নারী-পুরুষের সমতাভিত্তিক বিশ্ব গড়ে তোলার আহবানের মধ্যে দিয়ে পৃথিবীব্যাপী প্রতিবছর পালিত হয় আনত্মর্জাতিক নারী দিবস। ‘অগ্রগতির মূলকথা, নারী-পুরুষ সমতা’ প্রতিপাদ্য নিয়ে বাংলাদেশে এবছর পালিত হল মহান এই দিবসটি। সে উপলক্ষে সারাদেশে বিভিন্ন প্রকার অনুষ্ঠান হল। বেশকিছু সংগঠন রাজধানীতে শোভাযাত্রা বের করেছে, মানববন্ধন করেছে, আলোকচিত্র প্রদর্শন করেছে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে নারী দিবসের মূল অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবারের নারী দিবসের আরেকটি বিশেষ সংযোজন, তা হচ্ছেঃ নারী-নির্যাতন রোধে চালু হল হেল্পলাইন। এখন থেকে যে কোনো অপারেটর হতে ১০৯২১ নম্বরে ফোন করে যে কেউ নারী নির্যাতনের যে কোনো তথ্য সরাসরি জানাতে পারবে রাষ্ট্রকে। নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য এবং সহিংসতাকে রুখে দেওয়ার লক্ষ্যে আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কথা বলেছেন স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল, নারী নেত্রী খুশি কবীর, সারাহ বেগম কবরী সহ আরো অনেক নামী-দামী ব্যক্তিত্ব। এভাবে প্রতিবছরই বাংলাদেশে নারী দিবস পালিত হয় কিন্তু নারীর দুরবস্থা দূর হয় না, কারণ সমস্যার গভীরে কেউ যেতে চায় না। নারী দিবসের ডাক পৌঁছেনা নারীর কাছে। তাই নারী দিবসের দিনেও খুন হতে হয় বৃষ্টি আক্তারদের।
নারীর ক্ষমতায়ন শুধু নারীর জন্য নয় বরং বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির সমৃদ্ধির প্রশ্নই নারীর ক্ষমতায়নের উপর নির্ভরশীল। সেদিক দিয়ে নারী দিবসের গুরুত্ব উপলদ্ধি করা এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া আমাদের রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব। তবে দিবসটি উপলক্ষে কিছু বলতে চাইলে অথবা দিবসটির গুরুত্ব কিছুটা অনুধাবন করতে চাইলে একটু পেছনে যাওয়া জরুরী, জানা দরকার উহার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস। জাতিসংঘ ‘৮ই মার্চ’-কে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে ১৯৭৫ সালে। কিন্তু দিবসটির ইতিহাস বেশ পুরোনো। ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ তারিখে নিউইয়র্কে হাজার হাজার নারী-শ্রমিক সমবেত হয়েছিল। তাদের অধিকাংশই ছিল গার্মেন্টস শ্রমিক। তাদের কর্মস্থল ছিল অমানবিক, জীবন-যাপন ছিল মানবেতর। বেতন ছিল অতি সামান্য, কিন্তু কাজ ছিল ১২ ঘন্টা। কর্তৃপক্ষের অমানুষিক নির্যাতনের প্রতিবাদে সেদিন তারা রাস্তায় নেমেছিল, মত প্রকাশ করতেছিল, মিছিল করতেছিল। সেই মিছিলে পুলিশ হামলা করেছিল। অধিকার আদায়ের সকল আন্দোলনেই পুলিশ হামলা করে, কারণ পুলিশ রাষ্ট্রের পাহারাদার এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের ভূমিকা থাকে শোষকের পক্ষে। কিন্তু পুলিশী হামলার কারণে সভ্যতার ক্রমবিবতর্নের কাজ বসে থাকে না, প্রগতির চাকা থেমে যায় না। তাই ওই ঘটনার দু‘বছর পর সেখানকার নারী-শ্রমিকেরা পুনরায় সমবেত হয়ে একটি ইউনিয়ন গড়ে তুলেছিল। আজ থেকে দেড়‘শ বছর আগে পৃথিবীর অপর প্রান্তে সেদিন যে সকল মহিলারা জমায়েত হয়েছিল তাদের প্রত্যেকের পদতলে জানাই গভীর শ্রদ্ধা।
