পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার হরণের অভিযোগ তুলল বন্দিমুক্তি কমিটি। এই কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছোটন দাস এবং কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সুজাত ভদ্র। এঁরা দুজনই রাজ্য সরকার নিযুক্ত মধ্যস্থতা কমিটির সদস্য। তাঁদের এই ভূমিকা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। এদিকে জঙ্গলমহলে যৌথবাহিনী প্রত্যাহার এবং বন্দি মুক্তি নিয়ে কলকাতা  মেট্রো চ্যানেলে এপিডিআর সহ একুশটি সংগঠনের অবস্থান বিক্ষোভের অনুমতিও আটকে দেয়া হল পুলিসের তরফে। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি মধ্যস্থতাকারীদের এবং সরকারের মধ্যে কী এবার সরাসরি সংঘাত শুরু হল।
পুরুলিয়ায় পুলিসের গুলিতে নিহত হয়েছিল মাওবাদীদের দুই স্কোয়াড সদস্য। সেই ঘটনার তদন্ত দাবি করল বন্দি মুক্তি কমিটি। একই সঙ্গে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, আইজি গঙ্গেশ্বর সিং সহ অন্য পুলিস কর্মীদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা শুরু করার দাবিও তুলল এই সংগঠন। ব্যক্তি ও সংগঠনের নাম করে মুখ্যমন্ত্রীর হুমকি এবং সাংসদদের উস্কানিমূলক বক্তৃতার অভিযোগ তুলে তারও প্রতিবাদ করা হয়েছে কমিটির তরফে। এই বন্দি মুক্তি কমিটিতেই রয়েছেন, সুজাত ভদ্র-ছোটন দাস। দুজনেই আবার রাজ্য সরকার নিযুক্ত মধ্যস্থতা কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। কমিটির এই বিবৃতির মাধ্যমে এটা পরিস্কার, তারা এবার রাজ্য সরকারের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে যেতে চলেছে। দুদিন আগেই মধ্যস্থতাকারীরা রাজ্য সরকারকে চিঠি দিয়ে তাঁদের দায়িত্ব থেকে অব্যহতি চেয়েছেন।  আজ শনিবার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁদের বৈঠক হওয়ার কথা। তার আগে এই বিবৃতি ইতিমধ্যেই অনেক প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। এদিকে জঙ্গলমহল থেকে যৌথবাহিনী প্রত্যাহারের দাবিতে এপিডিআর সহ একুশটি সংগঠনের ডাকে আগামী তেইশ এবং চব্বিশে নভেম্বর অনশন কর্মসূচি নেয়া হয়। মেট্রো চ্যানেলে সেই কর্মসূচি করা যাবে না বলে জানিয়ে দিল কলকাতা পুলিস।

এদিকে  মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ তৃণমূলের ১১ জন শীর্ষ নেতার উপর নতুন করে হামলার ষড়যন্ত্র করছে মাওবাদীরা। মাওবাদীদের হিট লিস্টে মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও দু’জন কেন্দ্রীয়মন্ত্রী রয়েছেন। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দফতরের তরফে রাজ্যসরকারকে এই মর্মে সাবধান করে দেয়া হল।
এদিন কেন্দ্রীয় ইন্টেলিজেন্সি ব্যুরোর রিপোর্টে বলা হয়েছে, তৃণমূলের ১১ জন শীর্ষ নেতাকে হত্যার ছক কষছে মাওবাদীরা। এদের মধ্যে রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী মুকুল রায়, গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী শিশির অধিকারী। এছাড়াও মাওবাদীদের তালিকায় রয়েছেন সাংসদ তথা তৃণমূল যুব-কংগ্রেসের সভাপতি শুভেন্দু অধিকারী সহ প্রমুখ।
এদিকে রাজ্য গোয়েন্দা দফতরের তরফ থেকেও ওই একই সতর্কবার্তা জারি করেছে। স্বাভাবিক ভাবেই কেন্দ্র ও রাজ্য গোয়েন্দা দফতরের এই সতর্কবার্তাকে বিশেষ গুরত্ব দিচ্ছে রাজ্যসরকার। ফলে ১১ জন ওই নেতার নিরাপত্তায় জোর দিয়েছে রাজ্যপ্রশাসন।

এছাড়া গতকাল পশ্চিমবঙ্গের খাদ্যমন্ত্রীকে খুনের হুমকি এবং মুখ্যমন্ত্রীকে হুশিয়ারি দেয়া মাওবাদী পোষ্টার মিলল খোদ খাদ্যভবনের সামনে। গতকাল খাদ্যভবনে খাদ্য সচিবের ঘরের বাইরে একটি জায়গায় ১১টি পোষ্টার লক্ষ্য করা যায়। পোষ্টারে জঙ্গলমহল থেকে খাদ্য সরবরাহ দফতর তুলে নেয়া এবং খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করার হুমকি দেয়া হয়। জঙ্গলমহলের জনগনের জন্য নেয়া খাদ্য দফতরের বিভিন্ন নীতির জন্য খাদ্যমন্ত্রীকে খুনের হুমকি দেয়া হয়। পুলিশ পোষ্টারগুলি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
এদিকে এই ঘটনার পর খাদ্যমন্ত্রী জানান, তাকে খুনের হুমকি দিয়ে জঙ্গলমহলের উন্নয়ন ও শান্তিপ্রক্রিয়াকে ব্যহত করা যাবে না। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জঙ্গলমহলের জনগনের জন্য আরও বেশি খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ করা হবে। তিনি নিজের নিরাপত্তার চেয়ে জঙ্গলমহল এলাকার খাদ্য দফতরের কর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবছেন বলে জানান।

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/শফিকুল ইসলাম/কলকাতা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here