ঢাকা: পোশাকশ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৫ হাজার ৩০০ টাকা নির্ধারণ করেছে মজুরি বোর্ড।
সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বৈঠক শেষে মজুরি বোর্ড চেয়ারম্যান একে রায় প্রেস ব্রিফিংয়ে এই ঘোষণা দেন। যদিও মালিকপক্ষ এ ঘোষণার বিরোধিতা করেছেন।
এর আগে সকাল ১১টা থেকে এ বিষয়ে মজুরি বোর্ড বৈঠক করেন। শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ নিয়ে ৬ সদস্যের মধ্যে দর কষাকষি হয়। বোর্ডের ৪ সদস্য ন্যূনতম মজুরি ৫ হাজার ৩শ টাকা সমর্থন করেন।
এ ঘোষণা অনুযায়ী, শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরির মধ্যে বেসিক বেতন হবে ৩ হাজার ২০০ টাকা। বাসাভাড়া হবে ১২৮০ টাকা। চিকিৎসা খরচ ধরা হয়েছে ৩২০ টাকা। যাতায়ত ২০০ টাকা। অন্যান্য খরচ ধরা হয়েছে ৩০০ টাকা।
বেশি সংখ্যক ভোটের ভিত্তিতেই এ ঘোষণা দেয়া হয়েছে বলে জানান মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান। তবে মালিকপক্ষের আশরাফুজ্জামান দীপু এবং বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহীউদ্দিন এ ঘোষণা প্রস্তাবে স্বাক্ষর না করে বৈঠকস্থল ত্যাগ করেন।
শ্রমিক সংগঠনগুলোও এ মজুরি প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের দাবি, ন্যূনতম মজুরি ৮ হাজার টাকা।
ন্যূনতম মজুরির ঘোষণাটি দেয়া হয়েছে ১৯৬১ সালের শ্রমআইনের ৭ নম্বর ধারার ভিত্তিতে। বোর্ডের ৬ সদস্যের মধ্যে ৪ সদস্য ন্যূনতম মজুরি ৫ হাজার ৩০০ টাকা সমর্থন করেছেন, বাকি দু’জন ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকেন।
এসময় শ্রমিক পক্ষের সদস্য সিরাজুল ইসলাম রনি, তৃতীয় পক্ষের প্রতিনিধি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক কামাল উদ্দিন আহম্মেদ, মালিক পক্ষের সদস্য কাজী সাইফুল আহম্মেদসহ অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে মালিক পক্ষের সদস্য আশরাদ জামান দিপু ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি সফিকুল ইসলাম মহিউদ্দিন উপস্থিত থাকলেও তারা সংবাদ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেননি এবং বোর্ডর সিদ্ধান্তও মেনে নেননি।
পূর্বনির্ধারিত এ বৈঠক সকাল ১১টা থেকে শুরু করে বিকেল সোয়া ৩টায় শেষ হয়। এসময় শ্রমিকপক্ষের ৮ হাজার ১১৪ টাকা ও মালিক পক্ষের ৪ হাজার ২৫০ টাকা প্রস্তাবের ভিত্তিতে দর কষাকষি শুরু করে দুই পক্ষ। দীর্ঘ বৈঠকে শ্রমিক পক্ষের দাবি কমিয়ে আনলেও মালিক পক্ষ অনড় থাকে তাদের ঘোষণার ওপর। এমনকি বোর্ডের খসড়া ন্যূনতম মজুরিপত্রে স্বাক্ষর করেননি তারা। বৈঠকে সিদ্ধান্তের কথা জানানো হলেই তারা বৈঠক ত্যাগ করে চলে যান।
বৈঠক শেষে মজুরি বোর্ড চেয়ারম্যান একে রায় সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠকে মালিকপক্ষ ৪ হাজার ২৫০ টাকা প্রস্তাব করে আর শ্রমিকপক্ষ ৮ হাজার ১১৪ টাকা। এর পরে শ্রমিকপক্ষ আলোচনার ভিত্তিতে ৬ হাজার প্রস্তাব করে। তাতেও মালিকপক্ষ রাজি হয়নি। পরে শ্রমিকপক্ষ সাড়ে ৫ হাজার প্রস্তাব করে। তাও সম্ভব হয়নি। পরে দর কষাকষির মাধ্যমে ৫ হাজার ৩০০ টাকা স্থির করা হয়। আর তা বোর্ড সদস্যদের ভোটের ভিত্তিতে হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ‘এ প্রস্তাব এখন খসড়াভাবে ঘোষণা করা হলো। আগামী দু’একদিনের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে এবং ১৫ দিনের মধ্যে গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে। এর পরে এর কোনো সমস্যা থাকলে তা নিয়ে আবার আলোচনা হতে পারে।’ এর আগের মজুরি ঘোষণা নিয়েও এমন হয়েছে বলে তিনি সাংবাদিকেদের জানান।
এ বিষয়ে শ্রমিক প্রতিনিধি সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, মলিকদের ব্যবসার কথা বিবেচনা করে আমরা এ সিদ্ধান্ত জানিয়েছি। কিন্তু মালিকপক্ষ এতে সহযোগিতা না করে চলে গেছেন। আশা করি, তারা এ প্রস্তাবে সম্মতি জানাবেন।
এ খসড়া গেজেটের কত দিনের মধ্যে বাস্তাবায়ন করা হবে এমন প্রশ্নের জবাবে রনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী আগামী ১৪ দিনের মধ্যে এর গেজেট প্রকাশ করা হবে। এর পর থেকে আশা করি, মালিকপক্ষ এটি কার্যকর করবে।
উল্লেখ্য, গত সেপ্টেম্বরে ন্যূনতম মজুরি নিয়ে টানা কয়েক দিন সহিংস শ্রমিক বিক্ষোভ দেখা দিলে দফায় দফায় বৈঠক করে সরকার, মালিক ও শ্রমিকপক্ষ। সেসময় মন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নভেম্বরে নতুন মজুরি ঘোষণার প্রতিশ্রুতি দিলে বিক্ষোভ বন্ধ হয়।
প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে মজুরি বোর্ডের বৈঠক হয়। তবে সেখানে মালিক ও শ্রমিকপক্ষ একমত না হওয়াতে কোনো সমঝোতা হয়নি।
বৈঠক শেষে মালিকপক্ষের প্রতিনিধি আশরাদ জামান দিপু সাংবাদিকদের বলেন, আমরা প্রথমে ৪ হাজার ২৫০ টাকা মজুরির প্রস্তাব দিয়েছিলাম। পরে আরও ২৫০ টাকা বাড়িয়ে সাড়ে ৪ হাজার টাকায় একমত হয়েছি। আমাদের প্রস্তাবের মধ্যে ন্যূনতম মজুরির সঙ্গে খাদ্য ও পরিবহন ভাতা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
অবশ্য সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে শ্রমিক প্রতিনিধি সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, আমরা শ্রমিকদের পক্ষ থেকে ৮ হাজার ১১৪ টাকা ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের জন্য প্রস্তাব করেছি। কিন্তু মালিকপক্ষের অনড় অবস্থানের কারণে পূর্বের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নভেম্বরে মজুরি ঘোষণা সম্ভব হবে না।