ডেস্ক রিপোর্ট:: নৌবাহিনী প্রধান ভাইস এডমিরাল এম নাজমুল হাসানকে ‘অ্যাডমিরাল’ র্যাংক ব্যাজ পরিয়ে দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত সেনাবাহিনী প্রধান লেফট্যানেন্ট জেনারেল আতাউল হাকিম সারওয়ার হাসান ও বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান।
রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে তাকে এ ব্যাজ পরিয়ে দেওয়া হয়।
এসময় প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, আরসিডিএস, পিএসসি, প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লে. জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব গোলাম মো. হাসিবুল আলম উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত ২৫ জুলাই নবনিযুক্ত নৌবাহিনী প্রধান রিয়াল এডমিরাল এম নাজমুল হাসানকে ভাইস অ্যাডমিরাল র্যাংক ব্যাজ পরিয়ে দেওয়া হয়। তিনি চলতি বছরের ২৪ জুলাই বাংলাদেশ নৌবাহিনী প্রধান হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
এডমিরাল এম নাজমুল হাসান বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে ১৯৮৬ সালের ১ জুলাই কমিশন লাভ করেন। দীর্ঘ চাকরি জীবনে তিনি বিভিন্ন স্টাফ, ইন্সট্রাকশনাল এবং কমান্ড দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি নৌ-সদরে সহকারী নৌবাহিনী প্রধান (অপারেশন্স), সহকারী নৌবাহিনী প্রধান (পার্সোনেল), পরিচালক নৌ অপারেশন্স ও নৌ গোয়েন্দা এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে অসামরিক-সামরিক সংযোগ পরিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রশিক্ষণ যুদ্ধজাহাজ বানৌজা ওমর ফারুকসহ চারটি যুদ্ধজাহাজের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ নেভাল একাডেমির কমাড্যান্ট এবং নেভাল এভিয়েশন ও বাংলাদেশ নৌবাহিনীর স্পেশাল ফোর্স (সোয়াডস) কমান্ড করেন। গৌরবময় সামরিক জীবনে তিনি অত্যন্ত দক্ষতা ও সফলতার সঙ্গে কমান্ডার বিএন ফ্লিট এবং কমান্ডার চট্টগ্রাম নৌঅঞ্চল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় তিনি ভাষানচরে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মায়ানমার নাগরিকদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া সুচারুরূপে চলমান রাখেন।
এছাড়া দুর্গম উপকূলীয় এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে গৃহহীন দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসনে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। চট্টগ্রাম নৌ অঞ্চলের কমান্ডার হিসেবে তিনি কক্সবাজারের ইনানীতে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে প্রথমবারের মত অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল ফ্লিট রিভিউ (আইএফআর) ২০২২ এর প্রধান আয়োজক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০২০ থেকে ২২ সাল পর্যন্ত মালদ্বীপ প্রজাতন্ত্রে বাংলাদেশের হাইকমিশনার হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন।
এসময় মালদ্বীপ সরকারের টিকাদান কর্মসূচিতে সহায়তা হিসেবে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর মেডিকেল টিম প্রেরণ, মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতির বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী অনুষ্ঠানে যোগদান ও প্রধানমন্ত্রীর প্রথমবারের মত মালদ্বীপে দ্বি-পাক্ষিক সফর আয়োজনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। চাকরি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি প্রশংসনীয় নেতৃত্বের গুণাবলী, সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা, আন্তরিকতা ও সততার ছাপ বজায় রেখেছেন।
এডমিরাল নাজমুল দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশিক্ষণ ও সামরিক কৌশলগত শিক্ষা অর্জন করেছেন। তিনি ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড এন্ড স্টাফ কলেজ, মিরপুর এবং নেভাল ওয়ার কলেজ, যুক্তরাষ্ট্র হতে কৃতিত্বের সঙ্গে স্টাফ কোর্স সম্পন্ন করেন। এছাড়া তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে সম্মানসূচক নেভাল কমান্ড কোর্স এবং বাংলাদেশে ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্স সম্পন্ন করেন। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞানে স্নাতক এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিফেন্স স্টাডিজে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী সম্পন্ন করেন। তিনি প্রাক্তন যুগোস্লাভিয়ায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।
শৃঙ্খলাবোধ, সাহসিকতা ও একনিষ্ঠতার জন্য তিনি নৌবাহিনীর সর্বস্তরের কর্মকর্তা ও নাবিকদের কাছে সুপরিচিত। চাকরি জীবনে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য অসামান্য সেবা পদকে (ওএসপি) এবং নৌ পারদর্শিতা পদক (এনপিপি)-তে ভূষিত হন। ৩৮ বছরের কর্মজীবনে তিনি জাতির পিতার আদর্শ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে অসাধারণ পেশাদারিত্ব ও সামরিক সক্ষমতার স্বাক্ষর রেখেছেন। তিনি বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ নৌবাহিনীর উন্নয়ন এবং অগ্রগতিতে সবসময় বদ্ধপরিকর। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি নাদিয়া সুলতানার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ ও এক পুত্র, এক কন্যা সন্তানের জনক।