প্রগতির অমোঘ নিয়ম অনুযায়ীই আমেরিকার নারীরা আবার ঐক্যবদ্ধ হতে শুরু করে। ১৯০৮ সালের ৮ মার্চ তারিখে নিউইয়র্ক শহরেই আবারো নারী শ্রমিকেরা সমবেত হয় এবং মিছিল করে। অংশগ্রহণ করেছিল সেদিন ১৫ হাজার নারী। ভোটের অধিকার দিতে হবে, কাজের সময় কমাতে হবে, বেতন বৃদ্ধি করতে হবে, অত্যাচার-নির্যাতন বন্ধ করতে হবে, এসবই ছিল তাদের দাবী। ওই বছর আমেরিকার সোশালিষ্ট পার্টি ফেব্রুয়ারীর শেষ রোববারকে জাতীয় নারী-দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। সেই মোতাবেক ১৯০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারী সারা আমেরিকায় জাতীয় নারী-দিবস পালিত হয়। একইভাবে ১৯১০ সাল থেকে ইউরোপের নারীরাও ফেব্রুয়ারীর শেষ রোববারে নারী-দিবস পালন করতে শুরু করে। একইবছর ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনে আর্ন্তজাতিক সমাজতান্ত্রিক দলের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়, যা ছিল শ্রমজীবি মানুষের জন্য তথা বঞ্চিত নারীর জন্য বিশ্বের ইতিহাসে অন্যতম একটি অধ্যায়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে যাওয়া প্রতিনিধিরা উহাতে অংশ নেন। সেখানে জার্মানীর সোশালিস্ট নেত্রী ক্লারা জেত্সকিন ৮ই মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী-দিবস হিসেবে ঘোষণা করার দাবী করেন এবং এক‘শ জন নারী-প্রতিনিধি তা দৃঢ়ভাবে সমর্থন করেন।
এভাবে বিশ্বের নির্যাতিত এবং নিগৃহীত নারীরা নিজেদের অধিকারের বিষয়ে আস্তে আস্তে সচেতন হতে থাকে, প্রতিবাদ করতে শিখতে থাকে। ১৯১১ সালের ১১ মার্চ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অত্যন্ত জাঁকজমকভাবে নারী-দিবস পালিত হয়। কর্মস্থলে নারী এবং পুরুষের বৈষম্য দূর করার দাবীতে, ভোটের অধিকারের দাবীতে, রাজনৈতিক সিদ্ধান্তসমূহে অংশগ্রহণের দাবীতে, সর্বোপরি নিজেদেরকে মানুষ হিসেবে স্বীকৃতির দাবীতে সেদিন সারা ইউরোপের নারীরা ঘর থেকে বেরিয়ে রাজপথে নামে। জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, অষ্ট্রিয়া, ডেনমার্কসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সেদিন দশ লক্ষেরও অধিক নারী সমবেত হয়, বিক্ষোভ করে, অমানবিকতার বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ যুদ্ধে নামে। এভাবেই নারী-দিবসের সূচনা হতে থাকে। কখনো ৮ মার্চ, কখনো ফেব্রুয়ারীর শেষ রোববার আবার কখনো অন্য