লাইফসাপোর্টে রাখা হ

স্টাফ রিপোর্টার :: ফেনীর সোনাগাজীতে পরীক্ষাকেন্দ্রে মাদ্রাসাছাত্রীর গায়ে আগুন দিয়ে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় চারজনকে আসামি করা হয়েছে।

সোমবার দুপুর সাড়ে ৩টায় সোনাগাজী থানায় এই মামলা করেন ওই ছাত্রীর ভাই। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সোনাগাজী থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন।

এদিকে তার ফুসফুর ঠিকমত কাজ করছে না। সোমবার দুপুরে এমনটি জানিয়েছে মেডিকেল বোর্ড। ওই ছাত্রীকে বর্তমানে রাখা হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের লাইফসাপোর্টে।

মেডিকেল বোর্ডের প্রধান ও হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম সোমবার জানান, মেয়েটির অবস্থা ভালো নয়। ওর অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন। তার ফুসফুস ঠিকভাবে কাজ করছে না। শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। তাই তাকে লাইফসাপোর্টে রাখা হয়েছে।

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, অজ্ঞাতপরিচয় চার আসামি ও তাদের সঙ্গীরা হত্যার উদ্দেশে ওই ছাত্রীর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়েছে।মামলায় মুখোশধারী চারজন এবং তাদের সহযোগীদের আসামি করা হয়েছে।

এদিকে মাদ্রাসাছাত্রীকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় এ পর্যন্ত সাতজনকে আটক করেছে পুলিশ। তারা হলেন- মোস্তফা কামাল, নুরুল আমিন, আশরাফ, সাইফুল, আরিফ, জসীম ও আলাউদ্দিন। তারা এখন পুলিশ হেফাজতে আছে। তাদের এ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হতে পারে।

বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন সোমবার দুপুরে বলেন, ওর অবস্থা ভালো নয়। আগের দিনের চেয়ে শারীরিক অবস্থা আরও অবনতি হয়েছে। তাই দুপুর ১২টার দিকে তাকে লাইফসাপোর্ট দেয়া হয়েছে। আমরা তার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছি।

মেডিকেল বোর্ড জানিয়েছে, ওই ছাত্রীর অবস্থা গুরুতর। যেকোনো সময় পরিস্থিতি যেকোনো দিকে মোড় নিতে পারে। তার শরীরের ৮০ শতাংশ পুড়ে গেছে। মানুষের শরীরে চামড়ায় ৭টি লেয়ার থাকে, ওই ছাত্রীর সব লেয়ার পুড়ে গেছে। শ্বাসনালিও পুড়ে গেছে। পাশাপাশি দগ্ধ হওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে তাকে বার্ন ইউনিটে আনা হয়নি, সময়ক্ষেপণ হয়েছে। এতেও তার অবস্থার অবনতি হয়েছে।

প্রসঙ্গত ফেনীর সোনাগাজীতে পরীক্ষাকেন্দ্রের ভেতর ওই ছাত্রীর (১৮) গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে হত্যাচেষ্টা চালায় দুর্বৃত্তরা। শনিবার সকালে সোনাগাজী পৌর এলাকার ইসলামিয়া সিনিয়ার ফাজিল মাদ্রাসাকেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। ওই ছাত্রী ওই মাদ্রাসা থেকেই আলিম পরীক্ষা দিচ্ছিলেন।

পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত কক্ষ থেকে ছাদে ডেকে নিয়ে কয়েকজন বোরকা পরা নারী পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ করেছেন ওই শিক্ষার্থীর পরিবারের সদস্যরা। তারা জানান, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজ উদ্দৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে দায়ের করা মামলা তুলে না নেয়ায় এ ঘটনা ঘটেছে। এ তথ্য ফেনী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্থানীয় পুলিশকেও জানিয়েছেন ওই শিক্ষার্থী। তার অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় এদিন বিকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের ১০২ নম্বর কক্ষে ভর্তি করা হয়। পরে তাকে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়।

পরিবার ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মামলা করেন ওই ছাত্রীর মা। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ২৭ মার্চ সকাল ১০টার দিকে অধ্যক্ষ তার অফিসের পিয়ন নূরুল আমিনের মাধ্যমে ছাত্রীকে ডেকে নেন। পরীক্ষার আধা ঘণ্টা আগে প্রশ্নপত্র দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ওই ছাত্রীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন অধ্যক্ষ।পরে পরিবারের দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার হন অধ্যক্ষ। সেই মামলা তুলে না নেয়ায় অধ্যক্ষের লোকজন ওই ছাত্রীর গায়ে আগুন দিয়েছে।

এদিকে ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে গ্রেফতার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পিকেএম এনামুল করিমের সভাপতিত্বে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসার গভর্নিং কমিটির সভায় রোববার এ সিদ্ধান্ত হয়। সভায় ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত মাদ্রাসা বন্ধ ঘোষণার সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া সভায় মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ এবং শিক্ষকদের পক্ষ থেকে অগ্নিদগ্ধ ছাত্রীর চিকিৎসায় দুই লাখ টাকা অনুদান দেয়ারও সিদ্ধান্ত হয়।

সোনাগাজী থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলাকে শিশু বলাৎকারের ঘটনায় ফেনী সদরের একটি মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে নাশকতা, যৌন হয়রানি ও চেক জালিয়াতিসহ ফেনী এবং সোনাগাজী মডেল থানায় ছয়টি মামলা রয়েছে।

 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here