মুজাহিদুল ইসলাম সোহেল, নোয়াখালী প্রতিনিধি ::
নিখোঁজ ছেলেকে এক নজর দেখার অপেক্ষায় রয়েছে মা তানজিনা বেগম। গত অক্টোবর মাসে বাড়ি থেকে পাশের  মেঘনা নদীতে স্থানীয় নিশাত ফিশ বোটে ১৫ জন জেলে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ হয় ৭ জন। গত চার মাস ধরে এক বারো ছেলেকে দেখতে পাননি এই মা। বাড়ির আঙ্গিনায় প্রতিটি সময় ছেলের অপেক্ষায় রয়েছেন মা তানজিনা। ঘটনাটি  নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার ১ নম্বর হরণি ইউনিয়নের আল আমিন গ্রামের মোশারফ হোসেনের পরিবারের।
উপজেলার আল আমিন গ্রামের মোশারফ হোসেনের বাড়িতে গেলে এমনি চিত্রটি চোখে পড়ে। সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়,গত ২৫ অক্টোবরে সিত্রাং এর সময় মেঘনা নদীতে মাছ ধরতে যায় হাতিয়া উপজেলার ১নং হরণি ইউনিয়নের আল আমিন গ্রামের মোশারফের ছেলে ইয়াসিন।  মাছ ধরার এক পর্যায়ে হঠাৎ করেই ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে ট্রলার ডুবে যায়। এতে ১৫ জন জেলের মধ্যে ৮ জন ফিরে এলেও নিখোঁজ হন সাত জন।
নিখোঁজ হওয়া অন্যরা হলেন, হাতিয়ার হরণি ইউনিয়নের আল আমিন গ্রামের আশ্রাফ উদ্দিন মনিরের ছেলে ইয়াকুব(১৫), মো. জসিম উদ্দিনের ছেলে ফরহাদ(১৯),আব্বাস উদ্দিনের ছেলে আল কাসের(২০),ইউনূস মাঝির ছেলে মো. সোহেল (১৬) ও একই গ্রামের শরিফ উল্যা(১৭),শরিফ(২৩) ও আমজাদ(২০)।
নিখোঁজ ইয়াসিনের মা তানজিনা জানান, সাতক্ষীরা সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) এর হাতে আটকের খবরে সেখানে খোঁজ নিয়ে সন্ধান পাননি। এরপর ভারতের আলীপুর আছে এমন খবরে সেখানে আবদুল মান্নান নামে এক আইনজীবি সরণাাপন্ন হন।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত ইয়াসিনের সাথে থাকা তার অন্য জেলেরা জানান,মাছ ধরার সময় হঠাৎ করেই ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে ট্রলার। একদিন পর আটজন বরগুনা ও সাতক্ষীরা সীমান্ত থেকে উদ্ধার হলেও নিখোঁজ হন অন্যরা।
স্থানীয় বাসিন্দা রবিউল ইসলাম রুবেল সহ বেশ কয়েকজন বলেন, শুনেছি মাছ মারতে গিয়ে বিএসএফ ধরে নিয়ে গেছে। ধরে নিয়ে যাবার পর  থেকেই তাদের কোন সন্ধান নেই।  তারা বেঁচে আছে না মৃত আমরা কেউ কিছু যানিনা। তার সাথে ান্য যারা ছিলো তারা পালিয়ে এসেছে। তারাই এসে আমাদের ঘটনা বলেছে। আমরা এলাকাবাসী হিসাবে আমাদের এলাকার ছেলেদের সন্ধান চাই।
ইয়াসিনের মা তানজিনা কান্নজনিত কন্ঠে বলেন, আমার ছেলে মাছ মারতে গেছিলো। কিন্তু এরপর থেকে তার কোন খোজ নাই। কি করবো.? চার মাসের মতো বেশি সময় হয়ে যাচ্ছে আজও পর্যন্ত আমার ছেলের কোন খবর পাইনি। তার মুখ দেখিনাই। কি করবো কই যাবো ? আমার ছেলেরে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও।
অন্য জেলে মো. ফরহাদের মা বকুল আরা বেগম বলেন, আমার ছেলেরসহ পনেরজন মেঘনা নদীতে মাছ ধরতে গেছিলো সন্ধ্যার একটু পরেই। তারপর থেকে তার কোন খবর নেই। ঘূর্ণিঝড়ের কবলে ট্রলার উল্টে গেলে আটজন ফিরে আসে অন্যরা নাকি তার থেকে কিছু দূরে ছিলো। এরপর থেকে  আমার ছেলের খবর নেয়া হলে তার কোন খবর পাওয়া যায়নি।
তিনি আরো বলেন, আমরা স্থানীয় আলীপুর দুয়ার, মেদেনীপুর জেল কোর্ট,কাকদ্বীপ, সোনাদিয়া বদনদেশ ও ধর্মগর ফাড়ি ক্যাম্পে বিষয়টি অবগত করেছি। কিন্তু বিএসএফ নাকি বলেছে আমার ছেলেকে তারা ধরেনি। তাহলে আমাদের ছেলে কই গেলো। আমি আমার ছেলের সন্ধান চাই। বিএসএফ মিথ্যা বলতে পারে।
নিশাত বোটের মালিক নিশাত জানান, সিত্রাংয়ের প্রথম দিনে ঢেউয়ের তোড়ে ট্রলারটি উল্টে যায়। ট্রলারে ১৫ জন মাঝি মাল্লা ছিলো এদের মধ্যে মাঝিসহ আটজন জেলে উদ্ধার হয়। অন্য জেলেদের তথ্য অনুযায়ী সম্ভাব্য জায়গায় খোজঁ নিয়েও তাদের পাওয়া যায়নি। নিখোঁজ জেলে পরিবারকে ৮০ হাজার টাকা করে অনুদান দেয়া হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here