জুঁই জেসমিন :: সমাজে ক’জন পুরুষ পুরুষের ভূমিকায় চলছে বলতে পারেন? তাদের নিজ নিজ ব্যক্তিত্ব ধরে রাখতে পারে কতটুকু ? কতটুকু সেবা সোহাগ বউয়ের কাছে পায় বা পাচ্ছে? এক বালিশে এক শ্বাস প্রশ্বাসের আলিঙ্গনে ক’জন স্বামী স্ত্রী এক ঘরে ঘুমায়? না আছে মহব্বত, না সেবা সোহাগ, না ভাল সম্পর্ক । নারীদের অধিকার দিতে দিতে পুরুষদের অবস্থান সম্মান কোথায় গিয়ে মচকে পড়েছে -ভাবুন তো একটু? পুরুষরা এখন স্ত্রীকে ভয় করে চলে, চলছে। সংখ্যা গরিষ্ঠ পুরুষ প্রতি নিয়ত বউয়ের কাছে নির্যাতিত যা তারা লজ্জায় মুখ ফুটে বলতে পারেনা। স্ত্রীদের ‘ ভদ্র গোলাম ‘স্বামী নামক পুরুষরা। যা আদেশ করে তাই শুনতে হয়। বউ চাকুরী জীবী বা মাস্টার্স পাশ বা মোটা অংকের যৌতূক নিয়ে এসেছে, কিংবা সুন্দরি, বউকে আলুথালু করা ছাড়া কোনো পথ নেই। বউয়ের সামনে প্রজার মতো দাঁড়ানো ছাড়া উপায় নেই। সব কাজে সব বিষয়ে জবাব দিতে হয় বউকে। কেন দেরি হলো, কোথায় ছিলো এতক্ষণ, কি করলো, কেন ঠিক সময়ে বাসা ফিরলনা? স্ত্রী নামে মহারানীকে প্রশ্নের জবাব না দেওয়া অবধি মুক্তি নেই স্বামী নামে এই প্রজাদের। রানী আছে প্রত্যেক পরিবারে, কিন্তু রাজারা রাজা হয়ে থাকতে পারে না রানীদের ভয়ংকর স্বভাবে, ঘটনার ঘূর্ণিপাকে প্রজা বা দাস হয়ে যায় পুরুষরা। এ সমাজে পুরুষদের অবস্থান কোথায়? পুরুষেরা কী পুরুষ আছে- রানীদের চাহিদা চাওয়া পাওয়া মিটাতে মিটাতে তাদের হুকুমের ব্যায়ামে প্রজা-দাসে পরিণত আজ।

