ইমা এলিস/ বাংলা প্রেস, নিউ ইয়র্ক ::
নিউ ইয়র্কের মসজিদগুলোতে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে মাত্র তিন ওয়াক্ত নামাজের সময় মসজিদের সাথে সংযুক্ত মাইকে উচ্চস্বরে আজানের অনুমতি দিয়েছে নিউ ইয়র্ক সিটির পুলিশ ডিপার্টমেন্ট। শুধুমাত্র জোহর, আসর ও মাগরিবের সময় বিভিন্ন মসজিদের উচ্চস্বরে আজান দেওয়া যাবে। তবে ফজর ও এশার নামাজের সময় মসজিদের মাইকে উচ্চস্বরে আজান প্রচার করা যাবে না। কারণ সিটি কোডের ধারা অনুযায়ী সূর্যাস্তের পর থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত শব্দ নিয়ন্ত্রণের আইন রয়েছে। এসময় উচ্চস্বরে শব্দকরা যাবে না। নিউ ইয়র্কের মুসলিম কমিউনিটির দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে উক্ত অনুমতি মিলেছে বলে জানা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাংলা সংবাদমাধ্যম বাংলা প্রেস এ খবর জানিয়েছে।
নিউ ইয়র্ক সিটির পুলিশ প্রশাসনের ডেপুটি কমিশনার মার্ক টি স্ট্যুয়ার্ট গত ২৪ আগস্ট বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত এক পরিপত্রে কমিউনিটি এফেয়ার্সের সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি জানিয়েছেন। পরিপত্রে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র উল্লেখ করে নাগরিকদের ধর্মীয় স্বাধীনতার নিশ্চয়তার কথা স্মরণ করা হয়েছে।
বলা হয়, মুসলিম জনগোষ্ঠী তাদের জীবন যাপনে আজানের মাধ্যমে প্রার্থনায় যোগ দিয়ে থাকেন। আজানের মাধ্যমে প্রার্থনার জন্য আহ্বান জানানো মুসলিম সম্প্রদায়ের জীবনের অংশ। আজানের জন্য দুই থেকে পাঁচ মিনিট সময় লাগে বলে পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে এবং পাঁচ বারের আজানের সময় ও প্রহরের কিছুটা হেরফের হয় বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
নিউ ইয়র্ক সিটির মসজিদে আজান প্রদানের অনুমতি নিশ্চিত করে বলা হয়েছে এ নিয়ে মুসলিম কমিউনিটি যেন প্রতিবেশীদের সাথে আলাপ করেন, সুসম্পর্ক সৃষ্টি করেন। সহনীয় শব্দমাত্রায় আজান প্রচারের জন্যও সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে। এ বিষয়ে সিটির কমিউনিটি এফেয়ার্স সিটিবাসীকে সচেতন করতে কাজ করবে বলেও বলা হয়েছে। সিটির প্রশাসনিক কোড অনুযায়ী শব্দযন্ত্র মসজিদের সাথে সংযুক্ত থাকতে হবে এবং সহনীয় মাত্রার শব্দে তা ব্যবহার করতে হবে। সূর্যাস্তের পর এবং সকাল ৯টার আগে শব্দযন্ত্র ব্যবহার করে আজান দেয়া যাবে না।
নিউইয়র্ক সিটিতে মাইকে আজান দেয়ার অনুমতি হওয়ায় বাংলাদেশিসহ ভিন্ন দেশীয় মুসলমানরা ব্যাপকভাবে উৎফুল্ল। তারা বলছেন, দীর্ঘদিন থেকে এ দাবি আদায়ের জন্য নানা মহল থেকে চেষ্টা করা হচ্ছিল। এ চেষ্টার সাফল্যকে তারা ধর্মীয় ও নাগরিক অধিকারের পক্ষে উল্লেখযোগ্য অর্জন বলে মন্তব্য করছেন।
বাংলাদেশি ছাড়াও নিউ ইয়র্ক সিটিতে বসবাসরত অন্যান্য মুসলিম সম্প্রদায় দীর্ঘদিন থেকে মসজিদে মাইকে আজান দেয়ার অনুমতির জন্য চেষ্টা করে আসছিলেন। তারাও নগর কর্তৃপক্ষের এ সিদ্ধান্তকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
এদিকে, মহানবী (সা.)-এর একটি হাদিসের ভিত্তিতে সৌদি আরব সরকার গত ২০২১ সালে মে মাসে একটি সার্কুলার জারি করেন। সেখানে আজান ও ইকামত ছাড়া মসজিদের মাইক ব্যবহার নিষিদ্ধ করেন সৌদি আরব। ফলে এখন থেকে মসজিদের মাইকে জুমার খুতবা, তারাবিসহ অন্যান্য বিষয় আর প্রচার করা যাবে না। শুধু তাই নয়, মাইকের আওয়াজ সীমিত করারও নির্দেশ দিয়েছে দেশটির সরকার। সৌদির ইসলামবিষয়ক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ আল শেখ উক্ত সার্কুলার জারি করে কয়েকটি নির্দেশনাও দিয়েছেন। তাতে বলা হয়েছে, দেশটির সব মসজিদে মাইকের আওয়াজ এক-তৃতীয়াংশ রাখা এবং আজান ও ইকামত ছাড়া তা ব্যবহার না করা।
শেখ মোহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমীন ও শেখ সালেহ আল ফাওযানের মতো সিনিয়র ইসলামী স্কলারের ফতোয়ার ভিত্তিতে মাইকের ভলিউম আগের চেয়ে এক তৃতীয়াংশে কমিয়ে দেওয়ার জন্যও একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেন। সৌদি ইসলামিক বিষয়ক মন্ত্রী আবদুল লতিফ আল শেখ জানিয়েছেন, রাসুলের (সা.) একটি হাদিসের উপর ভিত্তি করে এই আইনটি চালু করা হয়েছে।
হাদিসটি হচ্ছে, নবী করীম (সা.) বলেন, মনে রেখো, তোমরা প্রত্যেকে নিঃশব্দে পালনকর্তাকে ডাকবে। আল্লাহকে ডাকতে গিয়ে একজন অপরজনকে কষ্ট দেবে না এবং কারো তেলাওয়াত বা প্রার্থনার আওয়াজ যেন অন্যজনের কণ্ঠস্বরের চেয়ে উঁচু না হয়।
নামাজের প্রথম আহ্বান আজান এবং দ্বিতীয় আহ্বানকে ইকামত বলা হয়। ইকামতের অর্থ ইমাম সাহেব জামাতে নামাজের জন্য কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছেন এবং নামাজ শুরু হতে চলেছে।
নামাজের প্রথম আহ্বান আজান এবং দ্বিতীয় আহ্বানকে ইকামত বলা হয়। ইকামতের অর্থ ইমাম সাহেব জামাতে নামাজের জন্য কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছেন এবং নামাজ শুরু হতে চলেছে।
মোহাম্মদ বিন সালেহ আল ওথাইমীন এবং সালেহ আল ফাজওয়ানের মতো জ্যেষ্ঠ ইসলামি চিন্তাবিদদের পরামর্শেই সৌদি আরবে শুধু আজান ও ইকামতের জন্য মসজিদের মাইক ব্যবহারের উক্ত নিয়ম জারি করা হয়।