মীর আব্দুল আলীম :: পাপিয়ারা এত পাপ করে কি করে? অন্তরালে কেউ আছেন নিশ্চয়!পাপ করে একেবারে প্রমোশন! জেলার সরকারদলের নেত্রী। যুব মহিলালীগের সাধারন সম্পাদক। তার পর হাই প্রফাইলে বিচরণ। অপরাধ সম্রাজ্ঞী।যুবমহীলালীগের জেলা সাধারন সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় সভানেত্রী হওয়া কিন্তু চারটে খানি কথা নয়। দেশের অনেক পুরনো দল আওয়ামীলীগ। বঙ্গবন্ধু যার প্রতিষ্ঠাতা। আবার সরকারদল। এ দলে এমন নোংিড়া মহিলা ঢুকলো কি করে? কার হাত ধওে, কার ইশারায় পাপিয়ার দলে প্রবেশ। পাপিয়া কোনা ধনির দুলালী নন। ড্রাইভার কন্য থেকে আজকের পাপিয়া। তার যোগ্যতা কি তাহলে সুন্দও দেহ! এভাবে সংগঠন চলে না, আওয়ামীলীগের মতো পরিপক্ক দলতো নয়ই। আর এভাবে চলতে দেয়া উচিতও নয়।
দেশের গেয়েন্দারা করে কি? গনমাধ্যমরকিন্তু এ দ্বায় এড়াতে পারে না। র্যাব সোচ্চার হওয়ার পরেই সাংবাদিকরা তার বিরুদ্ধে কলম ধরলেন।ধরতে ভয় ছিলো হয়তো। পরিস্থিতিটাতো এমনই।ডাকসাইটের কেউ যদি চটে যান! শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও গণমাধ্যমকে এ দ্বায় নিতেই হবে।পাপিয়া দু’দিন ধরেই কিন্তু এসব অপকর্ম করছে না? তার অপকর্মের ফিরিস্তি দেখে বুঝা যায় অপরাধে পেঁকে পাঁকা হয়েছে পাপিয়া। ওর পাপের বোঝা কে বহন করবে? আওয়ামীলীগ? বোঝা ঘাড়ে না নিলেও দুর্নামের বোঝা কিন্তু দলটিকে নিতেই হচ্ছে। গণমাধ্যমসহ ফেসবুক, ইউটিউবে নানা জনে না কথা বলছে। নেত্রীর অপকর্ম বলে কথা। মানুষের মুখ কিভাবে থামাবেন? নোংড়া ভাবে নেতাদের জড়িয়েও কথা বলছেন অনেকে। এটা আবার ঠিক না। ভিআইপি, নেতা-নেত্রী, মন্ত্রী-আমলাদের সাথে ছবি থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কোন অনুষ্ঠানে ভিআইপদের সাথে ছবি তোলার হিড়িক পড়ে। কে কোথায় ছবি তুলল সেলিব্রেটিদের তা খেয়াল করারর কি সময় আছে?জেলার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বর্তমান সরকারের রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রীসহ গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সাথে তার ছবি থাকাই স্বাভাবিক। তবে বিশেষ কোনো ছবি আছে কিনা সেটাও আগে বের করা দরকার।
প্রশ্ন একটাই এসব নারিকে নেত্রী কে বা কারা বানালো? প্রশাসন, গোয়েন্দাদেও চোখ কি অন্ধছিলো এ যাবৎ। সাংবাদিকদেও অনুসন্ধানী দৃষ্টিইবা কোথায় ছিলো এতোদিন? র্যাব তাকে ধরে তার পাপের সব ফিরিস্তি দিলো আর দেশ সুদ্ধ উদ্ধার হলো। হৈচৈ হলো, হচ্ছে, ক’দিন হবেও। পাপিয়া কাদের লাইসেন্সে এত নোংরা পথে গেলো?ডাকসাইটের কারো নিন্দন আছে নিশ্চয়। তার সাথে আর কোন রথি মহারথি আছে? তা জরুরী তদন্ত করে দেখা দরকার।