কল থেকে জল এনে নিজে ভাত তুলে খাওয়া, মশারি খাটা সব ভদ্র গোলামকেই করতে হয়। চাকুরী করে মাসের বেতনের হিসাবটাও বউকে বুঝিয়ে দিতে হয়। এই হলো আজকের পুরুষদের অবস্থা। পুরুষকে ভাত তুলে খেতে হবে, বউয়ের কাপড় ধুয়ে দিতে হবে। বউয়ের হাতে থাপ্পড় খেতে হবে। এই হচ্ছে নারীদের অধিকার। নারীরা, স্বামীর প্রতি প্রেম সেবা কর্তব্য ভুলে অধিকার আদায়ে ব্যস্তন্যস্ত। নারী পুরুষ নাকি সমান, কোনো বৈষম্য নেই? পুরুষ যা করতে পারবে একজন নারীও তা করতে পারবে – নারী পুরুষ যদি সমানই হতো তাহলে সৃষ্টিকর্তা ভিন্ন অঙ্গরুপে আর ভিন্ন হরমনে সৃষ্টি করেছেন কেন? পার্থক্য আছে ব্যাপক…. যেহেতু পার্থক্য ব্যাপক অতএব নারী পুরুষ কখনওই সমান হতে পারে না। একজন পুরুষ যা বোঝা বহন করতে পারে, যে শক্তি তাদের মাঝে আছে তা কিন্তু একজন নারীর মাঝে নেই। একজন ষাট বা আশি বছরের বৃদ্ধ ইচ্ছে করলেই বিয়ে করে বাবা হতে পারে,কিন্তু পঁয়তাল্লিশ বা পঞ্চাশ বছরের নারী বিয়ে করে ইচ্ছে করলে মা হতে পারে না। তবে হ্যাঁ মেধা বুদ্ধির ক্ষেত্রে উভয়ের ক্ষমতা অসীম । যে যেমন মেধা খাটায় সে সেরূপ ফল পায়। একজন পুরুষ যা আবিষ্কার বা সৃষ্টি করতে পারে একজন নারীও তা করতে পারে। একজন নারী কখনওই পুরুষকে অবজ্ঞা করে নিজেকে বড় বলে দাবি করতে পারে না। কারণ নারীরা কিছু করুক এই সুযোগ পুরুষরাই করে দিয়েছেন। নারীদের বড় পদ পদবী বা সম্মানের ক্ষেত্রে পুরুষদের সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণা বড় ভূমিকা রাখে। নারীরা যা চাচ্ছে যা পাচ্ছে তা মূলত পুরুষদের বৃহৎ ইচ্ছে শক্তিতে। যে নারী যত খবরদারি চালায় তাদের সংসারে তত অশান্তি ! পুরুষেরা সুন্দরের পূজারী নয় তারা সেবার পূজারী। আর বেশির ভাগ নারী মূলত অর্থ সম্পদের পূজারী, যা স্বার্থ ছাড়া সেক্স করতেও নারাজ। এতে স্বামীর ক্ষেত্রেই হোক আর পর পুরুষের ক্ষেত্রেই হোক। পুরুষেরা যে এতো পরিশ্রম করে এতো আয় করে,আয় করতে করতে আর ব্যয় করতে করতে দেউলিয়া হয়ে যায়। ঋণ করে হাউলাত করে কার জন্য ? সব সংসার ও নারীদের জন্য। তাদের মন জয় ও তাদের চাহিদা পূরণের জন্য। এসব কেন করে বিনিময়ে একটুকরো সুখের প্রত্যাশায়।

নারীরাই মূলত নারীর সংসার ভাঙে। ভেবে দেখুন পুরুষদের বউ বাচ্চা থাকা সত্তেও কোনো নারী, নারী হয়ে নারীর স্বামী সংসার কেড়ে নেয়, নিচ্ছে। সমাজে অহরহ ঘটনা এমন। আজ যদি আমরা নারীরা বিবাহিত পুরুষদের প্রশ্রয় না দিই তারা বাধ্য হবে বউ সন্তানের কাছে ফিরে যেতে। তারা সময় দেবে পরিবার সন্তানকে। মা যদি ভাল না থাকে শিশু সন্তানরা কখনওই ভাল থাকতে পারেনা, পারেনা মানুষ হয়ে উঠতে,এর জন্য বাবার ভূমিকা পরিবারে অত্যন্ত জরুরী। পরকীয়া কোথা থেকে সৃষ্টি ভাবুন। একজন পুরুষ সেবা সোহাগের কাঙ্গাল। বউয়ের কাছে শুতে গেলেও বউয়ের কত কথা, এটা দাওনি, এটা করনি এটা শুননি আর এখন শুতে এসেছ? সত্যিই সাংঘাতিক। আর এই অপূর্ণ চাওয়া পূরণে পুরুষেরা অন্য নারীর সঙ্গ পেতে বেড়িয়ে পড়ে, যার এক শিরোনাম পরকীয়া। একজন স্বামীকে বশীভূত করতে দোয়া তাবিজ লাগে না আর জোর করে ধরে রাখাও যায়না কোনো পুরুষকে। এ জন্য প্রয়োজন স্বামীর প্রতি যত্নবান। সেবা সোহাগ করতে করতে তাকে অলস করে দেওয়া, যেমন বউয়ের হাতের খাবার ছাড়া বাইরে খেতেই পারবে না। বউ সকাল বেলা তার মাথায় হাত না বুলিয়ে দিলে বিছানা থেকে উঠতেই পারবেনা! বউ আদর দিয়ে দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে না দিলে সে ঘুমাতেই পারবে না। এমনটি করলে কোনো পুরুষের সাধ্য নেই অন্য কোনো রমণীর কাছে যাওয়া। বেশিরভাগ পুরুষ কাজ শেষে বাড়ি ফিরে নিজেই ডাইনিংরুমে ভাত তুলে খায়। শীতের সময় খাবারটাও নিজেই গরম করে খেতে হয়। এদিকে বউ নাক ডেকে ঘুমায় বা তার চোখ ভারতীয় চ্যানেলের পর্দায় । স্বামী ঘরে ফিরার সাথে সাথে বউ যদি আঁচলা দিয়ে কপালের ঘাম না মুছিয়ে দিলো, না জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রাখলো, না এক গ্লাস ঠাণ্ডা জল বা শরবত দিলো আর স্বামীও যদি বউয়ের চিবুক ধরে কপালে চুমু না খেলো মহব্বতটা আসবে কোথা থেকে? বউ বলে স্বামী ভালবাসে না আর স্বামী বলে বউ ভালবাসে না। ভালোবাসা কি উড়ে আসবে? ভালোবাসা আসলে কী তা জানতে হবে। ভালোবাসা তৈরি করে নিতে হয়, আর এটা নারী পুরুষ উভয়কে বুঝতে হবে একে অপরের চাওয়া পাওয়া ভাল লাগা।