আরেকটি দিনে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় নারীরা অধিকার আদায়ের জন্য দিবসটি পালন করতে থাকে। ১৯১৩ এবং ১৯১৪ সালে দু‘বছরই ৮ মার্চে ইউরোপ এবং আমেরিকায় নারী দিবস পালিত হয়। ১৯১৭ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেদিন ৮ মার্চ রাশিয়ায় সেদিন ছিল ২৩ ফেব্রুয়ারী, কারণ রাশিয়ান ক্যালেন্ডারের সাথে তখন অন্যদের কিছু পার্থক্য ছিল, সেদিন ২০ লক্ষ রাশিয়ান মেয়ে বৈষম্যের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামে। তারপর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবছর ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী-দিবস পালিত হতে থাকে এবং পরবর্তীতে জাতিসংঘের ঘোষণার মধ্যে দিয়ে তা অধিক মর্যাদা লাভ করে এবং স্থায়ীত্ব পায়। এভাবে বহু নারীর প্রতিবাদী অধ্যায়ের ঐতিহাসিক বাস্তবতাই হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী-দিবস।
বছরের একটি দিন নারী-দিবস আর বাকি দিনগুলো পুরুষ-দিবস নয়। মোটকথা শুধু নারী জাতির জন্য নয় বরং গোটা মানব জাতির একটি বিশেষ রাজনৈতিক তাৎপর্যপূর্ণ দিনের নাম ‘৮ মার্চ’। সেকারণে দিনটি শুধু নারী জাতিকে নয় বরং সমগ্র মানব জাতিকে অমানবতার বিরুদ্ধে উজ্জিবীত করার কথা। কিন্তু আজকাল নারী-দিবস কিভাবে পালিত হয়? দিনটিতে কি হয়? বিভিন্ন কসমেটিক্সের কোম্পানী দিনটিকে তাদের পণ্য বিক্রির জন্য বিজ্ঞাপন হিসেবে ব্যবহার করে। সেদিন নারীরা সাজগোজ করে, গান গায়, বেড়াতে যায়। সেদিন আরও অনেক ঘটনাই ঘটে, কেউই সেসবের খবর রাখতে চায় না। সেদিন পুরুষেরা এসিড ছুঁড়ে দেয় মেয়েদের মুখে। সেদিন স্বামী নামক নরপশুরা গৃহবধূদের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয় অথবা যৌতুকের জন্য লাঠিপেটা করে। সেদিন কন্যা-শিশু জন্ম দেওয়ার অপরাধে হাজার হাজার রমণীকে অত্যাচার করে। সেদিন মেয়ে শিশুকে গণধর্ষণ করে। সেদিন প্রেমিক নামধারীরা প্রেমিকাদেরকে বেশ্যাপাড়ায় বিক্রী করে। সেদিন যৌনদাসী বানাবার জন্য নারীকে পাচার করে। সেদিন আম গাছের নিচে ধর্ষিতা নারীর লাশ পাওয়া যায়। এসব আমার নিজের তৈরী করা বক্তব্য নয়, এবছর নারী দিবসের দিনেও এদেশে কতজন নারী কত দুরবস্থায় ছিল তার হিসেব আমার জানা নেই। পত্রিকায় প্রকাশিত দু’একটি উল্লেখ করছি। নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের জঙ্গির এলাকায় বৃষ্টি আক্তার(২২) নামের এক গৃহবধূর ঝুলনত্ম লাশ উদ্ধার করলো পুলিশ নারী দিবসে। বিয়ের সময় বৃষ্টির বাবা যৌতুক হিসেবে নগদ টাকা, স্বণালঙ্কারসহ অনেক কিছুই দিয়েছিল কিন্তু তার শ্বশুরবাড়ির লোকেরা আরও যৌতুকের জন্য কয়েকদিন ধরে নির্যাতন শেষে হত্যা করলো তাকে। যৌতুক না দিতে পারার কারণে নারী দিবসের দিন হাত-পায়ের রগ কেটে দেয়া হয়েছে লালমনিরহাটের