
সেই সময়ে অর্থনৈতিক ও খানিকটা ক্রিকেটীয় বিচারে দুই পরাশক্তি হয়ে ওঠা এশিয়ার দেশ ভারত ও পাকিস্তানের কিছু কর্মকর্তা ঠিক করলেন, তারা ক্রিকেটকে এশিয়ায় আনতে চান। এই চাওয়ায় যোগ দিলেন ভবিষ্যৎ টেস্ট খেলুড়ে দেশ বাংলাদেশ ও তখন মাত্র উঠতে থাকা শ্রীলঙ্কার কর্মকর্তারাও।
আর এদেরই নিজেদের প্রমাণ করার প্রথম পদক্ষেপ ছিলো এশিয়া ক্রিকেট কাউন্সিল (এসিসি) গঠন এবং এশিয়া কাপ আয়োজন করা। সেই প্রমাণের তাগিদ থেকে শুরু করা এশিয়া কাপ এই ৩২ বছরে বহুবার রং বদলেছে। দলের সংখ্যা কমেছে, বেড়েছে; এশিয়া কাপ নিয়ে অনেক মতবিরোধও তৈরি হয়েছে। সবকিছু পার করে টিকে আছে এশিয়া কাপ। তবে এবার সেই টুর্নামেন্টই একেবারে ফরম্যাট বদলে হাজির হচ্ছে দুনিয়ার সামনে।
হ্যাঁ, আজ থেকে শুরু হচ্ছে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের এশিয়া কাপ। কার্যত গত ১৯ ফেব্রুয়ারি আফগানিস্তান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের খেলার ভেতর দিয়ে মাঠে গড়িয়েছে নতুন ফরম্যাটের এশিয়া কাপ। সেটা ছিলো বাছাইপর্ব। আফগানিস্তান, আরব আমিরাত, ওমান ও হংকংকে নিয়ে চার দলের বাছাইপর্ব শেষ হয়েছে গত পরশু। শেষ ম্যাচে এসে সেই টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে মূল এশিয়া কাপে জায়গা করে নিয়েছে আরব আমিরাত। আর আজ ভারত ও বাংলাদেশ ম্যাচ দিয়ে শুরু হতে যাচ্ছে মূল টুর্নামেন্ট। সেখানে বাকি তিন প্রতিযোগী—পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও আমিরাত।
১৯৮৪ থেকে শুরু করে গত বছর পর্যন্ত ১২টি এশিয়া কাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথম দিকে দুই বছর বিরতিতে হলেও মাঝে লম্বা সময় অনিয়মিত ছিলো আয়োজন। গত চারটি আসর আবার ঠিকঠাক মতো দুই বছর বাদে বাদে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে ২০১২ সাল থেকে এই নিয়ে টানা তিনবার বাংলাদেশে আয়োজিত হচ্ছে টুর্নামেন্টটি। সবমিলিয়ে বাংলাদেশে পঞ্চমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এশিয়া কাপ।
তবে বাকি সব আসরের সাথে এবারের আসর একেবারেই আলাদা। প্রথম থেকেই পঞ্চাশ ওভারের টুর্নামেন্ট থাকা এশিয়া কাপ এবার ২০ ওভারে নেমে আসছে। মূল এশিয়া কাপ শেষ হওয়ার তিন দিনের মাথায়ই শুরু হতে যাওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে সামনে রেখে এই অভিনব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এসিসি শুরুতে ঠিক করেছিলো, এখন থেকে এশিয়া কাপটা নিয়মিত টি-টোয়েন্টিই হবে।
কিন্তু আইসিসির রাহুমুক্ত হয়ে আরও একবার প্রাণ ফিরে পেতে চলা এসিসি আবার ঠিক করেছে, পরের আসরটা আবারও ওয়ানডে হবে। সেটা কী সময়ে সময়ে বদলাবে, নাকি চিরতরে ওয়ানডেতে ফিরে যাবে; বলা কঠিন। তবে আপাতত ভাষ্যটা এমন যে, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বছর ২০ ওভার এবং ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগের বছর ৫০ ওভারের খেলা হবে।
শেষ পর্যন্ত পরিণতি যাই হোক, এটুকু নিশ্চিত যে তিন দশকেরও বেশি সময় পার করে ঐতিহ্যবাহী এই টুর্নামেন্ট এবার নতুন রঙে রাঙাতে চলেছে নিজেকে। সেই নতুনের যাত্রা শুরু হচ্ছে পুরনো বাংলাদেশ থেকেই। এই এশিয়া কাপই এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে আনন্দ ও দুঃখের টুর্নামেন্ট ২০১২ সালে মহাকাব্যিকভাবে ফাইনালে উঠেছিলো বাংলাদেশ। আর সেখানেই ২ রানে হারাতে হয়েছিলো শিরোপা। নতুন এই শুরুর সময়ে কে জানে, বাংলাদেশ সেই দুঃখ ভুলিয়ে নতুন কিছু স্বপ্নের দুয়ার খোলে কি না!