ডেস্ক রিপোর্ট :: মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার কয়েন কিনে আবার তা বিক্রি করলে মুনাফা হতে পারে কয়েক কোটি টাকা। এমন লোভ দেখিয়ে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে দেড় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি প্রতারক চক্র। তবে শেষ রক্ষা হয়নি, প্রতারকরা হাতেনাতে ধরা পড়েছে পিবিআইয়ের জালে।
সম্প্রতি এই চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে জব্দ করা হয় ধাতব কয়েন, নগদ টাকাসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম। গতকাল বৃহস্পতিবার পিবিআই সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়ে পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বলেন, পুরোনো ধাতব মুদ্রা টক্কর (এক প্রকার গিরগিটি) এবং সীমান্ত পিলারকে এই প্রতারক চক্রের সদস্যরা মূল্যবান বস্তু হিসেবে উপস্থাপন করে।
সেগুলো বিক্রির নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিত তারা। প্রতারক চক্র দাবি করত পুরোনো এসব ধাতব পদার্থ নাসার গবেষণার কাজে ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন দেশ থেকে ধাতব মুদ্রা চড়া দামে নাসা কিনে নেয় এবং এগুলো বিক্রি করে কয়েক মিলিয়ন ডলার পাওয়া সম্ভব। আর এই ফাঁদে পা দিত অনেকেই।
ঘটনা সম্পর্কে তিনি জানান, গত বছরের ডিসেম্বরে এই প্রতারণার ঘটনা ঘটে। তবে এর বছরখানেক আগে প্রতারক চক্রের এক সদস্যের সঙ্গে আনন্দ গ্রুপ নামে এক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের পরিচয় হয়। ঐ ব্যক্তি আরেক ব্যক্তিকে আনন্দ গ্রুপের চেয়ারম্যানের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলেন যে ব্যবসায়িক কাজে তিনি সারা পৃথিবী ঘুরে বেড়ান। বর্তমানে তিনি সিঙ্গাপুর থেকে ব্যবসা পরিচালনা করছেন।
পিবিআই প্রধান জানান, তদন্তে তারা জানতে পেরেছেন যে আসলে দ্বিতীয় ব্যক্তি এসএসসি পাস এবং পেশায় একজন পেয়ারা ব্যবসায়ী। এক পর্যায়ে দ্বিতীয় ব্যক্তি ঐ ব্যবসায়ীকে বলেন যে, তার কাছে এক জন ক্রেতা আছেন, যিনি নাসাসহ বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে জড়িত। তিনি বিদেশে থাকেন এবং পুরনো ধাতব মুদ্রা কিনতে চান। আর একজন বিক্রেতাও রয়েছেন, যিনি সীমান্ত এলাকায় থাকেন এবং ভারত থেকে এসব জিনিস নিয়ে আসেন।
পুরো লেনদেনটি যেহেতু মিলিয়ন ডলারের, তাই আনন্দ গ্রুপের ঐ ব্যক্তির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহারের অনুমতি চাওয়া হয়। তিনি আরো জানান, যে ব্যক্তিকে ক্রেতা হিসেবে পরিচয় করে দেওয়া হয়, তিনি আসলে এক জন শাড়ি ব্যবসায়ী। আর যে ব্যক্তি বিক্রেতা তিনি পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলা ঝিনাইদহে একটি বাড়িতে কেয়ারটেকার হিসেবে কাজ করেন। এই চক্রের আরেক সদস্য, যাকে মুদ্রার ক্রেতার ব্যক্তিগত সচিব বা পিএস হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়, তিনি আসলে টুকরো কাপড় ঝুটের ব্যবসায়ী।
পিবিআই বলছে, এই ঘটনার পর প্রতারণার শিকার ব্যক্তির পক্ষে কাজ করছেন এমন একজনকে সঙ্গে নিয়ে প্রতারক ব্যক্তিটি ক্রেতা সেজে চুয়াডাঙ্গায় যান ধাতব মুদ্রাটি দেখতে। সেখানে তাদের একটি ভল্ট এবং একটি টেকনিক্যাল রুম দেখানো হয়। তখন পুরো বিষয়টি বিশ্বাস করতে শুরু করে প্রতারকদের টার্গেটরা। ধাতব মুদ্রার দাম ধরা হয় ১০ কোটি টাকা। যে ব্যক্তি মুদ্রাটি কিনবেন, তিনি তখন সাড়ে ৮ কোটি টাকার একটি চেক দেন বিক্রেতাকে। বাকি দেড় কোটি টাকা তার কাছে নেই বলে জানালে ঝিনাইদহে বসে সেই টাকা দিয়ে দেন আনন্দ গ্রুপের পক্ষে এক কর্মকর্তা।
পরে কয়েনটি নিয়ে চলে যান আনন্দ গ্রুপের ঐ কর্মকর্তা। এর তিন দিন পর যিনি কয়েনটি বিক্রি করেছিলেন, তিনি আনন্দ গ্রুপের চেয়ারম্যানকে জানান, তারা যে কয়েনটি কিনেছেন সেটি আসল নয়। আসল কয়েনটি তার কাছে রয়েছে এবং সেটি পেতে হলে আরো ১০ কোটি টাকা দিতে হবে।
তখন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান বুঝতে পারেন যে, পুরো বিষয়টি ভুয়া। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই পূর্বপরিচিত এবং এরা কেউই মার্কিন নাগরিক কিংবা নাসার সদস্য নন। পরে ৬ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠানটির মহাব্যবস্থাপক বাদী হয়ে ঝিনাইদহ সদর থানায় মামলা করেন। এই মামলার তদন্তভার পিবিআইকে দেওয়া হলে তারা অভিনব কায়দায় এই প্রতারণার বিষয়টি জানতে পারে। এর জের ধরে যশোর, ঝিনাইদহ ও ঢাকা থেকে পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি ভল্ট, দুটি পুরনো মুদ্রা বা কয়েন, নগদ টাকা ও বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
বনজ কুমার মজুমদার বলেন, এরা এত লাভ দেখায় এবং মানুষ এমন সম্মোহনের মধ্যে পড়ে যায় যে সম্পূর্ণরূপে প্রতারিত হওয়ার আগ পর্যন্ত এরা বুঝতে পারে না। আর যখন বুঝতে পারে তখন লজ্জায় কাউকে বলেও না।
একই সংবাদ সম্মেলনে আরেকটি চক্রের তিন সদস্যকে আটক করার কথা জানানো হয়, যারা আয়ারল্যান্ডের ভিসা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।