চরকাশিয়াবাড়ি গ্রামের গৃহবধূ রোকেয়া বেগমকে। সেদিন টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার রাজাবাড়ি এলাকায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে চলনত্ম মোটর সাইকেল থেকে প্রেমিকাকে ফেলে হত্যা করা হয়েছে। ০৯ মার্চ’২০১৪-এর পত্রিকাসমূহে নারী-দিবস উৎযাপনের বিভিন্ন খবরের পাশাপাশি আরেকটি খবরও শিরোনাম হয়েছে; তা হল, ‘৮৭ ভাগ নারী কোনো না কোনো সময় স্বামীর নির্যাতনের স্বীকার’। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এবং ভায়োলেন্স এগেনেস্ট উইমেন (ভিএডবিউ) এর সার্ভে অনুযায়ী দেশের বিবাহিত নারীর ৮২ শতাংশ মানসিক নির্যাতনের স্বীকার। উক্ত জরিপ অনুযায়ী স্বামীর দ্বারা বিভিন্নভাবে নির্যাতিত ৮৭ ভাগ নারীর মধ্যে ৬৫ শতাংশ নারী শারিরীক নির্যাতন ভোগ করছে, ৩৬ শতাংশ যৌন নির্যাতনের শিকার আর ৫৩ শতাংশ অর্থনৈতিক নির্যাতনের শিকার। জরিপে অনত্মর্ভূক্ত নারীর মধ্যে ৭ শতাংশ জানিয়েছেন নির্যাতনের কারণে তাঁরা আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। এই হল রূঢ় বাসত্মবতা। এখনও এদেশে কন্যাশিশু জন্মদানের কারণে অথবা সনত্মান জন্ম দিতে অপারগতার কারণে নারীকেই দায়ী করা হয়। এসবের কারণ কি? নারীরা এখনও মানুষের পর্যায়ে উঠে আসতে পারেনি, তাদের উঠে আসতে দেওয়া হয়নি। যেমন বাংলাদেশের নারীরা আজও তামাশার বস্তু।
যে রাষ্ট্রের জন্য ৩ লক্ষ নারী তার শরীর দিয়ে যুদ্ধ করেছিল সেই রাষ্ট্র নিজেই নারীর সাথে তামাশা করে। সংবিধান যদি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক হয় তবে তার সঙ্গে ৩ লক্ষ নারীর শরীর সম্পর্কযুক্ত। লিঙ্গ-বৈষম্যহীন বাংলাদেশই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। কিন্তু সংবিধানের ২৮(২) অনুচ্ছেদে নারীর সমান অধিকারের কথা বলে নারীর সঙ্গে এক চটকদার তামাশা করছে স্বয়ং বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র, কারণ সম্পত্তিতে নারীর কোনো অধিকার এদেশে নেই বললেই চলে। উত্তরাধিকারে পুত্রের অর্ধেক সম্পত্তি কন্যাকে দেয়ার কথা বলে বৈষম্যকে প্রাতিষ্ঠানিকতা দেয়া হয়েছে। দেশে ‘মহিলা বিষয়ক’ একটি মন্ত্রণালয়(আংশিক) রয়েছে। কিন্তু ‘পুরুষ মন্ত্রণালয়’ নামে কোনো-কিছু নেই, তারমানে সকল মন্ত্রণালয়ই ‘পুরুষ মন্ত্রণালয়’। এসবই তামাশা। এদেশে নারীর সাথে তামাশার ধরণও বেশ হাস্যকর। মহিলাদের জন্য ‘সংরক্ষিত আসন’ নামে আইন-সভায় কিছু আসন বরাদ্দ রাখা হয়, যা সভ্য পৃথিবীতে হাস্যকর। এখন অবশ্য সংরক্ষিত ওইসব আসনে নির্বাচনের মৌসুম চলছে। তিন দশক আগে একটি পত্রিকা তাদেরকে ‘ত্রিশ সেট অলংকার’ বলেছিল। