ইমা এলিস/ বাংলা প্রেস, নিউ ইয়র্ক ::
নিউ ইয়র্কের বাংলাদেশি অধ্যুষিত জ্যাকসন হাইটসের রাস্তার নাম ‘বাংলাদেশ স্ট্রিট’  নির্ধারন করে দিয়েছিলেন জ্যাকসন হাইটস বাংলাদেশি বিজনেস অ্যাসোসিয়েশন (জেবিবিএ)-এর সাধারন সম্পাদক ফাহাদ সোলায়মান। স্থানীয় সময় রোববার তিনি সরাসরি ফেসবুক লাইভে এ কথা জানিয়েছেন। প্রায় ১০/১২ বছর আগে এ ব্যাপারে যারা উদ্যোগ নিয়েছিলেন শেষে তারা ব্যর্থ হন। বর্তমান জেবিবিএ নতুন করে উদ্যোগ নেন এবং ‘বাংলাদেশ স্ট্রিট’ নামকরণটি তিনিই নির্ধারন করে দেন বলে ফেসবুক লাইভে জানান। এ খবর জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম বাংলা প্রেস।
নিউ ইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশিদের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে কাউন্সিলদের সাধারন সভায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণের উদ্যোগ নিলে পরে ৪৭-০ ভোটে তা পাশ হয়। এখন থেকে জ্যাকসন হাইটসের ৩৭ এভিনিউয়ের ৭৩ স্ট্রিটের নাম হবে ‘বাংলাদেশ স্ট্রিট’ । বিলটির সিদ্ধান্ত নম্বর হলো-আইএনটি ৮৯৭।
নিউ ইয়র্কের বাংলাদেশি অধুষ্যিত জ্যাকসন হাইটসে ‘বাংলাদেশ’ নামে সড়ক করার জোর তৎপরতা চালান জ্যাকসন হাইটস বাংলাদেশি বিজনেস অ্যাসোসিয়েশন (জেবিবিএ)এর সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারা। জেবিবিএ’র বর্তমান সভাপতি হারুন ভুঁইয়া ও সাধারন সম্পাদক ফাহাদ সোলায়মান জ্যাকসন হাইটস ও এলমহার্স্ট এলাকার নব নির্বাচিত সিটি কাউন্সিলম্যান উপমহাদেশীয় বংশোদ্ভুদ শেকার কৃষ্ণানকে গত বছরের জুলাই মাস থেকে কয়েক দফায় তাগিদ দেন।
উল্লেখ্য, গত বছর জুলাই মাসে উক্ত জ্যাকসন হাইটস বাংলাদেশি বিজনেস অ্যাসোসিয়েশন (জেবিবিএ)এর সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারা। জেবিবিএ’র বর্তমান সভাপতি হারুন ভুঁইয়া ও সাধারন সম্পাদক ফাহাদ সোলায়মান নিউ ইয়র্ক সিটি’র কর্মকর্তাদের কাছে প্রস্তাব পাঠায়। তাদের দেওয়া তাগিদের ফলেই প্রস্তাবটি পাস করানোর চেষ্টা চালান সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলম্যানরা।
কাউন্সিলম্যান শেকার কৃষ্ণান, মেয়র এরিক এডামস, বরো প্রেসিডেন্ট ডনোভান রিচার্ডস গত নির্বাচনের আগেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তারা জয়ী হলে এই নামকরণ বাস্তবায়ন করবেন। কিন্তু শেকার কৃষ্ণানের আন্তরিকতায় এবং জ্যাকসন হাইটসের নেতৃবৃন্দের দাবিতে ও সহায়তায় প্রায় ৬ মাসের প্রস্তুতিতে ‘বাংলাদেশ স্ট্রিট’ নামকরণের সিদ্ধান্তটি পাশ করা হয়।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার ১৬ ফেব্রুয়ারি বিকেল আড়াইটার দিকে নিউ ইয়র্ক সিটির ১২৯টি স্ট্রিটের পুণঃনামকরণের বিলটি সভায় আলোচনায় আসে। এক এক করে ১২৯টি স্ট্রিটের নতুন নামকরণের প্রস্তাব শোনানো হয়। পাঁচ বরোতেই নতুন নামকরণ করা হয়েছে বিভিন্ন স্ট্রিটের বা এভিনিউয়ের। এইসব নামকরণ করা হয়েছে বিভিন্ন কম্যুনিটির নিজ দেশের বা বিশিষ্ট ব্যক্তির নামে। নিউ ইয়র্ক সিটিতে বাংলাদেশি ইমিগ্রান্টদের সবচেয়ে বড় ব্যবসাকেন্দ্র ও সাংস্কৃতিক প্রাণকেন্দ্র জ্যাকসন হাইটসের ৭৩ স্ট্রিটের এক ব্লকের নামকরণ করা হলো ‘বাংলাদেশ স্ট্রিট’। এছাড়াও বাংলাদেশ কম্যুনিটির বিশিষ্ট একটিভিস্ট, শিক্ষক ও লেখক লিজি রহমানের পুত্রের নামে এলমহার্স্টের কুইন্স বুলোভার্ডে ৫৫ রোডের কর্ণারে নামকরণ করা হলো আসিফ রহমান ওয়ে। আসিফ রহমান ২০০৮ সালে ২৮ ফেব্রুয়ারি সাইকেল চালিয়ে কাজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে কুইন্স বুলোভার্ডে ৫৫ রোডের কাছে ট্রাক ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন। এই রাস্তাটিরও নামকরণ করা হলো কাউন্সিলম্যান শেকার কৃষ্ণানের উদ্যোগেই।
