পঞ্জীভুত সমস্যা ও প্রকট শিক্ষক সংকটের মধ্য দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে জামালপুরের নান্দিনা এম,এইচ,কে সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের লেখাপড়া।
তৎকালীন বৃটিশ আমলে পুটিয়া (রাজশাহী) রাজ ষ্টেটের জমিদার মহারাণী হেমন্ত কুমারী দেবীর দানকৃত জমির উপর ১৯৩৫ সনের ৫ ডিসেম্বর বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। এদিন বিদ্যালয়ের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন, বৃটিশ বিভাগীয় কমিশনার মি: ডব্লিউ,এইচ, নেলসন,আ,সিএস। সাথে ছিলেন রাজা বাহাদুর স্বর্গত: সচীন্দ্র নারায়ন সন্ন্যাল ও জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মি: ডাউ আই সিএস। জমিদার মহারাণীর পক্ষে শচীন্দ্র নারায়ন সন্ন্যাল বিদ্যালয়কে ৭ একর জমি লিখে দেন। ১৯৩৭ সনে স্কুলটি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন লাভ করে।
১৯৫৮-৫৯ সনে যুক্তরাষ্ট্রের ফোড ফাউন্ডেশন এর সাথে চুক্তি অনুযায়ী দেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে বহুমুখী কার্যক্রম প্রবর্তনের উদ্দেশ্যে এবং নিজ নিজ এলাকায় স্কুলগুলো বহুমুখী পাঠক্রম প্রবর্তনের ব্যাপারে আর্দশ হিসেবে কাজ করে মাধ্যমিক শিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মোট ৫টি বেরসরকারী পথপ্রদর্শক বিদ্যালয় নির্বাচিত করা হয়। অত্র বিদ্যালয়টি তার স্বকীয় বৈশিষ্ট্য ও বহুমুখী কার্যক্রমের স্বীকৃতি স্বরুপ সে সময়ে (১৯৫৯-৬২) সনে দেশের অন্যতম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় হিসেবে নির্বাচিত হয়।
১৯৮১ সনের ১ জানুয়ারি বিদ্যালয়টি সরকারীকরণ করা হয় এবং ১৯৮১ সনের ২৮মে আনুষ্ঠানিকভাবে স্কুলের সকল স্থাবর অস্থার সম্পত্তি ‘ডিড অব গিফট’ এর মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহামান্য রাষ্ট্রপতি বরাবর হস্তান্তর করা হয়। পরবর্তী সময়ে মহারাণী হেমন্ত কুমারী সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় সংক্ষিপ্ত করে রাখা হয় এম,এইচ,কে সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়।
১৯৩৫ থেকে ২০১২ সন। মাঝখানে কেটে গেছে ৭৬ বছর। দীর্ঘ সময়ে বিদ্যালয়টিকে পেছনের দিকে তাকানোর ফুসরত ছিল না। কী লেখাপড়া, খেলাধুলা, কী সাংস্কৃতিক চর্চা এর কোনটাই বিদ্যালয়কে পেছনে ফেলেতে পারেনি। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের নানা স্থান থেকে ছাত্ররা হোষ্টেলে থেকে লেখাপড়া করেছেন। এ স্কুলে লেখাপড়া করে দেশ বরেণ্য শিক্ষাবিদ, প্রকৌশলী, চিকিৎসাবিদ, আইনজীবী, ব্যবসায়ী, চিত্রশল্পী, সাংবাদিক, নাঠ্যকার, গীতিকার, চলচ্চিত্রকার, যাদুকরসহ নানা পেশায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি অত্র বিদ্যালয় খেলাধুলা ও সাংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে সারা দেশের সুমাম কুড়িয়েছে।
ইংরেজি এফ অক্ষরের মত বিদ্যালয়ের পুরনো একাডেমীক ভবন, প্রশাসনিক ভবন বিদ্যমান থাকলেও বিগত এক যুগ আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ফ্যাসিলেটিজ বিভাগের অধীন একাধিক বহুতল ভবন নির্মিত হয়েছে।
বর্তমানে স্কুলে ছাত্র সংখ্যা প্রায় সহস্রাধিক। কিন্তু অত্র বিদ্যালয়েল শিক্ষক সংকট আজ প্রকট হয়ে উঠেছে। বর্তমানে ১২ জন শিক্ষক দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
স্কুলে ইংরেজি, অংক, বিজ্ঞান, কৃষিসহ প্রায় ১৩জন শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। স্কুলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোশারফ হোসেন জানান, স্কুলে শিক্ষক সংকট থাকায় ছেলেরা ক্লাসে পাঠদানে অমুনযোগি হয়ে পড়ছে। প্রাপ্তন শিক্ষক মজিবুর রহমান ঠান্ডা স্যার জানান, আমাদের সময়তো একনটি ছিলা না। গত প্রায় দশ বছর ধরেই এখানে শিক্ষক সংকট লেগে আছে। শিক্ষক সংকটের পাশাপাশি এখানে গত ৩ বছর ধরে অফিস সহকারীর পদও শূন্য রয়েছে।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শঙ্কর কুমার ঘোষ ইউনাইটেড নিউজ টয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মাত্র ১২জন শিক্ষক নিয়ে স্কুল পরিচালনা করতে গিয়ে আমাকে হিমসিম খেতে হচ্ছে। ইংরেজি ও অংক শিক্ষক না থাকায় লেখাপড়া ব্যাহত হচ্ছে। তিনি আরও জানান, প্রশাসনিক কাজ ফেলে আমাকে প্রতিদিন তিনটি করে ক্লাস নিতে হয়। আমি স্কুলের কাজে যেদিন বাইরে যাই সেদিন অংক ক্লাস পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে।
গত ২০০৮ সন থেকে অত্র বিদ্যালয়টি ডাবল শিফটে পরিচালিত জামালপুর জিলা স্কুল এবং সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সাথে পাঠদান ও পরীক্ষা একিভুত করা হয়েছে। অথচ শহরের ওই দুটি সরকারী স্কুলে শিড়্গক সংকট না থাকলেও চরমভাবে অবহেলিত হয়ে পড়েছে নান্দিনা সরকারী পাইলট স্কুলটি।
শিক্ষক সংকটের পাশাপাশি স্কুলটিতে রয়েছে অবকাঠামোগত নানা সমস্যা। ছাত্রাবাসের জরাজীর্ণ অবস্থা, পুকুরঘাট ভেঙ্গে উপড়ে গেছে, বিজ্ঞানাগারে পর্যাপ্ত সরঞ্জাম নেই, লাইব্রেরিতে বই নেই, বহু পুরনো নথিপত্র ও বই পুস্তক ইঁদুর ও উই পোকায় কেটে নষ্ট করে দিয়েছে, ল্যাট্টিন টয়লেটের অবস্থার শোচনীয়, নাইটগার্ড থাকলেও পর্যাপ্ত বাতি নেই। বাউন্ডারী দেওয়াল ভেঙ্গে এবং হেলে পড়েছে। বিদ্যালয়ের ৩টি পুকুর থাকলেও কচুরি পানায় ভরে আছে। কিছু জমি জবর দখলে এবং বেহাত হয়ে গেছে।
এলাকাবাসী জানিয়েছেন, এখানে শিক্ষক সংকট থাকার পরও ছাত্রদের মনোযোগ সহকারে পাঠদানে শিক্ষক শিক্ষিকাদের আন্তরিকতার কোন অভাব নেই। পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জনে ছাত্র-শিক্ষক, অভিভাবকরা প্রাণান্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রাচীন এই স্কুলটি এলাকাবাসীর গর্ভ।
ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/ছাইদুর রহমান/জামালপুর