ডেস্ক রিপোর্ট::  রাজবাড়ীতে পদ্মা নদীর পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়েছে ব্যাপক ভাঙন। ভাঙনে বিলীন হচ্ছে শত শত একর ফসলি জমি। হুমকির মধ্যে রয়েছে নদীপাড়ের বাসিন্দারা। বিলীনের পথে প্রস্তাবিত ‘রাজবাড়ী সেনানিবাস’ এলাকা।

গত কয়েকদিনের ভাঙনে রাজবাড়ী কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া ইউনিয়নের এক কিলোমিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। কৃষিজমি হারিয়ে কাঁদছেন পদ্মাপারের মানুষ। বৃষ্টি ও উজানের ঢলে কয়েকদিন ধরে বেড়েই চলছে নদীর পানি।

সরেজমিনে জেলার কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া ইউনিয়নের হরিণবাড়িয়া, লস্করদিয়া, চর-রামনগর, ভবানীপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায় বড় বড় চাপ নিয়ে নদীর পাড় ভাঙছে। নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে কৃষি জমি। কৃষকের রোপণ করা পাট, বাদাম নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে। নদী তীরের বেশ কয়েকটি পরিবার তাদের বসতবাড়ি সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছেন।দ্রুত ভাঙন ঠেকাতে না পারলে আবারও বসতভিটা স্থানান্তর হওয়ার ঝুঁকিতে হয়েছে অন্তত চারটি গ্রামের শতাধিক পরিবার। ভাঙন রোধে স্থানীয়রা নিজের অর্থায়নে বাঁশ দিয়ে নদীর স্রোত অন্যদিকে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

জানা গেছে, ২০১৫ সালে রাজবাড়ী জেলায় তিন হাজার ৫৩৪ দশমিক ১ একর জমিতে রাজবাড়ী সেনানিবাস নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে দুই হাজার ১২৩ দশমিক ১৪ একর ব্যক্তিমালিকানাধীন ও বন্দোবস্তকৃত,বাকিটা খাস জমি। সেখানে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ প্রস্তবিত সেনানিবাস উদ্বোধন করেন। অনেক টাকা ব্যয়ে এখানে একটি নামফলক নির্মাণ করা হয়েছিল এখানে। সেগুলোও নদীতে বিলীন হয়ে গিয়েছে।

কালুখালীর রতনদিয়া ইউনিয়নের হরিনবাড়িয়া এলাকার বাসিন্দা ফুলজান বেগম বলেন, পদ্মার পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নদীতে ভাঙন শুরু হয়েছে। আমরা ভেবেছিলাম সেনাবাহিনীর এলাকা ভালো থাকব। কিন্তু সেটি নেই। ২০১৫ সালের পর থেকে নদী ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। ভাঙন রোধে এখানে কোন পদক্ষেপ নেয় না সরকার। নদী ভাঙতে ভাঙতে আমাদের বাড়ির কাছে চলে আসছে। এর আগে দুবার বাড়ি সরিয়ে নিয়েছি। এবারও আমরা সরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।

লস্করদিয়া, চর-রামনগর ও ভবানিপুর এলাকার সিরাজ, শহিদুল, সাখাওয়াত, সালেহা, ফিরোজাসহ একাধিক নদী পারের বাসিন্দারা বলেন, প্রত্যেক বছর বর্ষা মৌসুমে আমাদের এলাকায় নদী ভাঙন দেখা দেই। নদী ভাঙনে শত শত বিঘা ফসলি জমি, ঘরবাড়ি বিলীন হয়। তারপর ভাঙন রোধে সরকার কোনো পদক্ষেপ নেই না। এই বছরও গত কয়েকদিনে নদী পারের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখনো পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙনরোধে কোন কাজ শুরু করেনি। সামনে আমাদের জন্য আরও খারাপ সময় অপেক্ষা করছে।

পদ্মার চরের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, ২০১৯ সালে রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার প্রস্তাবিত সেনানিবাস এলাকায় প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, স্থানীয় এমপি জিল্লুল হাকিমসহ সেনাবাহিনীর বড় বড় অফিসার এসেছিলেন। তারা আমাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন ভাঙন রোধে নদী শাসনের জন্য স্থায়ী কাজ হবে। কিন্তু সেই কাজ এখনো শুরু হয়নি। অথচ প্রত্যেক বছরই শত শত বিঘা জমি নদীতে বিলীন হচ্ছে।

রতনদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেহেদী হাসিনা পারভীন নিলুফা বলেন, আমরা ইউনিয়নে প্রস্তাবিত ‘রাজবাড়ী সেনানিবাস’ এলাকা রয়েছে। সেনানিবাস এলাকাসহ বেশ কিছু এলাকায় ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙন প্রতিরোধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। আমরা বিষয়টি রাজবাড়ী-২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা জিল্লুল হাকিম এমপিকে জানিয়েছি।

রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল আমীন বলেন, পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি শুরু হয়েছে। কালুখালীর কিছু কিছু এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। আমরা ভাঙন কবলিত এলাকা পর্যবেক্ষণ করছি।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here