পার্বত্যবাসী চায় আরও নতুন ৩ জেলাএনামুল হক কাশেমী, বান্দরবান প্রতিনিধি:: বান্দরবানের সাবেক মহকুমা সদর এবং বতর্মান লামা উপজেলাকে দুভাগ করে সরই নামক একটি নতুন উপজেলা গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় ‘অখন্ডতা রক্ষা পরিষদের’ উদ্যোগে আগামী ২৭ ডিসেম্বর অর্র্ধদিবস এবং ২৮ ডিসেম্বর পুরোদিন হরতালের ডাক দিয়েছে।

গত ২৪ ডিসেম্বর একই পরিষদ এ দাবিতে লামা উপজেলা সদরে এক মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। পরে দাবি সংবলিত একটি স্মারকপিলি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রদান করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কাছে।

অন্যদিকে কেবল লামাকে দুভাগ করে নতুন উপজেলা সৃষ্টি নয়, তিন জেলায় আরও ৩টি নতুন জেলা ঘোষণার উদ্যোগ গ্রহণের জন্যে বিভিন্ন মহল থেকে দাবি-নামা ক্রমেই জোরদার হচ্ছে।

জানাগেছে, সরককারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত মতে চলমান গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন কার্যক্রমকে তুণমুল পর্যায়ে আরও বেগবান করার মহান লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নিয়ে সাবেক মহকুমা সদর লামাকে দুভাগ করে সরই ইউনিয়ন সদরে নতুন একটি উপজেলা গঠনের কাজ শুরু করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে লামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খিনওয়ান নু’র নেতৃত্বে যখন সরইয়ে মতবিনিময় সভার আহবান করা হয়, ঠিক সেই সময় থেকেই বিরোধীরা সরইকে নতুন উপজেলা না করার পক্ষে জোরালো আন্দোলন শুরু করে দিয়েছেন।

অপরদিকে আজিজনগর ইউপি চেয়ারম্যান ও সরকারি দলের উপজেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতা মো.জসিম উদ্দিন নানামুখি যৌক্তি দেখিয়ে সরইতে নয়, আজিজনগরেই নতুন উপজেলা সদর স্থাপন করে আজিজনগর উপজেলা সৃষ্টির জন্যে জনমত গড়ে তোলার চেষ্টায় নেমেছন মাঠে-ঘাটে।

স্থানীয়রা বলছেন, যেহেতু লামা একটি সাবেক মহকুমা সদর এবং এ উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদের সসংখ্যা ৭-এ দাড়িয়েছে, সেহেতু বিশাল অঞ্চল হওয়ায় লামাকে দুভাগ করে একটি নতুন উপজেলা গঠন আবশ্যক। সেকারণেই আজিজনগর, গজালিয়া, ফাইতং ও সরই ইউনিয়ন সমন্বয়ে সরই বা আজিজনগর নামে একটি নতুন উপজেলা গঠনে সরকারের উচ্চ মহল নীতিগতভাবে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ বলছেন, লামা সাবেক মহকুমা সদর হওয়ার সুবাদে লামাকে অবিলম্বে জেলায় উন্নীত করা হোক। সারাদেশে যখন মহকুমাগুলো জেলায় রুপান্তর হচ্ছিল, তখন থেকেই লামাকে জেলায় উন্নীতকরণের জোরালো দাবি উঠেছিল। লামাকে জেলা ঘোষণা ও তার বাস্তবায়ন দাবিতে ‘লামা জেলা বাস্তবায়ন’ নামে একটি শক্তিশালী কমিটিও গঠন করা হয়েছিল সেই সময়। বিগত কয়েকবছর ধরেই লামা জেলা প্রশাসক, লামা পুলিশ সুপার এবং লামা তথ্য কর্মকর্তার নামে সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে নিয়মিত দাপ্তরিক চিঠিপত্রও ইস্যুকরা হতো।

কিন্তু সেই সময় সরকারি সিদ্ধান্তের কারণ এবং তিন পার্বত্য জেলার শাসনবিধি ভিন্নতর হওয়ায় সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পৃথক ৩টি আইনে বান্দরবান রাংগামাটি এবং খাগড়াছড়ি জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ গঠিত হয় সরাসরি গণভোটের মাধ্যমে। সেইসব পরিষদ নাম পরিবর্তিত হয়ে এখনও বহাল। ফলে বান্দরবানের লামা, রাংগামাটির কাপ্তাই এবং খাঘড়াছড়ির রামগড় মহকুমাকে জেলায় রুপান্তর করা যায়নি। একই সময়ে মানুষের আন্দোলনেরমুখে চট্টগ্রামের সাবেক পটিয়া মহকুমাও বাদ পড়ে জেলায় রুপান্তর হওয়া থেকে।

পাহাড়ের বিভিন্ন পেশা-শ্রেণীর মানুষের গণদাবি- লামা, রামগড় এবং কাপ্তাইকে অবিলম্বে জেলা ঘোষণা করতে হবে। প্রশাসন বিকেন্দ্রিকরণের স্বার্থে প্রয়োজনে এ তিনটি বৃহত্তম উপজেলায় (সাবেক মহকুমা সদর) একটি করে নতুন উপজেলা সৃষ্টি করা যেতে পারে। পাহাড়ে জনসংখ্যা ও শিক্ষার হার ক্রমেই বৃদ্ধি এবং আর্থসামাজিক অবস্থার ক্রমবিকাশমান উন্নতি ও রাস্তাঘাটসহ সকলস্তরে সাফল্যজনক উন্নয়ন নিশ্চিতের কারণে দ্রুত সময়ের মধ্যেই পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান, রাংগামাটি এবং খাগড়াছড়ি জেলাকে পৃথকভাবে দুভাগ করে নতুন আরও ৩টি জেলা গঠন করা অতিব প্রয়োজন বলেও সাজ নেতারা বলছেন। এসব বিষয় নিয়ে আগামী জানুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে অনুষ্ঠেয় মহান জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রস্তাবনাসহ আলোচনা করা যেতে পারে বলেও সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বলছেন।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here