নাঈম মৃধা, জবি প্রতিনিধি ::

“বৈশাখে নুতন করিনু সৃজন / মঙ্গলময় যত তনু-মন”স্লোগানে পহেলা বৈশাখ উদযাপন উপলক্ষে শিক্ষার্থীদের সব প্রস্তুতি শেষ হলো। ইউনেস্কোর অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া রিকশাচিত্রকে মূল প্রতিপাদ্য করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এবার পহেলা বৈশাখ উদযাপন করা হবে। চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা টানা দিন-রাত পরিশ্রম ফলে ইতিমধ্যে উৎসবের সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে এবারের বৈশাখ উদযাপনের মূল অংশ জুড়েই থাকবে রিকশাচিত্র। বাংলা নববর্ষ ১৪৩১ কে বরণ করে নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ও দ্বিতীয় ফটকের পাশের দেয়ালে পেইন্টিং করা হয়েছে। রিকশা পেইন্টিংয়ের আদলে দেয়ালে ফুটে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটক, বুড়িগঙ্গার নৌকা, মা ও প্রকৃতির বিভিন্ন চিত্র। শিক্ষার্থীদের আঁকা দেয়ালচিত্রতে রয়েছে ফুল, মাছ, নৌকা, বাঘ, ময়ূরসহ নানা ধরনের চিত্র। দেশের রিকশায় আঁকা নানা ধরনের চিত্রের মধ্য থেকে আকর্ষনীয় ও দৃষ্টিনন্দন চিত্রগুলোকে উজ্জ্বল রঙে দেয়ালে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

এছাড়া বৈশাখ উপলক্ষে মঙ্গল শোভাযাত্রাতেও থাকবে বড় আকৃতির রিকশার স্টাকচার ও কুমিরের স্টাকচার । র্যালির জন্য তৈরিকৃত মুখোশ গুলোতেও গতানুগতিক ফর্ম এর পাশাপাশি রিকশা পেইন্টিং এর বিভিন্ন ফর্ম তৈরি করা হয়েছে। এবার ঈদের ছুটি থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৮ এপ্রিল বাংলা নববর্ষ উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এবারের আয়োজনে থাকছে মঙ্গল শোভাযাত্রা, থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বাংলা বর্ষবরণের নানা আয়োজন।

আয়োজনের দায়িত্বে থাকা চারুকলা অনুষদের পঞ্চম ব্যাচের শিক্ষার্থী নাঈম মৃধা বলেন, বৈশাখ: ১৪৩১ উৎযাপনের সমস্ত প্রস্তুতি সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ । আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক, অফিসের কর্মকর্তা, সিনিয়র জুনিয়র সকল শিক্ষার্থীদের আন্তরিক অংশগ্রহণের ফলে সবকিছু সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে। আমাদের মূল প্রতিপাদ্য “রিকশা পেইন্টিং” এর আদলেই, দেয়াল চিত্র, মুখোশ, স্টাকচার সবকিছু উপস্থাপন করা হয়েছে। এবার যেহেতু ঈদের ছুটির পর অনুষ্ঠান হবে, আমাদের তৈরিকৃত সমস্ত জিনিসপত্র সংরক্ষণ করে রাখছি। ঈদের ছুটি কাটিয়ে একসাথে সবাই মিলে, বৈশাখ উৎযাপন করব।আশাকরি সবার অংশগ্রহনে সুন্দর, প্রাণবন্ত ও উৎসবমুখর পরিবেশে নববর্ষ উৎযাপন করতে পারব আমরা।

একই ব্যাচের আরেক শিক্ষার্থী হৃদয় হোসাইন বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা অনুষদ হওয়ার পর এটি প্রথম বৈশাখ। এজন্য মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি আগের বারের থেকে আমাদের জন্যে একটু বেশি চ্যালেঞ্জিং ছিল। চারুকলা অনুষদের শিক্ষকবৃন্দ ও শিক্ষার্থীদের হাতে খুব সুন্দরভাবে এই আয়োজনের প্রস্তুতি সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারে আমরা খুব এ আনন্দিত।