এটা সত্য যে, পাপিয়া নিশ্চই দেহ ব্যবসায়ী পরিচয়ে যুবমহিলা লীগের নরসিংদী জেলার সাধারণ সম্পাদক হননি। আবার, জেনে বুঝে শুনেও কিন্তু একজন দেহ ব্যবসায়ী সর্দারকে যুবমহিলা লীগের নেত্রী বানাননি। তাছাড়া পাপিয়া সামনের দিন গুলোর সকল অপকর্ম মহিলা যুবলীগ সমর্থন করবে এটা জেনে বুঝে দল কিন্তু নেত্রী বানায়নি। কাজেই পাপিয়ার ব্যবসা সম্পর্কিত অপকর্মের দায় পাপিয়ার নিজের ব্যক্তিগত, মহিলা যুবলীগ এই দায় বহন করবে না এটাই স্বাভাবিক। পাপিয়া কিন্তু যে কেউ নন। রাজধানীর পাশের নরসিংদি জেলার মহিলা দলের অঙ্গসংগঠনের জেলার সাধারণ সম্পাদক। আগেও জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনিতো যে কোথাও যেতে পাারেন। ছবি তুলতে পারেন। ছবি তুলে পাপমোচনের চেষ্টা করেন তিনি। হাইপ্রোফাইলের লোকদের সাথে ছবি তুললে অনেক ফায়দা আছে পাপিয়া তা বোঝে। তাই সেজেগঁজে ছবি তুলে নিজেকে ডাকসাইটের বানানোর চেষ্টা। আর সে চেষ্টায় তিনি সফলও। ছবিতোলার জন্য তাঁর ছিলো বিশাল সুযোগ। একেতো নারী নেত্রী, আবার সুন্দরী এবং দাপুটে। যেখানেই গেছেন সেখানেই আগে স্থান পাপিয়ার। জেলার নেত্রী হিসাবে তারতো বঙ্গভবনের সংবর্ধনায় নিমন্ত্রণ থাকবারই কথা। গণভবনেও এক্সেস আছে নেত্রী হিসেবে।
সবাই চায় সেলিব্রেটি মানুষটার সাথে ক’টা ছবি। তাঁর ছবি যে বানিজ্যিকভাবে তোলা তা কিন্তু সেলিক্রিটির জানবার কথা নয়? মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছাকাছি যেতে কি অবস্থা হয় তা সাধারণ কর্মী মাত্রই জানেন। তবু কথা থাকে এর আড়ালে নোংড়ামিতে আবার কেউ নেইতো? থাকলে বের করা দরকার। পাপিয়া নাকি মুখ খুলেছে। পাপিয়ার পাপের রাজ্যে কারা ছিলো তা বের করা দরকার।তাঁদের এহন অপরাধের কারনে আওয়ামীলেিগর ভাবমূর্তি দারুণভাবে ক্ষুন্ন হচ্ছে। এটাও সত্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জানতে পারলে দলের ভেতওে থাকা অপরাধীদেরও ছাড় দিচ্ছেন না তিনি।
আওয়ামী লীগের দীর্ঘসময় ক্ষমতায় অনেক দলছুট, বহিরাগত, ছিটার, বাটপারেরা টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে পদ-পদবি বাগিয়ে নিচ্ছে বা নিয়েছে। অপরাধ বিবেচনায় যারা এইসব প্রশ্রয় দিচ্ছে তারা কোনোভাবে দায় এড়িয়ে যেতে পারে না। পাপিয়ারা মূলত ওইসব বহিরাগত যারা নানানভাবে পদ নিয়ে দলে এসেছে ব্যবসা করতে, ফায়দা লুটে নিতে। খোঁজ নিয়ে দেখলে জানা যাবে যে, পাপিয়াকে যুব মহিলা লীগের দায়িত্ত্ব দেওয়ার ব্যাপারে আওয়ামী লীগের কোনো না কোনো নেতা বা এমপি জড়িত। তারা নিজেরাই আরেকটা পাপিয়া টাইপের চরিত্রহীন দেহ ব্যবসায়ী বা দেহ বিক্রেতা বা দেহ ক্রেতা নয় তো? আসলে পাপিয়াকে নিয়ে কথাতো অনেকই বলা যাবে। তাকে নিয়ে কথা চলবেও বেশ কিছুদিন ধরে।
