ঢাকা: নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেতা, মন্ত্রী -প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারবেন না- এমন বাধ্যকতা রেখে নির্বাচনী আচরণবিধির খসড়া প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন।

বুধবার দুপুরে নির্বাচন কমিশনে আচরণবিধির খসড়া প্রকাশ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ জানান, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনের গেজেট হওয়া পর্যন্ত সময়ের মধ্যে সরকার কেবল রুটিন কাজ করবে।

কোনো নীতি নির্ধারণী বা সুদূরপ্রসারী সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। আর প্রশাসনে কোনো ধরনের পরিবর্তন বা রদবদল আনতে হলে সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের পরামর্শ নিতে হবে।

আচরণবিধির কিছু কিছু জায়গায় পরিবর্তন আনা হয়েছে উল্লেখ করে সিইসি বলেন, বর্তমানে যে আচরণবিধিটি আছে, সেটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের  আদলে তৈরি। কিন্তু বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের উপযোগী করে আচরণবিধি পরিবর্তন করা হয়েছে।

আরচণবিধির এই খসড়া ওয়েবসাইটে দেয়া হবে জানিয়ে সিইসি বলেন, ইন্টারনেটে আপলোড করার পরে দেশে-বিদেশের যেকোনো নাগরিক এই আচরণবিধির ওপর তার মতামত জানাতে পারবেন। এজন্য তাদের সাতদিন সময় দেয়া হবে।

আর সবার মতামত পাওয়ার পর আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং (যাচাই-বাছাই) শেষে চূড়ান্ত আচরণবিধি অনুমোদন করা হবে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, মন্ত্রীরা সরকারি সুযোগ সুবিধা নিয়ে নির্বাচনী প্রচার বা অন্য কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে পারবেন না। তবে মন্ত্রীরা নিজের এলাকার বাইরে অন্য কোনো আসনে গিয়ে নির্বাচনী প্রচার চালাতে পারলেও সেখানে সরকারি সুযোগ সুবিধা ব্যবহার করতে পারবেন না।

এদিকে নির্বাচনে তফসিল ঠিক কবে ঘোষণা করা হবে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে রকিবউদ্দীন আহমদ বলেন, আমরা সঠিক সময়ে তফসিল ঘোষণা করবো এবং সবাইকে পর্যাপ্ত সময় দেব।

সিইসি বলেন, জাতি একটা জটিল সময় পার করছে। তাই সবাই যাতে নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য জন্য পর্যাপ্ত সময় পান নির্বাচনী মাঠ যাতে সবার জন্য সমান হয়, সে ব্যাপারে কমিশন সচেষ্ট থাকবে।’

এদিকে নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহের দিকে তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। আর সেক্ষেত্রে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে অথবা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভোট গ্রহণ হবে।

সিইসি বলেন, ৪০ থেকে ৪৫ দিন হাতে রেখে ২৪ জানুয়ারির মধ্যেই নির্বাচন হবে। কমিশন মনে করছে, জানুয়ারির প্রথমার্ধ্বই দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত সময়।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ইতিমধ্যে আসনভিত্তিক ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। ভোটকেন্দ্রের তালিকা চূড়ান্ত করা এবং ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের নিয়োগের কাজও এগিয়ে চলছে।

মনোনয়ন ফরমসহ বেশির ভাগ ফরম ছাপার আদেশ কয়েক সপ্তাহ আগেই দেয়া হয়েছে। নতুন করে ৪০ হাজার স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স আমদানির কাজও শেষ হয়েছে।

সবশেষ ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট নেয়া হলেও ওই নির্বাচন হবার কথা ছিল ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে।

কিন্তু রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে সেনানিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা যাওয়ার পর দুই বছর ভোট হয়নি। সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে নবম সংসদ নির্বাচনের জন্য এম এ আজিজ  কমিশন পাঁচবার তফসিল পরিবর্তন করে। পরে ড. এটিএম শামসুল হুদার কমিশনও তিনবার তফসিল পরিবর্তন করে।

দশম সংসদ নির্বাচনও জানুয়ারির প্রথমার্ধে করার পরিকল্পনা নিয়ে কমিশন এগোলেও দলীয় বা সর্বদলীয় কোনো ধরনের সরকারের অধীনে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচন যাবে না বলে ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া।

ফলে জানুয়ারির প্রথমার্থে নির্বাচনের তারিখ ঠিক করে তফসিল ঘোষণা হলেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সঠিক হবে কি না-তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।

এদিকে নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি নিয়ে সরকারি ও বিরোধী জোটের বিপরীতমুখী অবস্থানে রাজনৈতিক অস্থিরতা চললেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আগামী ১০ নভেম্বর থেকে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ে মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করবে বলে জানা গেছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here