ইমা এলিস/ বাংলা প্রেস, নিউ ইয়র্ক ::

নিউ ইয়র্কে দু’টি এলাকায় লিটল বাংলাদেশ এভিনিউ নামকরণের পর এবার ‘বাংলাদেশ স্ট্রিট’ নামে একটি রাস্তার নামকরণের প্রস্তাব উঠেছে। জ্যাকসন হাইটসের বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের প্রাণকেন্দ্র ৭৩ স্ট্রিটটি ‘বাংলাদেশ স্ট্রিট’ করার সকল প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। সিটি কাউন্সিল মেম্বার (ডিস্ট্রিক্ট ২৫) শেখর কৃষ্ণান ৩১ জানুয়ারি মঙ্গলবার সিটি কাউন্সিলের কমিটি অন পার্কসের শুনানিতে এই প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন। তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন সঙ্গে বাংলাদেশি কমিউনিটির দীর্ঘদিনের প্রত্যাশাও পূরণ হবে। এ খবর জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম বাংলা প্রেস।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের বাংলাদেশি অধুষ্যিত জ্যাকসন হাইটসে ‘বাংলাদেশ’ নামে একটি সড়ক করার জোর তৎপরতা চালান হারুন-ফাহাদের নেতৃত্বাধীন জ্যাকসন হাইটস বাংলাদেশি বিজনেস অ্যাসোসিয়েশন (জেবিবিএ)। গত বছর জুলাই মাসে উক্ত সংগঠনের কর্মকর্তারা নিউ ইয়র্ক সিটি’র কর্মকর্তাদের কাছে প্রস্তাব পাঠায়। প্রস্তাবটি পাস করানোর চেষ্টা করছেন সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলম্যানরা।

গত ৩১ জানুয়ারি মঙ্গলবার নিউ ইয়র্ক সিটির পাঁচটি বরোর ১২৯টি রাস্তার নাম বিভিন্ন দেশ, এলাকা ও ব্যক্তির নামে স্মারক নামকরণ করার পক্ষে কমিটি অন পার্কসের কমিটিতে শুনানি হয়। নিজ নিজ ডিস্ট্রিক্টের কাউন্সিল সদস্যরা এইসব নাম প্রস্তাব করেন। এই শুনানি শেষ হয়েছে। এখন হবে ভোটাভুটি। তারপর বিলটি সিটি কাউন্সিলে পাস হবে।

কমিটি অন পার্কস এন্ড রিক্রিয়েশনের শুনানিতে এই কমিটির চেয়ার জ্যাকসন হাইটস থেকে নির্বাচিত সিটি কাউন্সিল মেম্বার শেখর কৃষ্ণান শুরুতেই দুটি রাস্তার পুনঃনামকরণের কথা উল্লেখ করেন। একটি বাংলাদেশ স্ট্রিট ও একটি আসিফ রহমান ওয়ে।
কাউন্সিল মেম্বার শেখর তার বক্তব্যের শুরুতেই নিউ ইয়র্কের বাংলাদেশিদের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, জ্যাকসন হাইটসের সেভেন্টি থার্ড স্ট্রিট বাংলাদেশি কমিউনিটির ‘হার্ট এন্ড সৌল’। আমি বলতে চাই, শুধু জ্যাকসন হাইটস নয়, পুরো নিউ ইয়র্ক সিটিকে তারা তাদের অন্তর দিয়ে ভালবাসেন। আমি বাংলাদেশ কমিউনিটির প্রতি গভীর সম্মান প্রদর্শন করে সেভেন্টি থার্ড স্ট্রিটের নামকরণ বাংলাদেশ স্ট্রিট করার প্রস্তাব করছি। এই নামকরণের মধ্য দিয়ে আমি জ্যাকসন হাইটসের উন্নয়নে বাংলাদেশিদের বিশাল অবদানের স্বীকৃতি জানাচ্ছি।