সম্রাট কিংবা পাপিয়া এরা এক পথেরই পথিক। অপরাধ রাজ্যের রাজ-রাণী।ওরা অপরাধ করবে। আলোচনায় আসবে। আবার পাড়ও পেয়ে যাবে হয়তো। পাপিয়াদেও যারা পাপের পথে সহযোগিতা করে তাদের কিন্তু কখনই কিছু হয় না। ওরাতো গডফাদার! ওদের অপরাধের পেছনে যারা তারা আড়ালো থাকে সব সময়, এটাই হয়তো নিয়ম। ওয়েস্টিন ছোটখাট প্রতিষ্ঠান নয়। ফাইফ ষ্টার মানের হোটেল। এখানে সব কিছু নিয়মে চলে।
কাগজপত্র নিরাপত্রা ব্যবস্থা সব আছে এখানে। পাপিয়া কি করতো ওয়েষ্টিনসহ রাজধানীর নামীদামী হোটেলে? এমন এক সুন্দরী নারী দিনের পর দিন হোটেলের স্যুট ভাড়া নিচ্ছে। পুরো বার বুকিং কওে নিচ্ছে কোনটাই কারো চোখে পড়লো না? আসল কথা হলে নগদি পেলে সবাই চুপ থাকে। ওয়েষ্টিনও তাই করেছে। ওয়েস্টিন কর্তৃপক্ষ কি জানতেন না পাপিয়া তাদের হোটেল ভাড়া নিয়ে কি কাজ করতো? আড়াই লাখ টাকায় পুরো বার ভাড়া নিতো পাপিয়া। সেখানে রাত-দিন চলতো নানা অপকর্ম। প্রশ্ন হলো ভাড়া নেওয়া বারে ধর্ণাঢ্য লোকদের কারা আসতন? একটি ফাইভস্টার হোটেল কি গ্রাহকদের সুবিধা রক্ষার পরিবর্তে সম্পূর্ণ বার এভাবে ভাড়া দিতে পারেন?
ওয়েস্টিনে যারা যায় তারা ক্ষমতাহীন নয়। ওয়েস্টিনে যাওয়া এমন কিছু লোককে ব্ল্যাকমেইলও করেছেন পাপিয়া। যুব মহিলা লীগের নেত্রী হিসেবে এতো বিশাল ক্ষমতা তার ছিলো না। সামান্ন ড্রাইভারের মেয়ে থেকে দামী গাড়ি, ফ্লাট, অর্থ-কড়ি কারোই চোখে পড়লো না। নাকি পড়েছে কিন্তু ভাগ (টাকা আর দেহ) পেয়ে তাঁরা অন্ধ হয়ে গেছেন। পাপিয়ার গডফাদার কে এবং কারা? কারা তার আয়ের ভাগ পেতেন? এটা আগে বেড় করতে হবে।
পাপিয়ার পাপে পাপিয়ার সাজা হলে চলবে না। পাপিয়াকে যারা পাপের পথে নিয়ে এলো তাদেও কি হবে? নিশ্চয় ওয়েস্টিনে সিসি ক্যামেরা আছে? ফাইফ ষ্টার নয় দু’ষ্টারেও এখন সিসি ক্যামেরা থাকে। সিসি ক্যামেরায় পাপিয়ার খদ্দরদের বের করা খুব কঠিন কাজ নয়। খদ্দরদের তালিকা প্রকাশ করা হবেনা কেনো? মালিক পক্ষকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার। হোটেলে কারা আসা-যাওয়া করেছে, তাদের রেজিস্টার জব্দ করা জরুরী। ওয়েষ্টেন আবার বলে না ফেলে বৈদ্যুতিক সমস্যার কারনে কিংবা যান্ত্রীক সমস্যার কারনে তাদেও সিসি ক্যামেরায় সমস্যা ছিলো। আর এমনটাই হয় বাংলাদেশে।
অনেক পাপিয়া আর সম্্রাট আছে দেশে।ওরা কেবল ধরা পওে কোন সংঘাতে। ভাগাভাগীর সমস্যায়। অবৈধ হলেও মহাপ্রতাপশালী পাপিয়া তো দিব্যি কায় কারবার চালাচ্ছিলো। কার সাথে স্বার্থের সংঘাতে তাকে গ্রেফতার করা হলো? ওই স্বার্থটা কি? আগে বের করুন। ঢাকাসহ দেশের আর কোন্ কোন্ হোটেলে এমন বিশাল কর্মযজ্ঞ চলে তাও বের করতে হবে। পাপিয়াদেও জায়গা কিন্তু খালি রয়না কখনো। পাপিয়ার জায়গা এখন দখল করবে কে? এরকম আর কত পাপি এবং পাপিয়া আছে দেশের হোটেল, গেস্ট হাউজ, আন্ডারগ্রাউন্ডে? তাদেও বের করারে দ্বায়িত্ব যাদেও তাঁরা কি দ্বায়িত্ব পালন করবেন।
