বাংলা প্রেস, নিউ ইয়র্ক থেকে :: একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্যের জন্য খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করার দাবি জানিয়েছেন নিউ ইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশিরা। স্থানীয় সময় শুক্রবার সন্ধ্যায় নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের একটি রেস্তোরাঁয় মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ দাবি জানান হয়।
সাংবাদিক সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিতর্কিত বক্তব্যের জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. প্রদীপ রঞ্জন কর বলেন, ‘স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্কের অবতারণা করার পেছনে পাকিস্তানের প্ররোচনা রয়েছে। তিনি শুধু শহীদদের সংখ্যা নিয়েই নয়, প্রশ্ন তুলেছেন আওয়ামী লীগের ভূমিকা নিয়ে। অথচ মুক্তিযুদ্ধে দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের ভূমিকা ইতিহাস স্বীকৃত।’ ড. প্রদীপ কর বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে একাধিক গবেষণায় প্রমাণিত যে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখেরও বেশি শহীদ হয়েছেন। এ নিয়ে বিতর্কের কোনো অবকাশ নেই।’
ড. প্রদীপ আরও বলেন, ‘দুই যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি কার্যকরের পর বাঙালী যখন বিজয়ের মাস উদযাপন করছে, দেশে যখন স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতে ইসলামির রাজনীতি নিষিদ্ধের পথে, দেশে যখন একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের দায়ে পাকিস্তানি ১৯৫জন সেনা অফিসারকে বিচারের দাবি সামনে আসছে, তখন জামায়াতের পুরনো বক্তব্য নিয়ে নতুন করে হাজির হয়েছেন খালেদা জিয়া।’ তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘ সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে সেই দেশে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্য বন্ধে আইন থাকা বাঞ্ছনীয়। যারা মুক্তিযুদ্ধ ও শহীদদের বিরুদ্ধে কথা বলবে এবং যারা গণহত্যার বিরুদ্ধে কথা বলবে, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইন করা প্রয়োজন।’ তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আইন প্রণয়নের উদারহণ দিয়ে বলেন, ‘বিভিন্ন দেশে গণহত্যা হয়েছে। এসব গণহত্যা অস্বীকার বা সন্দেহ প্রকাশ করলে ‘হলোকাস্ট ডিনায়েল’ আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।’
সাংবাদিক সম্মেলনে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়েরসহ বিভিন্ন প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, হলোকাস্ট আইনের আলোকেই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ অবমাননার রদ আইন প্রণয়ন, পাক হানাদার আইনের আলোকে ১৯৫জন চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীকে বিচারের আওতায় আনা, পাকিস্তানের সঙ্গে সব ধরনের কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করা, একাত্তরে গণহত্যার অপরাধের দায়ে দোষি হিসাবে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন থেকে পাকিস্তানকে বহিস্কার এবং পাকিস্তানের কাছে ন্যায্য হিসাব পাওনার অর্থ ফিরিয়ে দাবি জানানো হয়।
সাংবাদিক সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন ড. প্রদীপ রঞ্জন কর, সাংবাদিক মুজাহিদ আনসারী, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট উত্তর আমেরিকার সভাপতি মিথুন আহমেদ প্রমূখ।
বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা খান মিরাজ, খুরশীদ আনোয়ার বাবলু, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ যুক্তরাষ্ট্র কমান্ডের আহ্বায়ক ডা. এম এ বাতেন, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি যুক্তরাষ্ট্রের সভাপতি ফাহিম রেজা নূর ও সাধারণ সম্পাদক স্বীকৃতি বডুয়া, এবিসিডিআই সভাপতি আলী হোসেন কিবরিয়া অনু, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা সাখাওয়াত বিশ্বাস, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের উপ-দফতর সম্পাদক আব্দুল মালেক, যুবলীগ নেতা তারিকুল হায়দার চৌধুরী, নূর-ই- আজম বাবু, নারী নেত্রী মোর্শেদা জামান, জলি কর এ সময় উপস্থিত ছিলেন।