রহিমা আক্তার মৌ ::
“এগিয়ে চলো সাহিত্যের পথে” স্লোগান নিয়ে অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশ নারী লেখক সোসাইটির ৯ম বর্ষপূর্তি নুরজাহান বেগম পদক ও গুণীজন সম্মাননা অনুষ্ঠান। গত ১৯ জুলাই ২০২৩ রোজ বুধবার  শিল্পকলা একাডেমীর জাতীয় সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে ছিলো কবি, লেখক, সংগঠক, গায়ক, জ্ঞানী গুণীদের চমৎকার মিলনমেলা।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জাতিসত্তার কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, উদ্বোধক যুব মহিলা লীগের সভাপতি ডেইজি সারোয়ার, বিশেষ অতিথি  কবি ও গবেষক মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক, কথাসাহিত্যিক ঝর্না রহমান, আবৃত্তিশিল্পী মীর বরকত, সভাপতি শেলী সেনগুপ্তা, আবৃত্তিকার বদরুল আহসান খান, সংগঠক ও প্রাবন্ধিক কামরুল ইসলাম সহ অনেকেই উপস্থিত হয়ে আয়োজন আলোকিত করেছেন। উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের বেশিরভাগ সদস্যবৃন্দ। যাদের উপস্থিতিতে সুন্দর একটি অনুষ্ঠান হয়েছে। এ বছর (২০২৩) নূরজাহান বেগম পদক সাহিত্য পেয়েছেন কথাসাহিত্যিক দিলারা মেসবাহ এবং সাহসী সাংবাদিকতায় পেয়েছেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমীন।
পূর্বঘোষিত সময় অনুযায়ী বেলা তিনটায় অনুষ্ঠান শুরু হয়। রাস্তার কিছু যানজট এড়িয়ে তিনটার কিছু পরেই উপস্থিত হই আমি। গিয়েই শুনতে পাই লেখকদের স্বরচিত কবিতা পড়া। উক্ত অনুষ্ঠানটিকে কয়েকটি পর্বে ভাগ করা হয়। প্রথম পর্বে নারী লেখকেরা স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি। আয়োজনটি ঢাকায় হলেও বিভিন্ন জায়গা থেকে উপস্থিত হন লেখকরা। লেখকদের কবিতা পড়া ছিলো অসাধারণ। শব্দের সাথে শব্দ আর বর্ণের সাথে বর্ণের এক মিলনমেলা।
অনুষ্ঠানের প্রানবন্ত উপস্থাপনা ও সঞ্চালনায় ছিলেন মেহবুবা হক রুমা ও শামীম আরা জামান। নবম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে বাংলাদেশ নারী লেখক সোসাইটির উপস্থিত লেখক সাহিত্যিকদের জন্যে ব্যাচ শুভেচ্ছা উপহার দিয়েছেন ঢাকা সাহিত্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জায়েদ হোসেন লাকি।
সম্মানিত অতিথি ও নারী লেখক সোসাইটির সদস্যদের ব্যাচ পরিয়ে দেন শাবানা ইসলাম বন্যা।
দ্বিতীয় পর্বে অনুষ্ঠিত হয় শিশুদের আবৃত্তি প্রতিযোগিতা ‘তুমিই পারবে’। ছোটদের কবিতা পাঠের পর পরিবেশিত হয় ছোটদের কন্ঠে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ। মনোমুগ্ধকর ছিলো শিশুদের এই প্রতিযোগিতা। বিচারক মণ্ডলীরা কাকে ছেড়ে কাকে রাখবেন এই নিয়ে টেনশানে পড়ে যান। আমি কবিতা আবৃত্তি শুনতে খুবই পছন্দ করি তাই মনোযোগী হয়ে শুনেছি ওদের আবৃত্তি। প্রতিযোগিতার প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয়ের হাতে পুরস্কার হিসাবে তুলে দেয়া হয় ক্রেস্ট ও মূল্যবান বই। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের জন্যে দেয়া হয় ক্রেস্ট, বই ও সার্টিফিকেট।
