নেপালের আয়ের একটা বড় অংশ আসে পর্যটন থেকে৷ বিশ্বের সর্বোচ্চ চূড়া মাউন্ট এভারেস্ট এর একটা কারণ৷ তবে মধ্যযুগীয় কারুকাজে সজ্জিত ভবনের উপস্থিতিও এর একটা কারণ৷

অন্যান্য দেশের মানুষকে যখন ইতিহাসের কাছে যেতে ছবির শরণাপন্ন হতে হয় সেখানে নেপালে গেলেই দেখতে পাওয়া যায় সারি সারি ইতিহাস৷ এবং সেটা বাস্তবে৷

কাটমাণ্ডুর আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বহুছাদ বিশিষ্ট বৌদ্ধ ও হিন্দু মন্দির৷ একেকটি মন্দির যেন স্থাপত্যের একেকটা অনন্য উদাহরণ৷ কিন্তু দ্রুতই সেগুলো ভেঙে ফেলা হচ্ছে৷ আধুনিক জীবনের সঙ্গে মিলিয়ে চলতে নেপালিরাও ইতিহাস ভেঙে গড়ে তুলছে নতুন স্থাপত্যের সব ভবন৷

একাজে যেন বাধা দেয়ার কেউ নেই৷ মাত্র দশ বছর আগেও ঐতিহাসিক নিদর্শন ভেঙে ফেলার জন্য কারও অনুমতি নিতে হতনা বলে জানান জার্মান নাগরিক, স্থাপত্য বিশারদ নিলস গটশোভ৷ প্রায় চল্লিশ বছর ধরে তিনি বাস করেছেন নেপালে৷ সেখানে ইতিহাস ধরে রাখার কাজ করছেন তিনি৷

গটশোভ জানান, এখন কোনো ভবন ভাঙতে সরকারের অনুমতি নেয়ার আইন করা হয়েছে৷ কিন্তু সে পর্যন্তই৷ আইনের কোনো প্রয়োগ নেই৷ তাই যে যার খুশিমত পুরনো দালান ভেঙে নতুন দালান গড়ে তুলছে৷ নগরায়নের কারণে হারিয়ে যাচ্ছে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের অন্তর্ভুক্ত এসব নিদর্শন৷

১৯৭৯ সালে ইউনেস্কোর তালিকায় ঢোকা এশিয়ার প্রথম স্থাপত্য হলো কাটমাণ্ডু ভ্যালির এসব ভবন৷ ভক্তপুর, কাটমাণ্ডু আর পাটান – এই তিন এলাকার হিন্দু ও বৌদ্ধ মন্দিরগুলো এই তালিকার অংশ৷

৭০ বছর বয়সি গটশোভের জন্ম জার্মানির হামবুর্গ শহরে এক স্থপতির ঘরে৷ তিনি নিজেও স্থাপত্যের উপর পড়াশোনা করেছেন৷ পরে গত শতকের ষাটের দশকে জাপান যান শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করতে৷ এরপর ১৯৭১ সালে যান নেপালে৷ উদ্দেশ্য – হিন্দু মন্দির ‘পূজারি মঠ’এর সংস্কার৷ কাটমাণ্ডু থেকে ১৩ কিলোমিটার পূবে ভক্তপুর এলাকায় মন্দিরটি অবস্থিত৷ পরবর্তী কালে এই এলাকাতেই ঘর বানিয়ে থেকে যান গটশোভ৷ নেপালের ঐতিহ্য রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছেন এই নিবেদিত প্রাণ৷ এ কাজে ব্যবহার করছেন স্থাপত্য প্রযুক্তি৷

বর্তমানে তিনি দ্বাদশ শতাব্দীর নিদর্শন পাটান রয়েল প্যালেস ও ভাণ্ডারখাল আর্কিওলজিক্যাল গার্ডেন সংস্কারের কাজ করছেন৷

এসব কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা বাধার মুখোমুখি হতে হয়েছে গটশোভকে৷ এ প্রসঙ্গে তিনি একটা ঘটনার কথা জানান৷ কাটমাণ্ডুতে বৌদ্ধদের একটি অন্যতম বড় নিদর্শন ‘ইতুম বাহাল’ সংস্কারের সময় গটশোভের কর্মীদের উপর হাতুড়ি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল একদল সন্ত্রাসী৷

এতক্ষণ ধরে যেসব স্থাপনার কথা বলা হচ্ছে সেগুলো তৈরি করেছেন নেওয়ার’রা৷ কাটমাণ্ডু ভ্যালিতে এই বিশেষ গোত্রের লোকেদের বাস৷ তাদের উপর একটি বই বের করেছেন গটশোভ৷ নাম ‘আর্কিটেকচার অব নেওয়ারিস’৷

গটশোভ বলছেন, হয়তো আর কিছুদিনের মধ্যে নেপালের এসব ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলো হারিয়ে যাবে৷ তখন অন্যান্য দেশের মানুষের মতো তাঁর এই বই পড়েই নেপালিদের হয়তো ইতিহাস খুঁজতে হবে৷

জার্মান এই স্থপতি বলেন, আমি কিন্তু হতাশ হইনি৷ কেননা এটা জীবনেরই একটা অংশ, মন্তব্য গোটশোভের৷

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/নিউজ ডেস্ক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here