আমাদের দেশে মানুষের সুখ দু:খ, সুবিধা অসুবিধা দেখার কি কেউ নেই। প্রতিনিয়ত সরকার গ্যাসের দাম, তেলের দাম বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করছে আর এই সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে বাস, টেম্পু এমনকি রিক্মা চালকরা। পরিবহন শ্রমিকদের কাছে আমরা জিম্মি হয়ে যাচ্ছি। জ্বালানী তেলের দাম বাড়ানো হয় লিটার প্রতি ৫-১০ টাকা আর পরিবহন সেক্টরে ভাড়া ভাড়ানো হয় ২-৩ গুন। সিটিং বাসের ভাড়া আদায় করে লোকাল হিসাবে প্রকাশ্যে চলছে । সরকারের নির্ধারিত ভাড়া তারা মানছে না। সরকারের কোন নিয়ম তারা মানে না। আর মানবেই বা কেন, যেখানে এই পরিবহন সেক্টরকে সাপোর্ট দিচ্ছে আমাদের সরকারের এক মন্ত্রী। সামপ্রতিক সময়ে যোগাযোগ মন্ত্রীর বিভিন্ন পদক্ষেপকে স্বাগত জানাই, তবে তিনি এ ব্যাপারে কতটুকু সফল হবেন তা বলা মুসকিল। কারন এই সেক্টরে কর্মরত বেশীর ভাগ ব্যক্তিই হচ্ছেন অশিক্ষিত এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের। যাদের এই পেশায় আসার একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে যে প্রকারেই হউক টাকা উপার্জন করতে হবে। যেমন আমাদের দেশে কিছু কথা প্রচলিত আছে, বেশী দূর্ঘটনা না ঘটালে ভাল চালক হওয়া য়ায় না, বা গাড়ীর তেল চুরি না করলে প্রাইভেট কারের চালকদের পেশা সুদ্ধ হয় না। প্রাইভেট কারের চালকদের যত ভাল বেতন দেয়া হউক না কেন বেশীর ভাগ চালক তেল চুরি করবেই। তাই বলছি মন্ত্রীর সুউপদেশ এর মুল্য দেয়ার মত যোগ্যতা তাদের নেই।