শেখর কৃষ্ণান বলেন, এই জ্যাকসন হাইটসেই রয়েছে বাংলাদেশিদের বিশাল ক্ষুদ্র ব্যবসা। তারা এই ব্যবসার মধ্য দিয়ে অনবদ্য করে তুলেছেন এই এলাকাকে। তাছাড়া সারা বছর ধরে বাংলাদেশিরা এই এলাকা তাদের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি পরিবেশনের মধ্য দিয়ে প্রাণবন্ত করে রাখেন।

কাউন্সিলম্যান কৃষ্ণান এর পরপরই প্রস্তাব করেন কুইন্স বুলেভার্ডে যেখানে কুইন্স কলেজের মেধাবী ছাত্র আসিফ রহমান সাইকেল চালিয়ে যাওয়ার সময় ট্রাকের ধাক্কায় অত্যন্ত মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারান, তার নামে দুর্ঘটনাস্থলের নিকটস্থ রাস্তার নাম ‘আসিফ রহমান ওয়ে’ রাখার।

শেখর কৃষ্ণান বলেন, আসিফ রহমানের মৃত্যুর পর তার মা লিজি রহমান আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন কুইন্স বুলেভার্ডকে নিরাপদ করার জন্য। তার জন্যই পুরো কুইন্স বুলেভার্ড, এতদিন যাকে বলা হতো ডেথ বুলোভার্ড, তা আজ অনেক নিরাপদ। তিনি বলেন, আমরা সবসময় আসিফের কথা মনে রাখব। বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত কিশোর আসিফ রহমান সাইকেল চালিয়ে যাওয়ার পথে ৫৫ এভিনিউর কাছে ট্রাকের চাপায় প্রাণ হারান, সেই রাস্তার নাম ‘আসিফ রহমান ওয়ে’ রাখার প্রস্তাব করেন। নিহত আসিফ রহমান প্রবাসী লেখক এবং শিক্ষক লিজি রহমানের পুত্র।

উল্লেখ্য, নিউ ইয়র্কের ব্রংক্সে পার্কচেস্টারে ইউনিয়ন পোর্ট রোড ও স্টার্লিং এভিনিউর কর্ণারটিকে নতুন শতাব্দীর শুরুতেই বাংলাবাজার ওয়ে নামকরণের মধ্য দিয়ে নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশ বা বাংলা শব্দটি আসে স্ট্রিটের সাইনে। এরপর গত বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধন হয় জ্যামাইকায় হিলসাইড এভিনিউও হোমলন স্ট্রিটের কর্ণার লিটল বাংলাদেশ এভিনিউ, গত বছর ১৬ অক্টোবর ব্রুকলিনের চার্চ এভিনিউ ও ম্যাকডোনাল্ড এভিনিউর কর্ণারের নতুন নামকরণের স্ট্রিট সাইন উন্মোচন করেন প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত সিটি কাউন্সিল মেম্বার শাহানা হানিফ। তারই প্রস্তাবে এই নামকরণ ‘লিটল বাংলাদেশ’ করা হয়। অপরপক্ষে জ্যামাইকার হিলসাইড এভিনিউর নতুন নাম ‘লিটল বাংলাদেশ’ এভিনিউর সাইন উন্মোচন করেন সিটি কাউন্সিলম্যান জিম জিনারো সস্ত্রীক।

নিউ ইয়র্ক সিটিতে আরো কয়েকটি রাস্তার নাম আছে বাংলাদেশি ইমিগ্রান্টদের নামে। যেমন ওজোন পার্কে মিজানুর রহমান ওয়ে, ব্রুকলিনে শাকিলা ইয়াসমিন ও নূরুল হক মিয়া ওয়ে। শাকিলা ইয়াসমিন এবং নূরুল হক মিয়া টুইন টাওয়ারে কাজ করার সময় ৯/১১’র সন্ত্রাসী আক্রমণে মৃত্যুবরণ করেন।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here