুলোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে যেমন, মামলা নং-০৩, জিআর নং-১৭০/১৬, আয়েশা বেগম বাদী হয়ে একটি মামলা করে, মামলা নং-১০, জিআর নং-১৫৫/১৬ ছেমনা খাতুন বাদী হয়ে একটি মামলা করে, মামলা নং-০২, জিআর নং-১৬৯/১৬। এইসব মামলাগুলো একই পরিবার কতৃক একই দিনে দায়ের করা।

এই মামলাগুলো দায়ের করেছে কথিত ধর্ষিতার ভাই ইসমাইলের পরিবারের সদস্যরা। আর এই মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছিল গত ইউপি নির্বাচনের পূর্বে। স্থানীয়দের মতে মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছিল উত্তরের এক বিশেষ ব্যাক্তির দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তির সুবিধার্থে। মামলাগুলোতে মোজাম্মেল মেম্বার জামিনে রয়েছেন। রাজনৈতিক সচেতন মহলে প্রশ্ন উঠেছে, সাম্প্রতিক সময়ে শান্ত চরএলাহীতে জনপ্রিয় আওয়ামী সংগঠক মোজাম্মেল মেম্বারের বিরুদ্ধে নন ইস্যুকে ইস্যু করে চরএলাহীকে উত্তপ্ত করা হচ্ছে কার স্বার্থে? চরএলাহী কোম্পানীগঞ্জের সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন। সাগর বিধোত এই ইউনিয়নে প্রতিনিয়তই দৃশ্যমান হচ্ছে নতুন নতুন চর।

মাইলের পর মাইল শত হাজার একর এই চর সমূহ দখলে বরাবরই একটি মহল তৎপর থাকে। বিভিন্ন সূত্রমতে মোজাম্মেল হোসেনের বাড়ি দক্ষিণাঞ্চলে। স্বভাবতই চরগুলো তার এলাকায়। স্থানীয় আওয়ামীলীগের অনেক নেতাই এই প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগ করেছেন, মোজাম্মেলের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক মানববন্ধন সহ অপপ্রচার অনেকটা পরিকল্পিত। কথিত ভুয়া অভিযোগ এনে মোজাম্মেল মেম্বারকে কোনঠাসা করা গেলে দক্ষিণের নিয়ন্ত্রন ভার লাভ করা যাবে সহজেই। নোয়াখালীর দক্ষিণাঞ্চলের এক শ্রেনীর রাজনীতিবিদদের ভুয়া নথি সৃজনের মাধ্যমে তা বিক্রী করে কোটি কোটি হাতিয়ে নেওয়ার প্রবনতা রয়েছে।

স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা জানায়, তরুণ বয়স থেকে মোজাম্মেল বঙ্গবন্ধুর অনুসারি । ২০০৪ সালে বিএনপির কর্মী নূর ইসলামের মৃত্যুর ঘটনায় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। পরিবর্তিতে মৃত্যুটি হত্যায় প্রমানিত না হওয়ায় আদাল মোজাম্মেল মেম্বার সহ সকল আসামীকে বেখুসুর খালাস প্রদান করে।

কিন্তু কতিপয় সাংবাদিক বিএনপি কর্মীর মৃত্যুর ঘটনায়ও মোজাম্মেলের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। বারবার বিএনপির প্রতিহিংসার স্বীকার মোজাম্মেল মেম্বারকে নির্যাতনের স্বীকার হতে হয়েছিল বিএনপির ক্ষমতাকালীন সময়ে। ২০০৪ সালে তৎকালীন বিএনপির পুলিশ, আওয়ামীলীগ করার অপরাধে মিথ্যা ডাকাতির মামলায় গ্রেফতার করে থানায় অকথ্য নির্যাতন করে মোজাম্মেল মেম্বারের হাতের নখ তুলে নেয় নির্দয়ভাবে ।

স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতারা জানান, বর্তমানে যিনি উত্তরের নেতা তখন তিনি বিএনপি নেতা ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন তোতার মটর সাইকেল ড্রাইভার কাম দেহরক্ষী ছিলেন। বিশেষ মহলের পক্ষতুষ্ট সাংবাদিক মহলটি যাদের বক্তব্য তাদের প্রতিবেদনে তুলে ধরেছেন এরা সকলে দলে অনুপ্রবেশকারী। এদের একজন মো: বাকের হোসেন ওরফে বাকের সর্দার। তিনি দলের কোনো পদে না থাকলেও পক্ষতুষ্ট সাংবাদিক মহলটি তাকে ইউনিয়ন আ’লীগের দক্ষিন শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক হিসাবে উল্লেখ করেছে। সে একসময় বিএনপির ক্যাডার ছিল। গাংচিল বাজারের খাল দখলকারী আবু তাহের সওদাগরকে খাল দখল থেকে নির্বত রাখতে মোজাম্মেল মেম্বার বাধা দেওয়ায় তাহের সওদাগর মোজাম্মেল মেম্বারের বিরুদ্ধে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ এনেছে বলে জানা গেছে।

এরকম অনেকেরই বক্তব্য স্যোসাল মিডিয়া সহ বিভিন্ন অনলাইনে দেখা গেলেও সরজমিনে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। নোয়াখালীর এরশাদ সিকদার নয়, দলীয় নেতাকর্মীদের মতে মোজাম্মেল মেম্বাররা আওয়ামীলীগের অতন্ত্র প্রহরী। ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক এই প্রতিবেদককে দক্ষিণের মোজাম্মেল নয়, নির্যাতনকারী হিসাবে উত্তরের এক নেতার প্রতি তীর ছুড়ে মেরেছেন।

বিভিন্ন সূত্রমতে চরএলাহীর নতুন জেগে ওঠা হাজার হাজার একর ভূমি দখলের উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে নন ইস্যুকে ইস্যু বানিয়ে মোজাম্মেল মেম্বারকে বিতর্ককিত করে তাদের ফয়দা হাসিলের মিশন জনসম্মুখে প্রকাশ হয়ে গেছে। রাজনৈতিক ছত্র ছায়ায় ভূমি দস্যুরা যে মিশন শুরু করেছে তা সফল হলে খেসারত দিতে হবে আওয়ামীলীগকে। বর্তমান সরকারের আমলে চরএলাহীতে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ড সাধিত হয়েছে। সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডে দিশেহারা প্রতিপক্ষ। দলের নীতিনির্ধারকরা এখনই যদি চরএলাহীর সাম্প্রতিক নাটকগুলোর বন্ধের উদ্দ্যেগ গ্রহন না করে তাহলে ক্ষতিগ্রস’ হবে আওয়ামীলীগ, যার প্রভাব পড়বে আগামী নির্বাচনে নৌকার পালে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here