যোগাযোগ মন্ত্রীর উচিত দেশের জনগনের কথা চিন্তা করে যোগাযোগ সেক্টরে কর্মরত শুধু চালকেদের নয় পাশাপাশি এদের নিয়ন্ত্রনকারী বিআরটিএর কর্মকর্তা কর্মচারী, ট্রাফিক পুলিশ, সার্জেন্ট এর প্রতি ও নজর দেয়া। কারন বিআরটিএর কর্মকর্তা কর্মচারী, ট্রাফিক সার্জেন্ট ও ট্রাফিক পুলিশ দূর্নীতি না করে সঠিকভাবে দ্বায়িত্ব পালন করলে যোগাযোগ ব্যবস’ায় কোন অনিয়ম থাকবে না, সড়ক হবে নিরাপদ, সড়ক হবে যানজটমুক্ত, সড়কে কোন ভ’য়া লাইসেন্সদারী চালক না থাকলে সড়ক দূর্ঘটনা কমে যাবে। বাস টেম্পুতে সরকারের নিয়ম অনুযায়ী ভাড়া নিবে। সিটিং বাসে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে প্রতারনা করবে না। সিটিং বাস কোন সময় সিটিং বাসের ভাড়া নিয়ে লোকাল হিসাবে চলবে না।
চালকদের অশিক্ষা ও অজ্ঞতার কারনে প্রতিদিন আমাদের দেশে সড়ক দূর্ঘটনা ঘটছেই। ঝরে ঝাচ্ছে তাজা প্রাণ। সরকার আইন করা সত্যেও প্রকাশ্যেই তারা মোবাইলে কথা বলতে বলতে গাড়ী চালায়, ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স দিয়ে গাড়ী চালায়। অজ্ঞতার কারনে পয়সা দিয়ে প্রশিক্ষন নিয়ে না নিয়ে যাত্রীদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। আর দু:খের বিষয় আমাদের সরকারের এক মন্ত্রী বলেন চালকের পরীক্ষা দিয়ে পাস করে ড্রাইভিং লাইসেন্স নেয়ার প্রয়োজন নেই। রাস্তায় গরু ছাগল এর চিহ্ন দেখতেই পেলেই একজন চালক ড্রাইভার হওয়ার যোগ্য । আমার মাননীয় মন্ত্রীর কাছে আমার সবিনয়ে প্রশ্ন রাস্তায় কি গরু ছাগল থাকে না মানুষ থাকে। ড্রাইভার যে বাস চালায় সে বাসে কি গ্ররু চাগল থাকে না মানুষ থাকে। গত ২৬ জানুয়ারী আরেকটি বাস শুধুমাত্র চালকের গাড়ী চলাকালীন সময়ে মোবাইল ব্যবহারের কারনে খাদে পরে যায়। হতাহত হয় সাধারন যাত্রী। কোন শিক্ষিত ও জ্ঞানী ব্যক্তি পরীক্ষা দিয়ে চালক হলে যাত্রীদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে গেলে তার বিবেকে বাঁধত।
আবার এই পরিবহন সেক্টরের যারা মালিক রয়েছেন তারা ও ইচ্ছা অনুয়ায়ী ভাড়া নির্ধারন করে টিকিট ছাপিয়ে ভাড়া আদায় করছে। একই রুটে দুই বাসের দুই ধরনের ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। যেমন মোহাম্মদপুর হতে ফার্মগেট, মহাখালী হয়ে গুলশান রুটে দীর্ঘদিন যাবত ওয়ান লাইন, তরঙ্গ পরিবহন চলাচল করে আসছে, তরঙ্গ টিকিট সিস্টেম চালু আছে কিন’ ওয়ান লাইন টিকিট ছাড়া লোকাল বাসের মত যাত্রী পরিবহন করে কিন’ বাড়া আদায় করছে টিকিট মূল্যের , এবং ওয়ান লাইন কখনো বাড্ডা হতে মোহাম্মদপুর আবার কখনও বাড্ডা হতে গাবতলী যাতায়াত করে ফলে যাত্রীদের ভোগানি-র স্বীকার হতে হয়। ওয়ান লাইন ও তরঙ্গের মোহাম্মদপুর হতে ফার্মগেট এর ২.৫০ কিলোমিটারের ভাড়া ছিল ৫ টাকা যা লোকাল বাসে ৩ টাকা । সমপ্রতি এই রুটে সরকার বিআরটিসি সার্ভিস চালু করেছে, যা যাত্রীদের জন্য সুবিধা হয়েছে। যদিও সকাল বেলা অফিস সময়ে দীর্ঘ লাইনের সৃষ্টি হয়। মোহাম্মদপুর -ফার্মগেট রুটে বিআটিসির ভাড়া ছিল ৫ টাকা। সমপ্রতি সিএনজির দাম বাড়ার কারনে বিআটিসি সরকার নির্ধারিত ভাড়া মোহাম্মদপুর – ফার্মগেট রুটে কিলোমিটার হিসাবে নির্ধারন না করে সর্বনিম্ন ভাড়া ৭/- করে আদায় করছে আর একই রুটে তরঙ্গ পরিবহন এবং ওয়ান লাইন আদায় করছে ৮/- টাকা। এবং বিআরটিসি বাস মোহাম্মদপুর – মহাখালী রুটে ভাড়া নিচ্ছে ১০.০০ টাকা একই রুটে তরঙ্গ পরিবহন টিকিট বিক্রি করছে ১৬ টাকা।

এক রুটে দুই ধরনের বাস ভাড়া আদায় করছে অথচ এসব দেখার কেউ নেই। যোগাযোগ মন্ত্রনালয় কি এসব দেখতে পায় না। নাকি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখাতে হবে।

লেখক একজন ফিলেন্স সাংবাদিক

Soyeb4@gmail.com

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here