আয়োজনের তৃতীয় পর্বে সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন সঙ্গীত শিল্পী বদরুল হাসান খান ঝন্টু। অসাধারণ কিছু গান দিয়ে তিনি উপস্থিত সবার মন ভরিয়ে দেন। নুরজাহান বেগম পদকের পাশাপাশি সাহিত্য ও সংগঠনের বিভিন্ন ক্ষেত্রের জন্যে সম্মাননা দেয়া হয়। সবশেষে হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আর কেক কাটা পর্ব।
অসাধারণ সময় কেটেছে গতকাল। বাংলাদেশ নারী লেখক সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক সাঈদা নাঈম ও সোসাইটির সকলের যৌথ প্রচেষ্টায় অনুষ্ঠানটি বেশ গোছালো ছিলো। বলা যায়, অনুষ্ঠান শতভাগ সফল এবং সংগঠকদের পরিশ্রম সার্থক। উপস্থাপনা এবং আপ্যায়নও দারুন ছিল। গুণীজনদের বক্তব্যগুলো ছিলো অনেক তথ্যবহুল।
সঞ্চালনার দায়িত্বে থাকা মেহবুবা হক রুমা বলেন, “সবচেয়ে আনন্দের বিষয় আমরা অনুষ্ঠান সঞ্চালনার জন্য আর্থিক সম্মানী অর্জন করেছি। অনেক অনেক আনন্দিত। বাংলাদেশ নারী লেখক সোসাইটির আমরা দুজন প্রথম সম্মানী প্রাপ্ত সঞ্চালক।”
বঙ্গীয় সাহিত্য সংস্কৃতি সংসদ ও সাংগঠনিক কামরুল ইসলাম ভাইয়ের তথ্যমূলক বক্তব্যের মাঝেই অনেক কিছু শেখার ছিল, জানার ছিল। ভারতেন অগ্নিশিখা দিদির অসাধারণ কথাগুলো শুনে দিদিকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, নামের সাথে মুখের কথাগুলোর এতো মিল হয় কি করে। দিদি খুব হাসলেন। বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি বললেন, “নারীরা সবার আগে তোমাদের প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। কেউ কিন্তু তোমায় প্রতিষ্ঠিত করে দিবে না। তোমার নিজের চেষ্টায় এগিয়ে যেতে হবে।”
অগ্নিশিখা দিদির কথা শুনে মনে হল আমার উপজেলায় দেয়া বক্তব্যের কথা। সেদিন আমি বলেছিলাম, “নারীর এগিয়ে যাওয়া হলো সেই ছেলেবেলার তৈলাক্ত কলাগাছের অংকের মতো। শত চেষ্টায় উঠবে এরপর দেখবে কতজন টেনে ধরছে নামানোর জন্যে।” আসলেই নারীর পথযাত্রায় পদে পদে বাধা, সেই বাধা অতিক্রম করে এগিয়ে যাওয়া সেই অংকের মতোই।
প্রতিবছর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠিত হলেও এইবছর আমি প্রথম যাই। প্রোগ্রামের ড্রেসকোড ছিলো গোলাপি। মনে হচ্ছে পুরো হলরুম ভরে গেছে গোলাপের পাপড়ি দিয়ে। এমন একটি সফল অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য সোসাইটির পরিচালক সহ সদস্যদের অজস্র ধন্যবাদ। সাহিত্য প্রোগ্রাম অনেক হয়, উপস্থিত থাকা হয় মাঝে মধ্যে। তবে পূর্বঘোষিত সময়ের সাথে মিল রেখে অনুষ্ঠান শেষ করতে পারে খুব কম সংখ্যাক আয়োজক। সেদিক থেকে শতভাগ সুশৃঙ্খল ও সময়ের গুরুত্ব রেখেই প্রোগ্রাম শেষ করা হয়।
লেখক : সাহিত্যিক, কলামিস্ট ও প্রাবন্ধিক। 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here