আবু হোসাইন সুমন, মোংলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি ::
সুনশান নিরবতায় সুন্দরবন যেন প্রকৃতির নিজস্ব অপরুপ সাজে সেজেছে। দীর্ঘ প্রায় দেড় মাসেরও অধিক সময় ধরে বনে দর্শনার্থীদের প্রবেশ বন্ধ থাকায় বনের উপর চাপ কমেছে। সেই সাথে বন্ধ রয়েছে বনের নদী-খালে মাছ শিকারও। তাই এখন ভিন্ন রুপ সুন্দরবন ও বনের বন্যপ্রাণীর মাঝে।
মানুষের কোলাহল ও নৌযানের শব্দ না থাকায় বনের বিভিন্ন ধরণের বন্যপ্রাণীর ঝাঁকের দেখা মিলছে। বনের নদ-নদী ও খালের পাড়গুলোতে ঘুরছে বাঘ, হরিণসহ বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী। মুলত ১লা জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত মাছের প্রজনন মৌসুম হওয়ায় সুন্দরবনে মাছ শিকার ও পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকায় পাল্টে গেছে এ বনের প্রাণ-প্রকৃতি।
বিশ্বখ্যাত ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন। সুন্দরবন দেখার আগ্রহ রয়েছে দেশ-বিদেশের সকল বয়সের মানুষের কাছেই। প্রতি বছর পর্যটন মৌসুমে সুন্দরবনে দেশ-বিদেশ থেকে ছুটে আসেন পর্যটকেরা। কিন্তু চলমান নিষেধাজ্ঞার কারণে দর্শনার্থীদের সেই ভ্রমণ সুযোগ নেই। গত ১লা জুন থেকে বন্ধ রয়েছে সুন্দরবনে পর্যটকদের ভ্রমণ। সেই সাথে বন্ধ রয়েছে মাছ শিকারও। তাই বনে নেই মানুষের পদচারণা ও পরিবেশ দূষণকারী নৌযানের বিকট শব্দ এবং চলাচল। সুনশান নিরবতায় বনের প্রকৃতিতে ভিন্ন রুপের সৃষ্টি হয়েছে। দেড় মাসের অধিক সময় ধরে বন জুড়ে নিরবতায় গাছপালা যেন হাত বাড়িয়ে ডাকছে, পাখির কলকাকলীতে মুখর সুন্দরবন। ঝাঁকে ঝাঁকে বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণীর দেখা মিলছে নানা জায়গায়। সুন্দরবনের করমজলসহ বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে এসব বন্যপ্রাণীর ঝাঁকে ঝাঁকে অবাধ বিচরণ।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল পর্যটন ও বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আজাদ কবির বলেন, নানা প্রজাতির গাছপালা, পশুপাখি ও প্রাণীর বিচরণস্থল এ সুন্দরবনে সারা বছর ধরে পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে গিয়ে দর্শনার্থীরা শুধু দেখা পান হরিণ, বানর, কচ্ছপ ও কুমিরের। বাকী সব প্রাণী মানুষের কোলাহল ও নৌযানের শব্দে বনের ভিতরের দিকেই বিচরণ করতো। কিন্তু দেড় মাসের অধিক সময় ধরে মানুষের পদচারণা ও নৌযানের শব্দ না থাকায় প্রাণীর ঝাঁক চলে আসছে বনের নদী ও খালের পাড়সহ পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে। দিনে দেখা যাচ্ছে বাঘের পায়ের ছাপও।  যদিও এমন পরিবেশই বন্যপ্রাণীর প্রজনন উপযোগী বলে জানান তিনি।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, দীর্ঘ নিরবতার কারণেই আগে যে সকল প্রাণী অহরহ দেখা যেতো না, এখন সে সকল প্রাণীর ঝাঁকে ঝাঁকে দেখা মিলছে। আর বাঘ বিশেষ করে বনের গহীনেই বিচরণ করলেও এখন তাও দেখা যাচ্ছে পর্যটন কেন্দ্রের আশেপাশেই। মূলত সুনশান নিরবতার কারণেই বনের রুপ বদলে গেছে। তিনি আরো বলেন, পুরো সুন্দরবনে বছরে প্রায় ৫ লাখ মানুষ ভ্রমণ করে থাকেন। আর তাদের পরিবহণে ব্যবহৃত হয়ে থাকে প্রায় ২৫ হাজার নৌযান। মাছের প্রজনন মৌসুম নির্বিঘ্ন করতেই জেলে ও পর্যটক প্রবেশ বন্ধ রাখায় মানুষ এবং নৌযান চলাচল না থাকায় মুলত বনের পরিবেশ পাল্টে গেছে।
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here