এদিকে শুনানিতে যেমন এই ১২৯টি রাস্তার তালিকায় কুইন্স বরোতে ‘লিটল বাংলাদেশ ওয়ে’ নামে একটি রাস্তার নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল, পাশ হওয়া বিলেও সেই নামটি রয়ে গেছে। কিন্তু কোন কাউন্সিলম্যানের প্রস্তাবে কোন এলাকায় কোন রাস্তার নাম লিটল বাংলাদেশ ওয়ে হলো তা জানা যায়নি।
কাউন্সিলম্যান শেকার কৃষ্ণান নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলের পার্ক কমিটির চেয়ার। আর স্ট্রিটের পুণঃনামকরণ করার দায়িত্বটিও পার্ক কমিটির। সে কারণে নির্বাচিত হওয়ার ৬ মাস পর থেকেই তিনি ৭৩ স্ট্রিটের নাম বাংলাদেশ স্ট্রিট এবং ৫৫ রোডের নাম আসিফ রহমান ওয়ে রাখার লক্ষ্যে প্রস্তাবনা তৈরি শুরু করেন। এর জন্য কেন ৭৩ স্ট্রিটের নাম ‘বাংলাদেশ স্ট্রিট’ করতে হবে তার পক্ষে যুক্তি দাঁড় করান। অবশেষে পার্ক কমিটি তার প্রস্তাবনা মেনে নেয় এবং শুনানিতে তোলে। ৩১ জানুয়ারি শুনানিতে তা গৃহীত হলে ১৬ ফেব্রুয়ারি তা ফুল কাউন্সিলে ৪৭-০ ভোটে পাশ হয়। এসময় কাউন্সিলম্যান শেকার কৃষ্ণান সিটি কাউন্সিল চেম্বারে ৭৩ স্ট্রিটকে বাংলাদেশ স্ট্রিট ও ৫৫ রোডকে আসিফ রহমান ওয়ে ঘোষণার পক্ষে চমৎকার দুটি বক্তব্য রাখেন।
বক্তব্যে তিনি বলেন, বাংলাদেশ স্ট্রিট নামকরণ করার মধ্য দিয়ে আমরা বাংলাদেশি কম্যুনিটিকে সম্মাননা জানাচ্ছি। তারা এই এলাকার উন্নয়নে যে অবদান রেখে চলেছেন, তা নিউ ইয়র্ক সিটির উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। কারণ জ্যাকসন হাইটস বাংলাদেশ কম্যুনিটির হার্ট। তারা এই এলাকাকে ব্যবসা বিস্তারের পাশাপাশি তাদের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে প্রাণবন্ত করে রাখছেন। আমি অত্যন্ত আনন্দের সাথে জানাতে চাই যে, বাংলাদেশিরা আমার কাউন্সিল ডিস্ট্রিক্টকে শক্তিশালী করে তুলছে। বাংলাদেশি কম্যুনিটির নেতৃবৃন্দ অত্যন্ত ভদ্র ও মেধাবী বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
কাউন্সিলম্যান শেকার কৃষ্ণান এরপরপরই আসিফ রহমান ওয়ের নাম ঘোষণা করে বলেন, এই তরুণ মাত্র ২২ বছর বয়সে ২০০৮ সালে অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে মৃত্যুবরণ করে। কুইন্স বুলোভার্ডে তাকে আঘাত করে একটি ফ্রেইট ট্রাক।
তিনি বলেন, আসিফ রহমান বাংলাদেশি ইমিগ্রান্ট। সে কুইন্স কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন করে। তার ট্রাজিক মৃত্যু তার মা লিজি রহমানকে কুইন্স বুলোভার্ডকে নিরাপদ করার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্বুদ্ধ করে। ফলে ১০ হাজার মানুষ পিটিশনে সাইন করেন, অনেক ওয়ার্কশপ আয়োজিত হয়, যা কুইন্স বুলোভার্ডকে নিউইয়র্ক সিটির সবচেয়ে নিরাপদ স্ট্রিটে পরিণত করে। একসময় কুইন্স বুলোভার্ডের দুর্নাম ছিল ‘ডেথ বুলোভার্ড’ নামে। অনেকের মত আসিফের মা লিজি রহমানের এই উদ্যোগের প্রতি সম্মান জানিয়ে আজ আমি আসিফ রহমান ওয়ে নাম ঘোষণা করছি। আমি মনে করি আসিফ রহমানের জীবন দান এবং লিজি রহমানের অবদান দীর্ঘদিন মানুষ মনে রাখবে।
বিলটি পাশের পরদিন শুক্রবার কাউন্সিলম্যান শেকার কৃষ্ণান বাংলাদেশ স্ট্রিট নামকরণে তাকে সহযোগিতা করার জন্য জেবিবিএ’র কর্মকর্তাসহ জ্যাকসন হাইটসের সকল প্রবাসী ব্যবসায়ীদের ধন্যবাদ জানান।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here