দেশের রাজস্ব বিভাগের লোকজন কি করে?দিনের পর দিন ফাইভ স্টার হোটেলের স্যুট ভাড়া নেন পাপিয়া? দৈনিক ভিত্তিতে ভাড়া নেন বার?হঠাৎ দামী গাড়ি, চাকচিক্য, ফ্লাট কোনটাই কি তাঁদেও চোখে পড়লো না। পাপিয়ার এমন সম্্রজ্যেও খবরতো রাজস্ব বিভাগ দুর্নীতিদমন বিভাগ সবরই জানবার কথা। কারো ইশারায় কি সবাই চুপ ছিলেন? হোটেলের মালিকপক্ষকে কি কখনো সরকারি মহলকে এসব বিষয়ে জবাবদিহি করতে হয়নি? হোটেলের মালিকপক্ষ সব জানতেন ঠিকই। তারা কেন থানা পুলিশ ও প্রশাসনকে একবারও জানালেন না? এ দ্বায় কিন্তু তাঁদের। তাদেরও বিচারের আওতায় আনা হউক। এক পাপিয়া তার পাপের জন্য সাজা পাবে আর অন্যরা অপরাধ কওে বেঁচে যাবে তা কিন্তু হতে পারে না। জানা কী যাবে না কারা ছিলেন পাপিয়ার আশ্রয়দাতা? খালেদ-সম্রাটদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতাদের কথাও কিন্তু াাজাব্দি দেশবাসী জানতে পারেনি। কিছু ক্ষমতাবান পদ হারিয়েছেন মাত্র। পাপিয়ার ক্ষেত্রেও হয়তো তাই হবে। পাপিয়া কারাবাস করবে আর পাপিয়াকে দিয়ে যারা পাপ করালো তারা ঠিকই সুখে শান্তিতেই থাককেন।
কথা একটাই, পাপিয়ারা কিন্তু একা পাপ করতে পারে না। অর্থের জন্য কেউ পাপিয়াদের দিয়ে পাপ করায় আবার ভোগের জন্য কেউ পাপিয়াদের পাপের পথে নামায়। পাপিয়া কিন্তু হঠাৎ করে এই পাপিয়া হয়ে উঠেনি? পাপিয়ার এই রঙিন জীবন-কাহিনী এতটা গোপনীয় থাকার কথা নয়। এমনটাও কথা নয় যে, দলের নেতা-মন্ত্রী বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা গোয়েন্দারা তার বিষয়ে কিছুই জানতেন না? ‘এত দিন কোথায় ছিলেন?’ পাপিয়ারা আগেও ছিলেন, পরেও আশা করি থাকবেন। যাঁদের জানার তাঁরা জানতেন। জানতেন বলেই পাপিয়ারা কুঁড়ি থেকে ফুল হয়ে ফোটেন, কর্মী থেকে বড় নেত্রী হয়ে ওঠেন।
দেশ থেকে পাপিয়াদের জন্মদাতা নেতাদের পাপকে রুখে দিন আগে। ওদের মুখোস উম্মোচন করুন তাহলে আর একজন পাপিয়াও জন্ম নেবে না। গনমাধ্যমও কিন্তু এ দ্বায় এড়াতে পাওে না। শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও গণমাধ্যমকে এ দ্বায় নিতেই হবে। পাপিয়া পাপ কর্মের সংবাদ তাঁরা কেন প্রকাশ করতে পারেনি। গণমাধ্যম কেন সংবাদ প্রকাশ করেনি বা এসব ক্ষেত্রে কেন সংবাদ প্রকাশ করতে পারে না, অনেক কথা বলা যায়। আজ না হয় নাই বললাম। ওসব নিয়ে কথা হবে আরেকদিন।
লেখক : সাংবাদিক, কলামিষ্ট ও গবেষক।