প্যারিস হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রে ভিসাবিহীন কর্মসূচি কঠোর হচ্ছেবাংলা প্রেস, নিউ ইয়র্ক থেকে :: ইউরোপে চরমপন্থীদের ভয়াবহ হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র মিত্রদেশগুলো থেকে আগত ভ্রমণকারীদের জন্য ভিসাবিহীন কর্মসূ্চির নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও কঠোর করবে। দেশটির কর্মকর্তারা সোমবার এ কথা জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই যুদ্ধ চলছে এমন দেশগুলো থেকে পাওয়া ভিসার আবেদনগুলো খুবই সতর্কতার সঙ্গে পরীক্ষা করে দেখছে। কিন্তু এখন থেকে মিত্রদেশের ভিসাবিহীন কর্মসূচির অধীনে ভ্রমণকারীদের আরও বেশি প্রশ্ন করা হবে।

সিরিয়ার মতো অঞ্চল থেকে ফিরে আসা বিদেশী যোদ্ধাদের আটক করতে বৃহত্তর সহযোগিতা এবং গোয়েন্দা তথ্যবিনিময়ে সহযোগী দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানাবে ওয়াশিংটন। গত মাসের রক্তক্ষয়ী প্যারিস হামলার পর ধারণা করা হচ্ছে এটি ইউরোপীয় মুসলিমদের কাজ, যাদের জঙ্গী সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সিরিয়া ও ইরাকের ঘাঁটিতে প্রশিক্ষণ দিয়ে মৌলবাদীতে পরিণত করা হয়েছে।

শরণার্থীদের ওপর আরোপ করা কঠোর নিরাপত্তা পরীক্ষা এড়িয়ে তারা ফ্রান্স বা বেলজিয়ামের নাগরিক হিসেবে ভিসা ফ্রি কর্মসূচীর অধীনে ইএসটিএর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারে। ইএসটিএ হলো ভিসা ফ্রি কর্মসূচীর অধীনে যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণকারীদের যোগ্যতা নির্ধারণের স্বয়ংক্রিয় সিস্টেম। তবে মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট (ডিএইচএস) যেসব দেশকে ‘সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল’ মনে করে সেসব দেশ আগে ভ্রমণ করলে ভ্রমণকারীকে যুক্তরাষ্ট্র সফরের আগে তা অবশ্যই জানাতে হবে।

তাদের আবেদনও তখন মার্কিন সংস্থাগুলো কঠোরভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবে। হোয়াইট হাউসের ডেপুটি ন্যাশনাল সিকিউরিটি এ্যাডভাইজার বেন রোডস ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে বলেছেন, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি দফতর প্যারিস হামলার আগেও কিছু নিয়ম কড়া করেছিল এবং এগুলোর দ্রুত বাস্তবায়ন শুরু হবে। আমরা সবসময়ই এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন যে, যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে ইউরোপের ভেতরে ও বাইরে বিদেশী যোদ্ধাদের তাৎপর্যপূর্ণভাবে ব্যাপক প্রবাহ রয়েছে।

এ বিষয়ে আমরা কিছু সুবিধা পেয়েছি ভৌগোলিকভাবে। আর কিছু সুবিধা পেয়েছি আমাদের জনগণের কাছ থেকে, যাদের আইএসে যোগ দিতে সিরিয়া যাওয়ার একই আগ্রহ দেখা যায়নি। মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, ভিসা ফ্রি ভ্রমণের সুবিধা পাওয়া দেশগুলোর নাগরিকদের বায়োমেট্রিক ডাটা সংগ্রহ করতে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ করবে যুক্তরাষ্ট্র। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি জেহ জনসন বৃহত্তর পরিসরে বিমানযাত্রীদের প্রাক-স্ক্রিনিং এবং বিমানবন্দরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোর করতে কংগ্রেসের কাছে তহবিলের অনুমোদন দ্রুত দিতে অনুরোধ জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, এর অর্থ হলোÑ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি ফ্লাইট আছে এমন দেশগুলোর বিমানবন্দরে আমাদের কাস্টসম কর্মকর্তা মোতায়েন করা হবে। ইতোমধ্যেই ১৫টি বিদেশী বিমানবন্দর এই অনুমতি দিয়েছে। হোয়াইট হাউস বলেছে, অতিরিক্ত কিছু ক্ষমতা দিতে ডিএইচএস কংগ্রেসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। এগুলো হলোÑ পাসপোর্টেও তথ্য যাচাই এবং যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা সংবলিত পাসপোর্ট সকল ভ্রমণকারীর ব্যবহারের বিষয়টি নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট বিমানের জরিমানা বৃদ্ধি করা।

হোয়াইট হাউস মুখপাত্র জস আর্নেস্ট গোয়েন্দা ও স্ক্রিনিং কর্মসূচী আরও সম্প্রসারিত ও শক্তিশালী করার জন্য তহবিল দ্রুত পাস করতে কংগ্রেসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, যে পদক্ষেপগুলো আমরা নিতে যাচ্ছি, তা তথ্যবিনিময়কে উন্নতি করবে। যা অবশ্যই একজন ব্যক্তিকে আরও সতর্কভাবে পরীক্ষা করার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হবে। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা ফ্রি কর্মসূচীতে ২৮টি দেশ সুবিধা পায়।

এদের বেশির ভাগই মার্কিন মিত্র দেশ এবং অপেক্ষাকৃত স্থিতিশীল উন্নত গণতান্ত্রিক দেশ। তিনি প্যারিসে সাংবাদিকদের বলেন, যেসব পরিবর্তন আনা হয়েছে, এর ফলে চুরি হওয়া বা হারিয়ে যাওয়া পাসপোর্টে সন্ত্রাসীদের যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ সম্ভব হবে না।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here