এছাড়াও প্রথমবারের মত এবার বৈশাখী চারু শিল্পমেলার আয়োজন করা হয়েছে। এজন্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম এর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। স্টাকচারে কর্মব্যস্ত শিক্ষার্থী পরমা দাস বলেন, দেয়াল চিত্রের পাশাপাশি বড় আকৃতির একটি কুমিরের স্ট্রাকচার তৈরি করা হয়েছে। যার দৈর্ঘ্যে ১৬ ফুট ও প্রস্থ্যে ৯ ফুট।

এছাড়াও সাধারণ রিকশার দ্বিগুণ মাপের একটি রিকশার স্টাকচারও তৈরি করা হচ্ছে। যার উচ্চতা ৯ ফুট ও প্রস্থ ৬ ফুট। মুখোশের বিষয়ে প্রিয়ন্তী ঢালী বলেন,বৈশাখ উৎযাপন উপলক্ষে এবার আমরা ১০০ এর অধিক মুখোশ তৈরি করছি আমরা।আমাদের গতানুগতিক ফর্ম এর পাশাপাশি, রিকশা পেইন্টিং এর বিভিন্ন ফর্ম ও উজ্জ্বল রং ব্যাবহার করেছি। যেহেতু আমাদের এবার মূলপ্রতিপাদ্য রিকশা পেইন্টিং।

বৈশাখের কাজে ব্যাস্ত আরেক শিক্ষার্থী পায়েল দাস অনিক বলেন,এবারে বৈশাখ উপলক্ষে মঙ্গল শোভাযাত্রায়ও রিকশা পেইন্টিংয়ের বিভিন্ন দিক ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। দীর্ঘদিন সবাই মিলে খুব আনন্দের সাথে কাজ করছি।বৈশাখের কাজ সবসময় আমাদের চারুকলা শিক্ষার্থীদের আলাদা আনন্দ হয়,ক্যাম্পাসে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়।শিক্ষক -শিক্ষার্থী, সিনিয়র-জুনিয়র সবার মধ্যে মেলবন্ধন তৈরি হয়।সিনিয়রদের পাশাপাশি আগামীতে আমরাও এর ধারাবাহিক অব্যাহত রাখব। কাজের ফাঁকে অন্য শিক্ষার্থী তৃষ্ণা দেবনাথ বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালগুলো আরও দৃষ্টিনন্দন করে তোলার মহৎ উদ্দেশ্য নিয়েই রিকশাচিত্র অংকন করা হয়েছে। দেয়াল পেইন্টিংয়ের পাশাপাশি মুখোশ ও বিভিন্ন রিকশার মোটিভ ফেস্টুনও করা হচ্ছে। ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এবার অনেক মানুষ কম ছিল। তাই আমাদের উপর চাপ হয়েছে । তবুও আমরা সবাই মিলে কাজ গুলো শেষ করতে পারছি।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহা. আলপ্তগীন বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ইউনেস্কোর অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে রিকশাচিত্র স্বীকৃতি পেয়েছে। এজন্যই বাংলা নববর্ষ ১৪৩১ উপলক্ষে আমরা রিকশাচিত্রের যত রকমের অঙ্কন, মোটিভ এবং চিত্রায়ণের যতগুলো অলংকরণ রয়েছে সেগুলো সব নিয়েই রিকশাকে কেন্দ্র করে দেয়াল পেইন্টিং করেছি। মূলত এবারে আমাদের থিম হচ্ছে রিকশা চিত্র। মঙ্গল শোভাযাত্রাতেও বড় আকৃতির রিকশা স্টাকচার ও কুমিরের স্টাকচার থাকবে।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহণে আমরা বাংলা নববর্ষকে বরণ করে নিতে চাই। সেজন্য ১৮ এপ্রিল আমরা বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠান করবো।মঙ্গল শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা সহ বিগত দিনে চলে আসা সকল আয়োজন থাকবে। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালগুলোতেও চারুকলার শিক্ষার্থীরা নান্দনিক রিকশাচিত্র ফুটিয়ে তুলার কাজ করছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here