জি এম কামরুল হাসান :: “ওরে পেঁয়াজ, কেন এতো বেঁড়ে গেলো তোর ঝাঁজ?”
এভাবে যখন একজন কবিও হাতে কলম তুলে নিয়ে লিখতে শুরু করে কবিতা! সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও উঠে মহামারী মহা তান্ডব এক ঝড়, নাম তার পেঁয়াজ! কত ট্রল যে হচ্ছে তা বলে শেষ হবেনা।
এখানে মানুষ একটু রসিকতা খুঁজে পেলেও বাস্তবতা ঠিক তার উল্টো। আমরা বাঙ্গালীরা আগা-গোড়াই ভোঁজন বিলাসী এটা মিথ্যা নয় তবে তাই বলে নিত্য প্রয়োজনীয় এমন একটা পণ্য নিয়ে কেন এতো বাড়াবাড়ি? আমাদের জাতীয় জীবনে কত রকমের যে মসকরা চলে তা বলে শেষ করা যাবেনা!
ফল খাবেন? ফরমালিন, মাছ খাবেন? ফরমালিন, চাউল কিনবেন? ইউরিয়া, মাংশ কিনবেন? বলবে গরু দিবে মহিষ কোথাও শুনি ছাগলের পরিবর্তে কুকুর বা শেয়াল, ফসল ফলাবেন সার বীজ নকল, বই কিনবেন? কাগজ কালি নিন্ম মানের, পরীক্ষার সময় প্রশ্ন ফাঁস, জিপিএ তে গরমিল, ছাত্রদের নীতিহীন রাজনীতি, শিক্ষকদের দলা-দলি, সংসারে স্বামী -স্ত্রীর সমানাধিকার নিয়ে রশি টানাটানি আর রাজনীতির নীতি নিয়ে নাইবা বল্লাম! তেল মারতে মারতে কখন যে তেলের সাগরে সব তলিয়ে যাচ্ছে তার খোঁজ কে রাখে।
সবাই এক মহা দৌঁড়ের অসম প্রতিযোগিতায় লিপ্ত, কে কার থেকে বড় হবে, সেটা যদি সৎ পথে হয় কথা নেই সবই হতে হবে সর্ট-কার্ট পদ্ধতিতে। এটা কেমন কথা? গুরু মারা বিদ্যায় দেশের সব খানে সব বিষয়ে কেন এতো বাড়াবাড়ি?
আমরা মনে করেছিলাম সত্যি বোধহয় দেশে পিঁয়াজের শর্ট আছে! কন্তুু এখন যা দেখছি তা রীতিমতো তাজ্জব বনে যাওয়ার মতো! মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি প্রথম থেকেই বলে আসছিলেন যে কোন একটা কিন্তুু আছে, সেটাই সত্যি হলো। জাতির সাথে এই প্রতারনার অর্থ কি? গোটা দেশের মানুষ আজ ২০ টাকার পেঁয়াজ ৩০০ টাকায় ক্রয় করছে এটা কি কোন ধরনের স্বাভাবিক? এটা জাতির সাথে কোন ধরনের মসকরা বা রসিকতা? একজন সরকার প্রধান কতটা জাতির কাছে অসহায় হলে বলতে বাধ্য হন যে পেঁয়াজ কম খান কিমবা না খেলেই বা কি।
কারন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও বোধকরি দেশবাসীর মতোই মনে করেছিলেন সত্যিই বোধ হয় দেশে পেঁয়াজের ঘাটতি! কিন্তুু বাস্তবে কি তাই? না তা নয়, তা যদি হতো তাহলে এখন টন কে টন বস্তা পচা পেঁয়াজ কোথা থেকে আসছে? যখন দেশে মানুষ সামান্য পেঁয়াজের অভাবে একটু রান্না করতে পারছে না তখন এতো এতো পঁচা পেঁয়াজ কোথা থেকে আসছে? কোন গোডাউনে ছিলো এই পেঁয়াজ? কারা পেঁয়াজের ব্যাবসা করে? কি কারনে এই জাতিকে জিম্মী করে পচিয়ে ফেলা অথচ বাজারে না ছাড়া? এটা কি সত্যিই বেশি লাভের আশায়? নাকি অন্য কোন উদ্দেশ্য?
যদি লাভের আশা করে তবে নৈতিকতা কোথায়? আর অন্য উদ্দেশ্য থাকলে সেটা তো তাহলে রাষ্ট্রদ্রোহিতা! জাতিকে এমন নির্লজ্জ বিপদের মধ্যে যারা ঠেলে দিতে পারে তারা সব কিছুই করতে পারে। কাজেই এদের কি আপনি মানুষ বলবেন? নাকি অন্যকিছু? আমি এদেরকে বলতে চাই “পেঁয়াজ সন্ত্রাসী”!
সারা দেশের মানুষ কে যারা জিম্মী করে নাস্তা নাবুদ -করতে পারে, দেশের সম্মান নিয়ে ছিনি -মিনি খেলতে পারে, যারা রাষ্ট্রকে অবঙ্গা করতে পারে তারা আর যাই হোক মানুষ নাম নিয়ে সমাজে পরিচয় দিতে পারেনা! তারা নিশ্চিত সন্ত্রাসী, “পেঁয়াজ সন্ত্রাসী। ”
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি অনেক সন্ত্রাসীকে ধরেছেন এবার এই খাদ্য সন্ত্রাসী, পেঁয়াজ সন্ত্রাসীদের ধরুন, দ্রুত বিচারের আওতায় এনে বিচারের মুখোমূখী করুন। গোটাদেশ বাসী আপনাকে সর্মথন করবে। এখান থেকে পিছিয়ে যাবার কোন সুযোগ নেই! সময় সময় এরা অন্ধকারে নিয়ে যায় দেশ ও জাতিকে এটা আর মানা যায় না! ওদের কে থামতেই হবে ওদেরকে থামাতেই হবে, তা নাহলে দেশের ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তে রনজিত লাল সবুজের পতাকার অবমাননা হবে। কোন দেশ প্রেমিকের শরীরে এক বিন্দু রক্ত থাকতে এটা হতে পারে না।
ব্যাবসায় লাভ থাকবে ঠিক আছে তা বলে সেই স্থানে লোভ এসে দখল করবে আর দেশ জাতি সব গোল্লায় যাবে তাকি চলতে দেওয়া যায়? না তাহতে পারেনা। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোঁনার বাংলা গড়তে চাইলে এই দুর্বৃত্তদের হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে হবে। লাল সবুজের পতাকার মান রাখতে হলে আসুন সবাই মিলে দেশকে রক্ষা করি।
এ দেশটা আমাদের মা, মাকে আমরা গলা টিপে ধরতে পারি না, মায়ের সম্মান রক্ষা করতে যা যা করা প্রয়োজন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি তাই করুন। ঘর- পর এখন দেখার সময় নয়। এবার ওদের থামতেই হবে। জয় হোক জনতার।
লেখকঃ রাজনৈতিক ভাষ্যকর ও কলাম লেখক।
gmkhasan@gmail.com