অনেক পুরুষ বাড়িতে সুন্দরী বউ থাকতে কোনো এক কালো কুৎসিত মেয়েকে বিয়ে করে ফেলে। কেনো করে ? একটাই কারণ সেবা প্রেমের অভাবে। বললাম তো পুরুষেরা সুন্দরের পূজারী নয়, সেবার পূজারী। এমন কিছু বউ আছে স্বামীকে দেখিয়ে কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। স্বামী ঘরে ফিরেছে, চোখে একটু কাজল দিয়ে স্বামীর সামনে আসবে কি? তা না করে ব্যস্ত থাকে নিজের মতো। পুরুষরা ভীষণ খুশি হয় ঘরে ফিরতেই যদি বউকে খুব কাছে পায়। স্বামীর সমস্ত ক্লান্তি দূর করার দায়িত্ব স্ত্রীর। ছোটো বেলায় আমরা স্কুল থেকে ফিরলেই মাকে জড়িয়ে ধরতাম, আর মা সব কাজ ফেলে আঁচল দিয়ে ঘাম মুছে আমাদের জল খাবার দিতো। মায়ের আঁচলে কি যে শান্তি যেন নিয়ামত। তাহলে ভাবুন, একজন পুরুষ বিয়ের আগে মায়ের সেবা যত্ন কেমন পেয়েছে। আর বিয়ের পর ? বিয়ের পর আর বাবু সাহেব থাকতে পারে না, যে কিনা গায়ের কাপড়টা কোনোদিন নিজ হাতে পরিষ্কার করেনি, তাকে বউয়ের কাপড় পর্যন্ত ধুয়ে দিতে হচ্ছে। সারাক্ষণ নাচিয়ে রাখে, নাচানাচিটা যদি মহব্বতের হতো তাও হতো, চোখে চোখ রেখে কাজ করা, হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করা তৃপ্তি শান্তিই আলাদা ! কিন্তু তা না, কর্তব্য আর দায়িত্বের জায়গায় আদেশ হুকুম চলে মাত্র। শুধু হুকুমের ঝড় চলে, এটা কিনে আনবা সেটা আনবা, এই লাগবে সেই লাগবে- স্বামীর পকেটে পয়সা থাকুক আর না থাকুক! পরিবার একটা শান্তির জায়গা, এখন সেই শান্তির পরিবারে এতো অশান্তি, এতো সন্দেহ, কলহ? পুরুষদের নিকট পরিবার যেন জাহান্নামখানা। অনেক পুরুষ বাইরে সময় কাটায় স্বস্তির জন্য। কোন পুরুষ উপার্জনশীল নয় বলতে পারেন? সব পুরুষরা কর্মজীবী। কর্ম আর পারিবারিক নির্যাতনের শিকারে তাদের আয়ু শেষ হতে থাকে। স্ত্রীর চাইতে স্বামীর মৃত্যুর হার বেশি। পুরুষরা বেশিদিন বাঁচেনা। নারীরাই তাদের আয়ু শুষে খায়। একজন পুরুষ তার বাবা মা ভাই বোনকে তার সংসারে রাখলে বা দায়িত্বভার বহন করলে সংখ্যা গরিষ্ঠ বউরানীরা কষ্ট কাঠিন্যে ভুগে। শ্বশুর শাশুড়ি, ননদ, যেন বউদের বদহজম টেবলেট। সহ্য করতে পারেনা।

