বরিশালের উজিরপুর উপজেলার জল্লা ইউনিয়নের কুড়ালিয়া বাজারের ব্যবসায়ী ও কলেজ ছাত্র স্বপন সমাদ্দার হত্যাকান্ডের ঘটনায় নিহতের ভাই তপন সমদ্দার ও পুলিশ বাদি হয়ে পাল্টাপাল্টি দুটি মামলা দায়ের করেছে। পুলিশের দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার আতংকে ভূগছেন কুড়ালিয়া গ্রামের নিরিহ গ্রামবাসী। এদিকে ওই এলাকায় শোক র‌্যালী ও দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন স্থানীয়রা। তারা পুলিশের দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারসহ স্বপন হত্যাকান্ডের ঘটনায় জড়িত অন্যান্যদের গ্রেফতার পূর্বক ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।

সরেজমিনে জল্লা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান উর্মিলা বাড়ৈ জানান, কলেজ ছাত্র ও ব্যবসায়ী স্বপন সমাদ্দারের হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দেয়া না হলে এবং নিরীহ গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে পুলিশের দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করা না হলে তারা কঠোর আন্দোলনের ঘোষনা করবেন। তিনি আরো জানান, ইতোমধ্যে গ্রামবাসী সাতদিনের শোক ও তিনদিন কুড়ালিয়া বাজারের দোকানপাট বন্ধ রাখার কর্মসূচী ঘোষনা করেছেন। কর্মসূচীর প্রথম দিন দোকানপাট বন্ধ রেখে কালো পতাকা উত্তোলন করে শোক কর্মসূচী, শোক র‌্যালী ও দুপুরে হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। ইউপি চেয়ারম্যান আরো জানান, মঙ্গলবার রাত ১০ টার দিকে নিহত স্বপনের ময়নাতদন্ত শেষে বরিশাল মর্গ থেকে নিহতের ছোট ভাই রিপন সমাদ্দার লাশ গ্রহন করে। ওইদিন রাত সাড়ে এগারোটার দিকে নিহতের লাশ কুড়ালিয়া গ্রামে নিয়ে আসার পর হাজার-হাজার গ্রামবাসীদের আর্তনাতে ওই এলাকার আকাশ-বাতাস ভাড়ি হয়ে ওঠে। পরে ওই রাতেই স্বপনের মরদেহ বাক্স বন্দি করে পৈত্রিক বাড়িতে সামাহিত করা হয়।

নিহত স্বপনের ভাই তপন সমাদ্দার জানান, গ্রেফতারকৃত অমল মন্ডল ও নিহত স্বপন সমদ্দারের সাথে দীর্ঘদিন থেকে ব্যবসায়ীক দ্বন্দ চলে আসছিলো। এ কারনেই অমল ও তার সহযোগীরা স্বপনকে খুন করতে পারে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি আরো জানান, ২০১১-২০১২ সনের ইরি-বোরো মৌসুমে সরকারিভাবে সার ও কীটনাশক বিক্রির জন্য স্বপন সমদ্দার ডিলারশীপ পেতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে আবেদন করেছিলো। কিন্তু গত বছরের ডিলারশীপ পাওয়া প্রভাবশালী অমল মন্ডল তাকে (স্বপনকে) ডিলারশীপ না নেয়ার জন্য বাঁধা দেয়। বাঁধা উপেক্ষা করে স্বপন আবেদন করার পর থেকেই অজ্ঞাতনামা মোবাইল ফোন থেকে তাকে (স্বপনকে) বিভিন্ন সময় হুমকি দেয়া হতো। এমনকি তার কছে বিভিন্ন সময় ১ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে অজ্ঞানামা সন্ত্রাসীরা। ঘটনারদিন (২৬ ডিসেম্বর) রাতে ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা নিয়ে স্বপন দোকানে ঘুমিয়েছিল। ওই টাকা ছিনিয়ে নেয়ার লক্ষ্যেই স্বপনকে ভোররাতে অমল মন্ডল ডেকে তুলে পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে মেরে ক্যাম্পের অদূরে ফেলে রেখে যেতে পারে বলেও তপন উল্লেখ করেন।

উজিরপুর থানা পুলিশ মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) দুপুরে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে অমল মন্ডলকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃতকে গতকাল বুধবার দুপুরে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে প্রেরন করা হয়। কলেজ ছাত্র ও ব্যবসায়ী স্বপন সমদ্দার নিহতের ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে স্বপনের ছোট ভাই তপন সমাদ্দার বাদি হয়ে কুড়লিয়া বাজারের সার-কীটনাশক ব্যবসায়ী ও দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী গ্রেফতারকৃত অমল চন্দ্র মন্ডল ও তার শ্যালক দুলাল রায়ের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ৩/৪ জনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। অপরদিকে কুড়ালিয়া পুলিশ ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে চার পুলিশ সদস্যকে আহত করার ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে পুলিশ ক্যাম্পের প্রত্যাহারকৃত সুবেদার দেলোয়ার হোসেন বাদি হয়ে ৪’শ নিরীহ গ্রামবাসীকে অভিযুক্ত করে উজিরপুর থানায় মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশের দায়ের করা মামলার খবর ওই এলাকায় ছড়িয়ে পরলে গ্রামবাসীদের মধ্যে গ্রেফতার আতংক দেখা দিয়েছে।

উজিরপুর থানার অফিসার ইনর্চাজ ওসি সুকুমার রায়ের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, স্বপন হত্যাকান্ডের প্রকৃত আসামিদের কেহই আইনের চোখ ফাকি দিয়ে রেহাই পাবেনা। গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় যাতে কেহ পুলিশের হয়রানীর শিকার না হয় সে ব্যাপারে আইনগত দিক বিবেচনা করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, পুলিশ দ্বারা কোন নিরীহ লোক হয়রানীর স্বীকার হবে না। তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনে মামলা প্রত্যাহার করে নেয়া হবে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ২০০৪ সনের ২৩ মে জল্লা ইউনিয়নের সাবেক জনপ্রিয় চেয়ারম্যান অবনি ভূষণ বাড়ৈকে কুড়ালিয়া গ্রামের তার (অবনির) বাড়ির সম্মুখে বসে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে সর্বহারা কামরুল গ্রুপের আঞ্চলিক নেতা ও সমপ্রতি র‌্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত জাফর মোল্লার নেতৃতে অন্যান্য সন্ত্রাসীরা। ওই হত্যাকান্ডের সাথে স্বপন সমদ্দার হত্যা মামলায় গ্রেফতারকৃত অমল মন্ডল জড়িত ছিলো। অবনি ভূষণ বাড়ৈ হত্যাকান্ডের পর অস্থায়ীভাবে কুড়ালিয়া বাজারে পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। সেই থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে স্থানীয় সন্ত্রাসীদের আধিপত্য অনেকাংশে কমে যায়। এতে করে পুলিশ ক্যাম্পটি উচ্ছেদের জন্য স্থানীয় সন্ত্রাসীরা দীর্ঘদিন থেকে নানামুখী ষড়যন্ত্র করে আসছে। তারই ধারবাহিকতায় হত্যাকারীরা নিজেদের আড়াল করার জন্য কলেজ ছাত্র স্বপন সমদ্দার হত্যার ঘটনাটি পুলিশের কাঁধে চাপাতে গ্রামবাসীদের ভুল বুঝিয়ে কুড়ালিয়া পুলিশ ক্যাম্পে হামলা চালিয়েছে।

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/মামুনুর রশিদ/বরিশাল

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here