উত্তর চট্রগ্রামের হাটহাজারী,ফটিকছড়ি ও রাউজান উপজেলার বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হচ্ছে রাক্ষুসী পিরানহা মাছ। ২০০৭ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে সরকার এই মাছ ক্রয় বিক্রয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলে ও এক শ্রেণীর অসাধু ব্যাবসায়ী এ সব মাছ বাজারে বিক্রি করছে। সরকারী ভাবে মাছটি নিষেধাজ্ঞা থাকার সত্ত্বেও চায়না রুপচান্দা / থাই রুপচান্দা মাছ হিসেবে এটি বাজারে বিক্রি করছে ব্যাবসায়ীরা।
সূত্রে প্রকাশ, পিরানহা মাছটি কাপ্তাই হ্রদেও ছড়িয়ে পড়েছে। তাই ব্যবসায়ীরা মাছটি নিষিদ্ধ হলে ও কম দামে ক্রয় করে উত্তর চট্টগ্রামের তিনটি উপজেলার আড়তের মাধ্যামে বিভিন্ন বাজারে মাছটি বিক্রি করছে। হাটহাজারীসহ পার্শ্ববতী উল্লেখিত উপজেলার গ্রামের বিভিন্ন পুকুরে মাছটি চাষ হচ্ছে বলে জানা গেছে। মাছটি চাষ বন্ধ না হলে দেশের জাতীয় মাছ গুলো বিলুপ্ত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মতে এ মাছ হালদায় বিস্তিত হলে হালদার প্রায় ৭০ জাতীয় মাছ ধ্বংশ হয়ে যাবে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় হাটহাজারী,ফটিকছড়ি ও রাউজান উপজেলার প্রায় সবকটি বাজারের এই মাছ দেখা যায়। নাম প্রকাশ না করার সত্ত্বে জনৈক মাছ ব্যবসায়ী বলেন,আসলে এটা কি মাছ জনসাধারণ তা জানেনা। যেখানে ১ কেজি রুপচান্দা মাছের দাম ৪০০-৫০০টাকা সেখানে ১ কেজি পিরানহা মাছের দাম ১০০ থেকে ১২০ টাকা। তাই ব্যবসায়ীরা চায়না রুপচান্দা / থাই রুপচান্দা বলে এটিকে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে থাকে। কিন্তু এই মাছের ক্ষতিকর দিক সর্ম্পকে কেউ জানেনা। আর সরকারী কার্যকরী কোন উদ্যোগ না থাকার কারণে আইন থাকলেও কেউ মানছেনা। অনেকে আবার অজ্ঞতার কারণে এই মাছটি কিনছে বা বিক্রি করছে। বাংলাদেশে ২০০২ সালে খুলনার একটি হ্যাচারীতে সর্বপ্রথম এই দেখা যায়। এটির জন্মস্থান দক্ষিন আমেরিকার আমাজন উপত্যাকা,গায়না, প্যারাগুয়ে এবং যুক্তরাষ্টের সানফ্রান্সিসকোর নদীগুলো। আমাদের দেশে একুইরিয়ামের মাছের সাথে আসে। কোন আমদানী পন্য আসতে হলে সংশ্লিষ্ট বিভাগের অনুমতি প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের দেশে কিভাবে একুইরিয়ামের সাথে আসল তা বিজ্ঞ জনের বোধগম্য নয়। চেনার উপায় হলো এই মাছের চোয়ালে শক্ত দাঁত থাকে। নিচের চোয়ালে শক্ত বড় দুটি দাঁত এবং দুই পাশের চোয়ালের শেষ দিকে করাতের মত দুটি দাঁত থাকে। এই দাঁতগুলো খুবই ধারালো। এরা সাধারনত ঝাঁক বেধে চলাচল করে। ১০০টি পিরানহা মাছের ঝাঁকে যদি একটা মানুষ পড়ে তাহলে মানুষ কাবু হয়ে যাবে। অনেক জায়গায় পানিতে নামা মানুষ পিরানহার আক্রমনে আহত হয়েছে। এটি সাধারনত ৬-১০ ইঞ্চি লম্বা হয়ে থাকে। চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের মনজুরুল কিবরিয়া বলেন মাছটি ভয়ানক পুকুরে মাছটি চাষ করলে সে পুকুরে অন্য কোনো প্রজাতির মাছ বিস্তার হবে না। বাংলাদেশ বণ্যাপ্রবন এলাকা । এখানে বন্যার পানিতে এক জায়গার মাছ সহজে অন্য জায়গা যেতে পরে তাই যদি এই মাছ যদি মিঠাপানির পুকুর লজাশয়, নদী, হাওড বাওড় এ প্রবেশ করে তাহলে অন্য প্রজাতি ধংস বা বিলুপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে হালদা নদীতে যদি এই মাছ প্রবেশ করতে পারে তাহলে পোনা মাছ ও ডিম গুলো খেয়ে ফেলবে। তাই অভিলম্বে এই মাছের ব্যাপারে জনসচেতনতা সৃষ্টি ও অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেন বিশেষজ্ঞ মহল।
ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/মোহাম্মদ হোসেন/হাটহাজারী