স্বপ্ন পুরনে অসহায় লালন,পাটির বুননে গাঁথা তার জীবন। তিন মাস বয়সে শারিরীক প্রতিবন্ধী শিশু লালনের (১২) পিতা মারা যায় । বিধবা মা দ্বিতীয় বিয়ে করলেও স্বামী মা-ছেলে কারও দেখভাল করে না। ফলে সংসার ও লেখাপড়ার খরচ যোগাতে নালিতাবাড়ী উপজেলার নয়াবিল ইউনিয়নের নাকুগাঁও গুচ্ছগ্রামের একটি ঘরে মায়ের সঙ্গে বসে পাটি বুনে লালন।
জানা গেছে, মাত্র তিন মাস বয়সী লালনকে রেখে তার পিতা মাইন উদ্দিন মারা যাওয়ার পর সংসারের হাল ধরতে লালনের মা রুমা বেগমকেও নামতে হয় দিনমজুরীতে। অল্প বয়সে স্বামী হারিয়ে দিনমজুরীতে নামলে এলাকার কেউ কেউ নানা মন্তব্য ছুঁড়তে শুরু করে। একপর্যায়ে ইজ্জত বাঁচাতে দ্বিতীয় বিয়ে করে আজিজ নামের এক হতদরিদ্রকে। কিন্তু স্ত্রীর ভরণ-পোষণ কোনো কিছুই দেয় না আজিজ। এদিকে রুমার পাঁচ শতক জমি থাকলেও সহোদর ভাই জোর করে লিখে নিয়ে অন্যত্র বিক্রি করে দিয়েছে । ফলে ভিটেমাটি ছাড়া হয়ে পড়ে অসহায় রুমা। কিছুদিন আগে নাকুগাঁও গুচ্ছগ্রামে ভূমিহীন হিসেবে ঠাঁই হয় তার। এখন এ গ্রামের একটি ছোট ঘরে বসে বাঁশের চাটাই আর পাস্টিকের ফিতায় রুমা পাটি বুনে শিশুপুত্র লালনকে সঙ্গে নিয়ে। জন্মের পরপরই লালনের কোমড় সরু হয়ে আসতে থাকায় বর্তমানে লালন শারিরীক প্রতিবন্ধী। ভালো করে হাঁটতেও পারে না। এরপরও অসহায় মায়ের পাশে দাঁড়াতে পাটি বুনে লালন। এতে করে যা আয় হয় তা দিয়ে কোনোমতে চলে লালনদের সংসার। পড়াশোনায় যা দু-চার টাকা ব্যয় হয় তা এখান থেকেই চালিয়ে নেয় সে। রুমা বেগম জানান,মা-ছেলে মিলে দিনে একটি পাটি বা ধারাই(চাটাই) বুনতে পারেন। বিক্রি হয় ১শ ৫০ থেকে ২শ টাকায় । এখান থেকে বাঁশ ও পাস্টিক কেনার ১শ ২০ টাকা বাদ দিলে লাভ থাকে না শুধু পরিশ্রমের দাম পাওয়া যায় মাত্র । লালন বর্তমানে চারআলী বাজার সংলগ্ন একটি বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেনীতে পড়াশুনা করছে। সে একা স্কুলে যেতে পারে না , মা তাকে এগিয়ে দিয়ে আসে । বর্তমানে লালনের হাত-পা সরু হয়ে আসছে। প্রতিদিন তাকে শরীর ব্যাথা ও মাথা ঘোরার ওষুধ ক্ষেতে হয় । কিন্তু ওষুধ কেনার টাকা পাবে কোথায় ? এ নিয়ে মা রুমা বেগম সরাক্ষন দুশ্চিতায় থাকেন। এরপরও জীবন যুদ্ধে জয়ী হতে চায় লালন। বাঁধা শুধু শারিরীক সমস্যা। কিন্তু পথরোধ করে দাঁড়িয়ে আছে আর্থিক দৈন্যতা। ফলে না হচ্ছে চিকিৎসা না হচ্ছে ভালোভাবে পড়ালেখা। আর জীবনচলা? সেতো পাটির বুননেই গাঁথা। হয়তো গাঁথা রবে সারা জীবন।
ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/শাহরিয়ার মিল্টন/শেরপুর