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে অনেক দেশের শাসনব্যবস্থাই পড়তে হয়েছে, তবে মহিলাদের জন্য এধরনের আসন সংরক্ষণের মতো উদ্ভট ব্যবস্থা কোথাও আছে বলে আমার জানা নেই। বিশিষ্ট সাংবাদিক নঈম নিজাম খুব খোঁজাখুঁজি করে উন্নত কোনো গণতান্ত্রিক দেশে এরকম কৌতুকপ্রদ কোনো ব্যবস্থা দেখতে না পেলেও এশিয়া মহাদেশের আরও একটি রাষ্ট্রে তা পেয়েছেন। বাংলাদেশ ছাড়া আর কোন দেশে উনি দেখেছেন, তা কি আমরা জানি? পাকিসত্মান। যেদেশে প্রায় প্রতিদিনই ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের আত্মঘাতি বোমা হামলা হয়, যেদেশে কোনো মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নেই, যেদেশে মানুষ হিসেবে নারীর সামান্যতম কোনো অধিকার নেই, পাকিসত্মান নামক সেই দেশটিতেই কেবলমাত্র আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা চালু রয়েছে। যেদেশ আমাদের মা-বোনদেরকে গণিমতের মাল হিসেবে ঘোষণা করেছিল, যেদেশ মাত্র নয় মাসে ৩০ লক্ষ নিরীহ বাঙ্গালীকে হত্যা করে রেকর্ড সৃষ্টি করেছিল, সেই পাকিস্তানে আর আমাদের বাংলাদেশে রয়েছে নারীর সাথে ঠাট্টা করার মতো আইন-সভায় আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা। পাকিসত্মানের বসত্মাপচা নিয়মই যদি আমাদের অনুকরণীয় হয় তবে মুক্তিযুদ্ধ করার কী দরকার ছিল তা আমার মাথায় আসে না। কাজেই বাংলাদেশে কেমনভাবে ৮ই মার্চ পালিত হয় তা অনুমান করা আমার মনে হয় কারো পক্ষেই কঠিন নয়।
প্রতিবছর নারী-দিবসের একটি করে পাদ্য বিষয় থাকে, যা শুধু ব্যানারে লেখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। মজা করে র্যালী হয়, ছবি তোলা হয়, বিবৃতি দেয়া হয়। আলোচনা হয় ঠিকই, বক্তৃতাও হয় বটে কিন্তু নারীর প্রকৃত অধিকারের কথা কেউ-ই বলে না। এদেশের অসভ্য-আইন অনুযায়ী ‘উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে দুইজন নারীর সমান একজন পুরুষ’ নারীর প্রতি অমানবিক অসাম্য ওই আইন এই মূহুর্ত থেকে দূর করতে হবে, এই উচিত কথাটি কারো মুখেই উচ্চারিত হতে শোনা যায় না। এভাবেই নারী-দিবস যায়, আবার ৩৬৪ দিন পর ফিরে আসে। নারীরা ঠিকই নিষ্পেশিত, দংশিত, নির্যাতিতই থেকে যায়। স্বামীর লাথি-গুঁতা খাওয়া গ্রাম্য গৃহবধূ যেমন নারী-দিবস কি তা জানে না, তেমনি সারারাত মশার কামড় খেয়ে সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত গাধাখাটুনি করা শহুরে বস্ত্রবালিকাদের কাছেও নারী দিবসের কোনো ডাক পৌঁছে না। এই যখন বাস্তবতা, তখন এদেশের সকল নারীর প্রতি বিশ্ব নারী-দিবস উপলক্ষে অনুরোধ করছি, যতোদিন তোমরা নিজের অধিকার সম্পর্কে জানবে না ততোদিন কেউ তোমাদের ভাগ্য বদলে দেবে না এবং জাতি হিসেবে আমরা ততোদিন পিছিয়েই থাকবো। তাই আমি তাঁদের উদ্দেশ্যে বলছি নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হও, পূর্ণ মানুষের মর্যাদা লাভ কর, এগিয়ে যাক বাংলাদেশ। বিশ্ব নারী-দিবস অমর হোক।
মিলন আহমেদ/নারীবাদী কলাম্নিস্ট