image_135001_0ঢাকা: ১৫ বছর বয়সের ঊর্ধ্বে সব নাগরিকের পাসপোর্টের মেয়াদ পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করা হচ্ছে। একই সঙ্গে পাসপোর্টের সাধারণ ফি ভ্যাট বাদে তিন হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে চার হাজার টাকা ও জরুরি ফি ভ্যাট বাদে ছয় হাজার টাকা থেকে   বাড়িয়ে সাত হাজার টাকা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে এসব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে পাসপোর্টের মেয়াদ বৃদ্ধি ও তুলনামূলক হ্রাসকৃত ফি প্রবর্তনে অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতামতের জন্য পাঠিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

পাশের কয়েকটি দেশের উদাহরণ বিবেচনায় নিয়ে পাসপোর্টের মেয়াদ ও ফি বাড়ানোর প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরবসহ বাংলাদেশী শ্রমিক অধ্যুষিত দেশগুলোর দূতাবাসের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে পাসপোর্টের মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে ফি বাড়ানোর বিষয়ে মতামতের জন্য মে মাসের শেষদিকে একটি চিঠি অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিবের কাছে পাঠানো হয়েছে। এখনও ওই চিঠির জবাব পাওয়া যায়নি।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাসপোর্টের মেয়াদ ও ফি বাড়ানো সংক্রান্ত প্রস্তাবটি ট্রেজারি ও ব্যবস্থাপনা বিভাগে রয়েছে। তারা অতীতে পাসপোর্টের ফি কিভাবে বেড়েছে ওই বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। এ মাসের মধ্যেই একটি চিঠির মাধ্যমে তাদের মতামত জানিয়ে দেবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সাল থেকেই মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের (এমআরপি) ফি বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে। ওই সময় বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের ইন্ট্রোডিউসিং অব মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট অ্যান্ড মেশিন রিডেবল ভিসা ইন বাংলাদেশ’ প্রকল্প থেকে ফি বাড়ানোর একটি প্রস্তাব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। ওই প্রস্তাবে প্রথম অবস্থায় রি-ইস্যু (পুনরায় জারিকৃত) পাসপোর্টের ফি বাড়ানোর কথা বলা হয়। এরপর ধাপে ধাপে সাধারণ ও জরুরি এমআরপি’র ফি বাড়ানোর কথা বলা হয়। এনিয়ে কয়েকটি বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়। তবে প্রস্তাব চালাচালির তিন বছর পর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ উপসাগরীয় দেশগুলোতে বাংলাদেশী কর্মীদের চাকরির ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য অবিলম্বে বাংলাদেশের পাসপোর্টের মেয়াদ ১০ বছর করার সুপারিশ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে একটি আধা সরকারি পত্র (ডিও লেটার) দিয়েছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান।

ডিও লেটারে তিনি বলেছেন, প্রবাসে অবস্থানরত ও বিদেশে গমনেচ্ছু সব বাংলাদেশী নাগরিকের আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থার বিধান অনুযায়ী এ বছরের ২৪ নভেম্বরের মধ্যে যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্ট দেয়ার কার্যক্রম চলছে। বর্তমানে ইস্যুকৃত এসব এমআরপি বুকলেট-এর মেয়াদ পাঁচ বছর। আগে হাতে লেখা পাসপোর্ট বিদেশস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে পাঁচ বছর মেয়াদ শেষে আরও পাঁচ বছরের জন্য নবায়নের সুযোগ ছিল। কিন্তু বর্তমানে এমআরপি বুকলেট শুধুমাত্র ঢাকাস্থ সদর দপ্তর থেকে ছাপা হয় এবং পাসপোর্ট ও বহিরাগমন অধিদপ্তর থেকে এমআরপি বুকলেট তৈরি হয়ে কূটনৈতিক ব্যাগযোগে দূতাবাসে আসতে কমপক্ষে ছয় থেকে আট সপ্তাহ সময় লাগে।

এমআরপি বুকলেটটি অ্যাকটিভ করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা সই বা সিল দিয়ে বিতরণের জন্য প্রস্তুত করতে আরও ৮/১০ দিন সময়ের প্রয়োজন হয়। অন্যদিকে যে কোন দেশে ভিসা প্রদান/নবায়নের জন্য পাসপোর্টের মেয়াদ কমপক্ষে ছয় মাস থাকতে হয়। তাই পাসপোর্টটি সাড়ে চার বছরের আগেই নবায়নের প্রয়োজন হয়। ঢাকাস্থ সদর দপ্তর থেকে ছাপা হয়ে আসায় সময় ও অন্যান্য বিষয়াদি বিবেচনায় নিলে প্রকৃতপক্ষে একটি বাংলাদেশী পাসপোর্টের কার্যকরী মেয়াদ কমবেশি চার বছর বলে গণ্য করা যায়।

ডিও লেটারে বলা হয়েছে, বর্তমানে প্রায় ৮/৯ লাখ বাংলাদেশী নাগরিক সংযুক্ত আরব আমিরাতে কর্মরত আছেন। গত প্রায় আড়াই বছর ধরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা বন্ধ রয়েছে। ভিসা নবায়ন চালু থাকলেও কর্মী/পেশাজীবীদেরকে তাদের চাকরি নবায়নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিদেশী কর্মীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হয়। দীর্ঘমেয়াদি ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশী পাসপোর্টের এই সীমিত মেয়াদ একটি অন্তরায় এবং এতে অনেক পেশাজীবী ও শ্রমজীবী কর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। পাসপোর্টের মেয়াদ কম থাকায় অনেকেই চাকরি ক্ষেত্রে অন্য দেশের কর্মীদের থেকে পিছিয়ে পড়ছেন। এসব বিষয় দূতাবাসের নজরে এনে প্রবাসী বাংলাদেশীরা দীর্ঘমেয়াদি চাকরি বা কর্মী ভিসা নবায়নের ক্ষেত্রে অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।

অনেকে চাকরির ধারাবাহিকতা না থাকার ও চাকরিচ্যুতির আশঙ্কা প্রকাশ করে অবিলম্বে বাংলাদেশী পাসপোর্টের মেয়াদ কমপক্ষে দশ বছর করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছেন। ডিও লেটারের সর্বশেষ প্যারায় বলা হয়েছে, দূতাবাস খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছে বর্তমানে প্রতিবেশী উপমহাদেশীয় রাষ্ট্রগুলোর অধিকাংশ দেশের পাসপোর্টের মেয়াদ কমপক্ষে ১০ বছর। এমন অবস্থায় সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ উপসাগরীয় দেশগুলোতে বাংলাদেশী কর্মীদের চাকরির ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে বাংলাদেশের পাসপোর্টের মেয়াদ ১০ বছর করার বিষয়টি বিবেচনার জন্য অনুরোধ করছি।

এর আগে আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে ১৯০টি দেশের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি অনুসারে ২০১১ সালের ১লা এপ্রিল থেকে সব দেশকে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের মাধ্যমে পাঠযোগ্য পাসপোর্ট ও ভিসার প্রচলন করার সিদ্ধান্ত হয়। সেই চুক্তির শর্তানুসারে বাংলাদেশে ২০১০ সালের ১ এপ্রিল থেকে এমআরপি পাসপোর্ট চালু হয়। এ প্রকল্পের আওতায় তিন বছরে ৬৬ লাখ পাসপোর্ট ও ১৫ লাখ ভিসা স্টিকার দেয়া হয়েছে। এখন আরও দ্রুতগতিতে এমআরপি দেয়া হচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here