রাজু দে, নাটোর প্রতিনিধি :: নাটোরের রাস্তাঘাটে  হরহামেশাই  বিক্রি হচ্ছে গরু ও মহিষের মাংস । প্রায় প্রতিদিন ভ্যানে চাপিয়ে গরুর মাংস বিক্রি করছেন একদল বিক্রেতা। নির্ধারিত বাজারমূল্যের চেয়ে কেজিপ্রতি ১০০ টাকা কম দামে বিক্রি হয় এসব মাংস। মাংসের পাশাপাশি, খাবার যোগ্য পশুর বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ছাঁটও বিক্রি হচ্ছে। পৌর এলাকায় মাংস বিক্রির কিছু বিধি-বিধান থাকলেও তা মানছেন না কেউ। উল্টো নির্ধারিত বাজারের অবিক্রিত মাংসও মাঝে মাঝে বিক্রি হচ্ছে যত্রতত্র।

বৃহষ্পতিবার (২ জানুয়ারি) দুপুরে শহরের প্রাণকেন্দ্র কানাইখালী পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ভ্রাম্যমান মাংসের দোকান দেখা যায়। সাদ্দাম হোসেন নামের এক মাংস বিক্রেতা গরুর মাংস প্রতিকেজি ৪০০ টাকা ও ছাঁট ৮০ টাকা দরে বিক্রি করছিলেন। তার দাবী, ক্রেতা কম থাকায় মাংসগুলো দুপুর পর্যন্ত বাজারে বিক্রি হয়নি। তাই ফেরী করে মাংস বিক্রি করছেন তিনি।

ভ্রাম্যমান বিক্রেতারা এসব মাংসকে ভালো বললেও ভিন্নমত ভোক্তাদের। তাদের দাবী, নির্ধারিত বাজারের মাংস দোকানগুলোর পশু সম্পর্কে খুব একটা আপত্তি না থাকলেও ভ্রাম্যমান দোকানগুলোর পশু কোথায় জবাই হয় বা কোথায় মাংস প্রস্তত করা হয়, তা অজানা থেকে যাচ্ছে। সকালে জবাইকৃত পশুর মাংস প্রথমে বাজারে বিক্রি না হলে পরে খাবার হোটেলগুলোতে নেয়া হচ্ছে। হোটেলগুলো মাংস না কিনলে সেগুলো ভ্রাম্যমান দোকানের মাধ্যমে রাস্তাঘাটে চলে আসে এবং যত্রতত্র বিক্রি হয়।

এছাড়া প্রায় প্রতি সপ্তাহেই মাইকিং করে ১০০টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয় ব্রয়লার মুরগী। গরুর মাংসের দাম তুলনামূলক বেশি হওয়ায় নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সাধ্যের মাংস হিসেবে ব্রয়লার মুরগির বিক্রি বেশি। চর্বিযুক্ত মাংসল এসব মুরগীর অধিকাংশই রোগাক্রান্ত হয় যা জবাইয়ের পর পেট-নাড়িভুড়ি দেখে বােঝা যায়। খাবারের মান নিয়ন্ত্রণ এবং জনস্বার্থে পশু জবাই ও মাংসের মান নিয়ন্ত্রন আইন ২০১১-এর প্রয়োগ না থাকায় ভ্রাম্যমান মাংস বিক্রি উৎসাহিত হচ্ছে।

কনজুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) বাগাতিপাড়া শাখার যুগ্ম সম্পাদক আল আফতাব খান বলেন, পথের ধারে বিক্রিত মাংসের মান নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। মাংস পরীক্ষা হয় না। কোথায় থেকে আনা হয়, তাও বলা হয় না।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ বেলাল হোসেন বলেন, বর্তমানে লাম্পিস্কিন, এনথ্রাক্সসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে গবাদিপশু। এক্ষেত্রে গরুর মাংস কেনার সময় বাড়তি সতকর্তা অবলম্বন করতে হবে।

নাটোর পৌরসভার মেয়র ও উমা চৌধুরী জলি জানান, নির্দিষ্ট দোকান ছাড়া যত্রতত্র মাংস বিক্রি করা আইনত নিষিদ্ধ ও দন্ডনীয়। এ ব্যাপারে অভিযোগ এলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

জেলার বিদায়ী সিভিল সার্জন ডাঃ আজিজুল ইসলাম বলেন, ভ্রাম্যমান দোকানের মাংস পরিহার করাই শ্রেয়। কম দামে কিনে যতটুকু লাভবান হওয়া যায়, পরিণামে তার চেয়ে বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। সেই সাথে যেসব হোটেল বা রেস্তোরা এসব মাংস কিনে রান্নার পর বিক্রি করে, সেগুলো বর্জন করা উচিত।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here