কলিট তালুকদার, পাবনা প্রতিনিধি :: ১৮ ডিসেম্বর পাবনা মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাক-হানাদার মুক্ত হয় পাবনা সদর উপজেলা।
জানা যায়, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের মানুষ যখন বিজয়ের উল্লাসে মেতে উঠেছে তখনও পাবনা শহরে চলছে পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের তুমুল যুদ্ধ। ১৮ ডিসেম্বর পাবনা হানাদার মুক্ত হওয়ার আগে ১৪ ডিসেম্বর দুপুর থেকে পাক-বাহিনীর সঙ্গে মুক্তি বাহিনীর শুরু হয় তুমুল যুদ্ধ।
১৪ ডিসেম্বর দুপুর ২টা থেকে মিত্র বাহিনী পাবনা শহরে মটার সেল ও বিমান হামলা চালাতে থাকে। ১৬ ডিসেম্বর মুক্তি বাহিনী চর্তুদিক থেকে পাবনা শহর ঘিরে ফেলে আক্রমন চালায় পাক-হানাদার বাহিনীর উপর। উভয পক্ষের মধ্যে শুরু হয় যুদ্ধ। ১৮ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনীর চতুর্মুখী আক্রমনে পাক সেনারা কোনঠাসা হযে পড়ে এবং পাবনা ছেড়ে দলে দলে পালিযে যায়।
এ সংবাদে নারী, শিশু, বৃদ্ধসহ সর্বস্তরের মানুষ ঘর ছেড়ে বাড়ির বাইরে এসে উল্লাসে ফেটে পড়ে। মুক্তিযোদ্ধারা ফাকা গুলি ছুড়ে আনন্দের বাহিঃপ্রকাশ ঘটনায়। মুলতঃ এ দিনই পাবনার মানুষ প্রকৃত স্বাধীনতার স্বাদ উপলব্ধি করে। মুক্তিযোদ্ধারা শহরে এসে সমবেত হতে থাকে।
পরে পাবনা কালেক্টরেট ভবনে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে তৎকালীন জাতীয় পরিষদ সদস্য মরহুম আমজাদ হোসেন পাবনা জেলাকে হানাদার মুক্তঘোষনা করেন। সে সময় উপস্থিত ছিলেন, বৃহত্তর পাবনার তৎকালীন মুক্তিবাহিনী প্রধান জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মরহুম রফিকুল ইসলাম বকুল, জাতীয় পরিষদের সদস্য মরহুম আব্দুর রব বগা মিয়া, এডভোকেট আমিন উদ্দিন, অধ্যাপক আবু সাঈদ, মুজিব নগর সরকারের সাবেক সংস্থাপন সচিব মরহুম নুরুল কাদের খানসহ হাজার হাজার মুক্তিকামী মানুষ।
দীর্ঘ ৯ মাসের স্বাধীনতা যুদ্ধে পাবনায় প্রায় ৫ হাজার মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষ শহীদ হন। এদের মধ্যে তালিকাভুক্ত শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ৩৬১ জন। পাক বাহিনীর নির্মমতার সাক্ষি হিসেবে পাবনায় এ পর্যন্ত ১২টি গণ কবর আবিস্কৃত হয়েছে।
এই গণ কবরগুলোর মধ্যে রয়েছে, জেলার সাঁথিয়া উপজেলার শহীদনগর ডাববাগান, করমজা, ধুলাউরি, পাবনা সদর উপজেলার কুচিয়ামোড়া, নাজিরপুর, সুজানগরের সাতবাড়িয়া উল্লেখ্যযোগ্য। জেলার শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরনে ১৯৯৮ সালে ততকালীন জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দুর্জয় পাবনা নামে একটি স্মৃতি সৌধ নির্মাণ করা হয়।