আমার বাপধনকে যারা হত্যা করেছে, তাদের যেন ফাঁসি হয়, কতদিন আমারে আদর কইরা চুমু দিস না’ তার কথা মনে কইরা এখনো আমি ঘুমাইতে পারি না। কতদিন আমারে মা কইয়া ডাকস না’ একমাত্র সন্তান হারিয়ে পাগলপ্রায় মাসুমা বেগম। বেস্টনিউজ ডটকমের এ প্রতিবেদকের কাছে কাতরকণ্ঠে ছেলে হারানোর ঘটনা  বলছিলেন তিনি।

ছেলের নাম জিহাদ। তখন তার বয়স ছিল ৪। এখন বেঁচে থাকলে বয়স হতো ৫। ২০১১ সালের ২৬ জুন তাকে অপহরণ করা হয়। ২৭ জুন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেওয়া হয় তাকে। ২৯ জুন তার লাশ উদ্ধার করা হয়। জিহাদের বাবা আকতার হোসেন সিঙ্গাপুর প্রবাসী। তাদের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লা থানার ধর্মগঞ্জ বেপারীপাড়ায়।

পাগলের মতো হয়ে জিহাদের মা মাসুমা বেগম বলেন, ৭ মাস হলো জিহাদ আমার হারিয়ে গেছে। কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানিও শেষ হয়ে গেছে। এখন আর কাঁদতে পারি না!

জিহাদের নানি খোরশেদা বেগম ও দাদি মাবিয়া খাতুন। নাতি হারানোর শোকের কথা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, বাড়িটা এখন খাঁ খাঁ করে! জিহাদ থাকতে বাড়িটার মধ্যে আলো জ্বলতো। এখন কেবলই অন্ধকার!

জিহাদের যাপিত জীবনের কথা ভুলতে পারেন না মাসুমা বেগম। ছেলের প্রাত্যহিক জীবনের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, খাওয়ার সময় জিহাদের কথা মনে উঠলে চোখের জল আটকে রাখতে পারি না। কিছু খেতে পারি না! জিহাদের মা জানান, তার জিহাদ এই ছোট বেলাই ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের চেষ্টা করতো। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় সবাইকে সালাম দিতো। একমাত্র ছেলে নিহত হওয়ার খবর শুনে বাবা আকতার হোসেন এসেছিলেন দেশে। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে আবার চলে গেছেন সিঙ্গাপুরে। ‘আমার প্রাণ জিহাদকে যারা হত্যা করেছে, তাদের যেন ফাঁসি হয়’ এমন দাবি করেন জিহাদের মা।

মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল

গত বছরের ২৬ জুন মুক্তিপণের দাবিতে জিহাদকে অপহরণ করে ২৭ জুন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেওয়ার পর ২৮ জুন মাসুমা বেগম বাদী ফতুল্লা মডেল থানায় ৭ জনের বিরম্নদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গত বছরের ২৮ জুন র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) ২ দফায় ৭ জনকে গ্রেপ্তার করে। ওই সময়ে মামলার তদনত্মকারী কর্মকর্তা ছিলেন ফতুল্লা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শহীদুল ইসলাম। বর্তমানে তিনি জেলা পুলিশের বিশেষ শাখা ডিবিতে কমরত রয়েছেন।

শহীদুল ইসলাম জানান, জিহাদ হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আটক ৭ আসামির মধ্যে ৪ জন হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

এ ব্যাপারে মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আশরাফুজ্জামান জানান, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা অভিযোপত্র দাখিল করেছেন। বর্তমানে এ মামলা নারায়ণগঞ্জ জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মোহাম্মদ কাদিরের আদালতে বিচারাধীন আছে।

মামলার নথি সূত্রে জানা যায়, ৭ আসামির মধ্যে ইব্রাহিম ওরফে ভুলা বেপারী ও ফতুল্লা থানার ভূঁইগড় এলাকার ওয়াসিম মিয়ার স্ত্রী লাকি আক্তার উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন। এ ছাড়া অপর ৫ আসামি ফতুলস্না থানার ধর্মগঞ্জ বেপারীপাড়া এলাকার কাদের মিয়ার ছেলে সাদেক, ধর্মগঞ্জ চটলার মাঠ এলাকার ইয়াকুব আলীর ছেলে স্বপন, একই এলাকার ইবরাহিম হোসেন ভুলু ওরফে ভুলু বেপারীর ছেলে শাকিল, বরিশাল জেলার গলাচিপা থানার গিলাবাড়ি এলাকার মুসলিম মিয়ার ছেলে মো. সালাম ও ফতুলস্না থানার ভূঁইগড় এলাকার ওয়াসিম মিয়া জেলহাজতে রয়েছেন।

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/মাকসুদুর রহমান কামাল/নারায়ণগঞ্জ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here