ষ্টাফ রিপোর্টার :: ওই দূরে সুউচ্চ পাহাড়ের সারি। পাহাড়গুলোর মাথার উপরে বরফের পিন্ড। সূর্যের কিরনের ছোঁয়ায় খসে পড়ার সময় যা রীতিমতো অগ্নিস্ফূলিগ্নর আকার পাচ্ছে। তারও উপরে মেঘমালা তথা মেঘের উড়াউড়ি। পাহাড়ের ভাজে ভাজে থরে থরে সাজানো জনবসতি। ঠিক যেন ছবির মতো। সৃষ্টিকর্তার স্বযতেœ গড়া এক নয়নাভিরাম আলসে সৌন্দর্যের লীলাভূমি। হিমাচল প্রদেশের ক্রিকেট স্টেডিয়াম গড়ে উঠেছে এসব কে অবলম্বন করেই।
স্টেডিয়ামে ঘোষণাকারীরা হাজার দুয়েক দর্শকের উদ্দেশ্যে বারবার বলছেন চিল্লাও, ধর্মশালাকে স্বাগত জানাও। ঢাক-ঢোলও বাজাচ্ছেন আয়োজকরা। তাতে কী। এমন মনোলোভা প্রকৃতির সামনে এসে ক্রিকেটে মন বসানো তো অনেকটাই দুঃসাধ্য!
চিত্তে প্রশান্তিটা আসলে ধর্মশালার ওই পরিবেশই এনে দেয়। ক্রিকেট সেখানে বড্ড গৌণ অনুসঙ্গ মাত্র! টি-২০ বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডে ‘এ’ গ্রুপে বুধবার বাংলাদেশ-নেদারল্যান্ডসের ম্যাচটিও সৌন্দর্যের পূজারীদের মন ফেরাতে অপ্রতুল ছিল।
আইসিসি সহযোগী ডাচদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স বিনোদনের খোরাক হয়নি কারোই। বুধবার নেদারল্যান্ডসকে ৮ রানে পরাজিত করে জয় দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করেছে বাংলাদেশ। সেটা আবার এসেছে অনেকটা কেঁদে-কঁকিয়ে। অবশ্য দিন শেষে জয়ের সুখটাই সবচেয়ে অমূল্য। ধর্মশালার হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথমে ব্যাট করে ৭ উইকেটে ১৫৩ রান করেছিল বাংলাদেশ। জবাবে ৭ উইকেটে ১৪৫ রান করতে সমর্থ হয় নেদারল্যান্ডস। তামিম ইকবাল ম্যাচ সেরা হন।
ধর্মশালার দ্রুত গতির আউট ফিল্ডের সঠিক ব্যবহারই করেছিল ১৫৪ রানের টার্গেটে খেলতে নামা ডাচরা। ২১ রানে বেরেসিকে (৯) ফেরান আল-আমিন। নবম ওভারে মাইবুর্গকে বোল্ড করেন নাসির। তিনি ২৯ রান করেন। উইকেট পড়লেও রানের গতি ঠিক রেখেছিল নেদারল্যান্ডস। ২০ রান করে সাকিবের বলে বোল্ড হন বেন কুপার। ৪র্থ উইকেটে অধিনায়ক পিটার বরেন ও টম কুপার ৩৫ রানের জুটি গড়েন। শেষ পাঁচ ওভারে ৫৪ রান দরকার ছিল ডাচদের। মাশরাফি-সাকিবদের বোলিংয়ে সেই চ্যালেঞ্জটা পাড়ি দিতে পারেনি তারা।
১৬তম ওভারের শেষ বলে সাকিবের বলে নাসিরের ক্যাচে পরিণত হন পিটার বরেন। ২৯ রান করা বরেন এর দুই বল আগেই নাসিরের হাতে জীবন পেয়েছিলেন। মাশরাফির করা পরের ওভারে ভ্যান ডি মারউই (১) মুশফিকের হাতে ক্যাচ দেন। টম কুপার (১৫) ক্যাচ দেন আরাফাত সানির হাতে। শেষ দিকে মুদাসসর বুখারীর এলোমেলো ব্যাটিং ম্যাচটা কঠিন করে তুলেছিল।
তাসকিনের করা ৬ বলে ১৭ রানের সমীকরণ আর পার হতে পারেনি ডাচরা। দ্বিতীয় বলে রানআউট হন বুখারী (১৪)। সিলার ৮, বিক ৪ রানে অপরাজিত ছিলেন। বাংলাদেশের পক্ষে আল-আমিন, সাকিব ২টি করে উইকেট নেন। মাশরাফি-নাসির পান ১টি করে উইকেট। ৪ ওভারে ১৪ রান দেয়া মাশরাফি ডট বল করেছিলেন ১৪টি।
এর আগে নিজেদের পরিচিত স্লো উইকেটে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে প্রত্যাশিত ব্যাটিংটা করতে পারেনি বাংলাদেশ। এশিয়া কাপে পেস বান্ধব উইকেটে খেলে এসে ধর্মশালায় স্লো উইকেটে ঠিক মতো থিতু হতে পারেন নি ব্যাটসম্যানরা। তামিম ইকবাল ছাড়া বাকিরা আসা-যাওয়ার মিছিলেই শামিল ছিলেন। একপ্রান্ত আগলে খেলে গেছেন তিনি।
তার ব্যাটেই লড়াইয়ের পুঁজি পায় বাংলাদেশ। ৩৬ বলেই হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তামিম। পরে সতীর্থরা আউট হতে থাকলেও এ বাঁহাতি ওপেনার খেলেছেন স্বাচ্ছন্দ্যে। শেষ পর্যন্ত ৫৮ বলে ৮৩ রানের (৬ চার, ৩ ছয়) ইনিংস খেলে অপরাজিত ছিলেন তিনি। এটি সহ টি-২০ তে দ্বিতীয়বার ২০ ওভার ব্যাটিং করলেন তামিম। ২০১২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে অপরাজিত ৮৮ রান করেছিলেন তিনি।
সৌম্য ১৫, সাব্বির ১৫, মাহমুদউল্লাহ ১০ ও আরাফাত সানি অপরাজিত ৮ রান করেন। সাকিব (৫), মুশফিক (০), নাসির (৩), মাশরাফিরা (৭) ব্যর্থ ছিলেন দলের প্রয়োজনে জ্বলে উঠতে। ডাচদের পক্ষে গুগটেন ৩টি, মেকিরেন ২টি করে উইকেট নেন।