আজ যেই অঙ্গন বা প্রতিষ্ঠানে নারীরা যাচ্ছি, পুরুষরা কোনো না কোনো ভাবেই ইটিসপিটিস সম্পকের প্রপোজ করে থাকে। এখন প্রশ্ন এমন প্রপোজ কেন করে? এক টুকরো সুখের জন্য মাত্র। কারণ স্ত্রীকে তারা সহধর্মিণী হিসেবে পায় না। প্রেম সেবা থেকে বঞ্চিত তারা। নারীরা সেবা পরায়ণা, একজন মা’র আদরে পরশে সন্তান যেমন ভাল থাকে, সেরূপ একজন স্ত্রীর প্রেম সেবায় পুরুষেরা ভাল থাকে। স্বামী স্ত্রীর মিলন এমন একটা জিনিস যা মহব্বত থেকেই হয়ে যায় মিল থেকে মিলন। আর এখন সেক্স বা প্রেম বলতে, মুখ দিয়ে বলতে হয়। একটু কাছে আসবে ? বসবে , একটা চুমু খেতে দেবে, ধরি একটু?আকুতি মিনতি অনুমতি আদেশ তোড়জোড় আর একাধিক শর্ত ছাড়া সহবাসও হয়না। দু’জনার মধ্যে এমন এক সম্পর্ক সৃষ্টি হবে, কখন যে হাতে হাত মিলিয়ে মহা মিলন ঘটবে টেরই পাওয়া যাবেনা। একে ওপরের ইচ্ছে, বুঝা চাওয়া পাওয়া, বিপদে পাশে থাকা, সাহস দেওয়া, আর সেবার মাঝেই তো প্রেম। অধিকার চাই, অধিকার চাই বলে চিৎকার করে প্রেম হয়না, আর পাওয়াও যায় না। শিক্ষিত, চাকুরীজীবী, ও বড় ব্যবসায়ীদের ঘরে এই সমস্যা গুলো খুব বেশি। একজন কৃষকের ঘরে যতটা শান্তি বিরাজমান একজন চাকুরীজীবীর ঘরে তা কিন্তু নেই। আর যে নারী যত স্বামীর প্রতি দায়িত্বশীল, প্রেম সেবায়, সে পরিবারেই কিন্তু তত সুখ। যে পরিবারে স্বামী স্ত্রীর মহব্বত যত গভীর তাদের সন্তানও সুন্দর জীবন লাভে বেড়ে উঠে বেশ। বাবা মায়ের ভালোবাসায় একজন শিশুর -এ, থেকে জেড ভিটামিন। বাবা মায়ের সম্পর্ক ঠিক না থাকলে সন্তান অবহেলিত হয়, তারা মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারেনা। মূল কথা:- নারীরা পুরুষকে পুরুষ হিসেবে মর্যদা দিলে, আর পুরুষরা তাদের ব্যক্তিত্ব বজায় রাখলে সকল সমস্যা সমাধান নিশ্চিত,তা না হলে দিন দিন এক একটি সংসার ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে থাকবে, আর দাম্পত্য যেন জলাতঙ্ক হয়ে পুড়ে ছারখার হতে থাকবে—-এক একটি জীবন। সেবা শুশ্রূষার মাঝে যেমন প্রেম শান্তি বিরাজমান, তেমনি নারী জীবনের শ্রেষ্ঠ অলংকার স্বামী। অতএব ভাবুন, নারী পুরুষ কার দায়িত্ব কতটুকু একে ওপরের প্রতি? সুন্দর স্বপ্নিল সংসার বা জীবন গড়ার পথে কী কী করণীয় –

 

লেখক: মানবাধিকার কর্মী, juijesmin2019@gmail.com

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here