স্টাফ রিপোর্টার :: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বেগম রোকেয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে সরকার প্রয়োজনীয় সবকিছু করে যাচ্ছে। বেগম রোকেয়া চেয়েছিলেন একজন নারী রাষ্ট্রের প্রধান হবেন; তিনি পুরুষ, পরিবার ও সমাজের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাবেন এবং সমান অধিকার ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগ সরকার এটা বাস্তবায়ন করেছে এবং এদেশের নারী সমাজ এখন বিজয়ীর বেশে অন্ধকার থেকে আলোর পথে এগিয়ে চলছে। বাংলাদেশ আজ নারী উন্নয়নে বেগম রোকেয়ার সারথি হয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।
সরকারপ্রধান বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে নারী ও শিশুর ওপর নির্যাতন মানসিক রোগের মতো ছড়িয়ে পড়ছে। তাই নারী-পুরুষ প্রত্যেককেই সচেতন থাকতে হবে, যাতে কোনো নারী ও শিশু নির্যাতিত না হয়। নারী ও শিশুদের সুরক্ষায় বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে।
সোমবার সকালে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে রোকেয়া দিবস উদযাপন এবং রোকেয়া পদক প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, শিশু আর নারীর ওপর অত্যাচার-নির্যাতন মানসিক ব্যাধির মতো ছড়িয়ে গেছে। আসলে নির্যাতন তো করে পুরুষরা। তাদের তো এটা ভাবা উচিত তার নিজেরও সন্তান আছে, কন্যাসন্তান আছে। সেই সন্তান যদি কারও দ্বারা নির্যাতিত হয়, তখন তিনি কী চিন্তা করবেন বা ভবিষ্যতে তার কী চিন্তা হবে।
নারী-শিশু নির্যাতন রোধে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু আইন দিয়ে সব হয় না। সরকারপ্রধান বলেন, সারাবিশ্বে বাংলাদেশ এখন অর্থনৈতিকভাবে অগ্রগতি লাভ করে একটা অবস্থান নিয়েছে। ঠিক তেমনি নারীর ক্ষমতায়ন, নারীর সমতার ক্ষেত্রেও বিশ্বে বাংলাদেশ তার একটা অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে এবং এটা অব্যাহত রাখতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আমি সারাদেশে ১০০টা অর্থনৈতিক অঞ্চল করছি। সেখানে নারী উদ্যোক্তারা বিশেষ সুবিধা পাবেন, সেটাও আমরা নির্দিষ্ট করে দিয়েছি। সর্বক্ষেত্রে মেয়েরা কাজ করুক, সেটাই আমরা চাই।’ মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্মম নির্যাতনের শিকার বাংলাদেশি নারীদের পুনর্বাসনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকার কথা স্মরণ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, তাদের পুনর্বাসনের জন্য জাতির পিতা পুনর্বাসন বোর্ড তৈরি করে দেন, আলাদা বাজেট দেন এবং তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। সেই মেয়েদের চিকিৎসার জন্য তিনি সুইজারল্যান্ড থেকে নার্স, জার্মানি ও ইংল্যান্ড থেকে ডাক্তার নিয়ে আসেন। তাদের চিকিৎসা করানো হয়।
এ প্রসঙ্গে মা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের কথা স্মরণ করে সরকারপ্রধান বলেন, অনেক পরিবার তাদের (নির্যাতিত নারীদের) নিয়ে যায়। অনেক পরিবার তাদের নেয় না। তাদের একত্র করে বিয়ের ব্যবস্থা করেন আমার মা। তিনি নিজ থেকে এ ধরনের অনেক নির্যাতিত মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। তিনি সব সময় এ ধরনের মেয়েদের কথা চিন্তা করতেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা সমাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে গেলে নারী-পুরুষের অধিকার সুরক্ষিত করার পাশাপাশি কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। কারণ সমাজের অর্ধেকই নারী। কাজেই একটা অঙ্গ যদি সেখানে উন্নত না হয়, শুধু একটা দিক দিয়ে তো সমাজ গড়ে উঠতে পারে না। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই জাতির পিতা এ কাজগুলো করে গিয়েছিলেন। বর্তমান সরকার সেই পদাঙ্ক অনুসরণ করেই এগিয়ে যাচ্ছে।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা ও মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুন নাহারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন গণপূর্ত অধিদপ্তরের মাধ্যমে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের আধুনিকায়নের কাজ উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম উপস্থিত ছিলেন।