ইমা এলিস/ বাংলা প্রেস, নিউ ইয়র্ক ::
এবার নিউ ইয়র্কের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উদ্বোধন করা হলো বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান তরুণ শিল্পী জিহান ওয়াজেদের আঁকা মূর্যাল। এর আগে নিউ ইয়র্কের বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থানে মূর্যাল এঁকে মূলধারার শিল্পকর্মে নিজের অবস্থান সংহত করার পাশাপাশি বেশ সুনাম কুঁড়িয়েছেন। বিমান বন্দরটির ফোর্থ টার্মিনালে আঁকা জিহানের মূর্যালটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ছিলো গত ২৬ জানুয়ারি সকালে।
টার্মিনালের অফিস ভবনের চারতলার মিলনায়তনে ফিতা কেটে মুর্যালটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন জেএফকে এয়ারপোর্ট এবং নিউইয়র্ক-নিউজার্সি পোর্ট অথরিটির শীর্ষ কর্মকর্তাবৃন্দ।
বিমান বন্দরের সিনিয়র ম্যানেজার কাস্টমার এক্সপেরিয়েন্স-জুলিয়া মরিসের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেন জেএফকে আইএটি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রোয়েল হাইনিক, জেএফকে এয়ারপোর্টের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার জন এরানসিও, আউটরিচ এন্ড রিডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার র্যাচেল অ্যান্টেনিও, ক্র্যাডল মিউজিয়ামের প্রেসিডেন্ট এন্ড্রো পারটন, ফোর্থ টার্মিনালের ফটোগ্রাফার শোভম সিং, জেএফকে এয়ারপোর্টের এ্যাসিসট্যান্ট প্রজেক্ট ম্যানেজার এডিলসন নুরেনা, জেএফকে আইএটি এয়ারসাইড ম্যানেজার ম্যারি ডিক্সন ও ব্রঙ্কস জো’র প্রধান সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা।
ফিতা কাটার পূর্বে কর্মকর্তাগণ ও জিহান ওয়াজেদ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে ফুলের তোড়া দিয়ে অভিনন্দিত করা হয় তাকে। কর্মকর্তাগণ জিহানের শিল্পকর্মের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
তারা বলেন, জিহানের আঁকা মূর্যাল জেএফকে বিমানবন্দরের চতুর্থ টার্মিনালের সৌন্দর্য্য বহুগুনে বৃদ্ধি করেছে। বক্তাগণ বলেন, চতুর্থ টার্মিনালের আর্টকালচার কার্যক্রমের অন্যতম নিদর্শন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে জিহানের চিত্রকর্মটি। এই মুর্যাল প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রীর দৃষ্টি কাড়ছে বলে মন্তব্য করেন তারা।
বক্তাগণ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ৬ষ্ঠ ব্যস্ততম এই বিমানবন্দরটি ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও পরবর্তী ৩৫তম প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির নামে নামকরণ করা হয়েছে। নিউইয়র্ক সিটির কুইন্স কাউন্টিতে অবস্থিত বিমান বন্দরটিতে জিহানের আঁকা মূর্যালে স্থান পেয়েছে স্থানীয় ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো। যাত্রীদের মানসিক সন্তষ্টির জন্য জেএফকে কর্র্তৃপক্ষ এধরণের আরো শিল্পকর্মের সংযোজন করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন কর্মকর্তাগণ। অনুষ্ঠানে জিহান ওয়াজেদ তার বক্তব্যে জেএফকে এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান তাকে গুরুত্বপূর্ণ ও বৃহৎ স্থাপনায় মূর্যাল আঁকার সুযোগ করে দেয়ার জন্য।
প্রথম পর্বের আনুষ্ঠানিকতা শেষে ফোর্থ টার্মিনালের বিভিন্ন শিল্পকর্ম পরিদর্শন করেন অতিথিগণ। চতুর্থ টার্মিনালের অভ্যন্তরে ডেলটা এয়ারলাইন্স এরিয়ায় জিহান ওয়াজেদে’র মুর্যালটি স্থাপিত হয়েছে। মুর্যালের পাশে জিহানের ছবি ও সংক্ষিপ্ত জীবন বৃত্তান্ত শোভা পাচ্ছে। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের কোনো আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত কোনো শিল্পীর আঁকা এটিই প্রথম শিল্পকর্ম।
জিহানের শিল্প কর্মের মধ্যে নিউইয়র্ক সিটি হেলথ এন্ড হসপিটাল বিভাগের কুইন্স হাসপাতালে বারো’শ পঞ্চাশ বর্গফুটের বিশালকায় ‘রুটস অফ মেডিসিন’ ম্যুরাল, নিউইয়র্ক সিটির এস্টোরিয়ার ই্স্ট রিভার তীরে ‘এ সিটি ইন মোশন’ নামে একটি ম্যুরাল এঁকেছেন জিহান। হল্টারস পয়েন্ট মেগা ডেভেলপমেন্টে ৭৫০ ফুটের এই ম্যুরালটির স্থিরচিত্র সচল হয়ে উঠে মোবাইল অ্যাপসে। আকর্ষনীয় ভিন্নমাত্রিক আঙ্গিকে আঁকা দৃষ্টিন্দন মুর্যালটি ব্যাপকভাবে আলোচনায় এসেছে।
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত টিভি চ্যানেল সিবিএস মূর্যালটি নিয়ে জিহান ওয়াজেদের একটি সাক্ষাতকার প্রচার করেছে। এছাড়া ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ভবন, নিউইয়র্ক ইন্টারন্যাশনাল স্পোর্টস কমপ্লেক্স, বিলি জিন কিং ন্যাশনাল টেনিস সেন্টার, এস্টোরিয়ায় ১৭৭ ফিট দীর্ঘ ম্যুরাল ‘ওয়েলকাম এস্টোরিয়া’ মুর্যাল এবং সিটিতে বাংলাদেশিদের প্রাণকেন্দ্র জ্যাকসন হাইটসের ডাইভারসিটি প্লাজায় ‘বাংলাদেশ ম্যুরাল’ অন্যতম।
শিল্পী জিহান ওয়াজেদ নিউ ইয়র্ক থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক বাংলাদেশ সম্পাদক ডাঃ ওয়াজেদ খান ও মা পারভীন আকতারের ছেলে।