কলকাতা প্রতিনিধি :: কুমুদ সাহিত্য মেলায় ৩ মার্চ ২০২০ কোগ্রাম, মঙ্গলকোটে ‘নজরুল রত্ন’ পুরস্কার ও সংবর্ধনা প্রদান করা হল কবি-সাহিত্যিক ফারুক আহমেদকে।
নজরুল-রত্ন পুরস্কার কবি ফারুক আহমেদ-এর হাতে তুলে দিলেন সাহিত্যিক ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়।
পল্লিকবি কুমুদরঞ্জন মল্লিক আর কবি কাজী নজরুল ইসলামকে স্মরণ করে প্রতি বছর আয়োজিত হচ্ছে দু’জন কবির মধুর সম্পর্কের আলোকে বিশেষ সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন ‘কুমুদ সাহিত্য মেলা’ যা প্রতিবছর বাংলার মুখ উজ্জ্বল করছে।
কুমুদ সাহিত্য মেলা কমিটির সম্পাদক মোল্লা জসিমউদ্দিন জানালেন, সংবর্ধনা ও পুরস্কার প্রাপকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন উদার আকাশ পত্রিকা ও প্রকাশনের সম্পাদক ফারুক আহমেদ।
কুমুদ সাহিত্য মেলায় একঝাঁক কবি সাহিত্যিক ও শিল্পী উপস্থিত ছিলেন। ৩ রা মার্চ মঙ্গলকোটের কোগ্রামে পল্লিকবি কুমুদরঞ্জন মল্লিক এর জন্মদিন উপলক্ষে কুমুদ সাহিত্য মেলার আয়োজন করছেন মেলা কমিটি। গত দশবছর ধরে চলছে এই কুমুদ সাহিত্য মেলা।
সাহিত্যিকদের একাংশ উপস্থিত হয়ে আয়োজন সার্থক রূপ দিলেন। ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়, জয়দীপ চট্টোপাধ্যায়, ড. বিজলী সরকার, ড. ললিতা পত্রী, অমিত চক্রবর্তী, সোনালী কাজী, দীপঙ্কর সেন, অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরীরা উপস্থিত ছিলেন।
সাহিত্যিকরা মূল্যবান আলোচনা করলেন মঙ্গলকোটের কোগ্রামে পল্লিকবি কুমুদরঞ্জন মল্লিক এর জন্মদিন উপলক্ষে কুমুদ সাহিত্য মেলায়।
বিদ্রোহী কবিতা প্রাক শত বর্ষের মুখে কাজী নজরুল ইসলাম-এর নামে “নজরুল-রত্ন” পুরস্কার ও সংবর্ধনা প্রদান করা হল কবি ফারুক আহমেদকে। তিনি বলেন, বাংলা ও ভারতের কল্যাণে এমুহূর্তে কাজী নজরুল ইসলাম বড় প্রাসঙ্গিক তাঁর লেখা পড়তে হবে। সম্প্রীতির বন্ধন দৃঢ় করতে কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে চর্চা হোক প্রতি ঘরে ঘরে। কাজী নজরুল ইসলাম-এর আর এক নাম ছিল দুঃখু মিয়া।
এদিনে আরও কয়েকজনকে পুরস্কৃত করা হয় কুমুদ সাহিত্য রত্ন (স্নেহাশিস চক্রবর্তী), শান্তিনিকেতন রত্ন (মনিরুল হক), বাদল সরকার রত্ন (নিগমানন্দ মন্ডল), সাহিত্য রত্ন (বৈশাখী মিত্র চ্যাটার্জি), মঙ্গলকোট রত্ন (তুহিনা সুলতানা), বাচিক রত্ন (স্মৃতিকণা ভাদুড়ী), লোচনদাস রত্ন (রফিকুল ইসলাম খাঁন), হুগলি রত্ন (তন্ময় ঘোষ), নুরুল হুদা রত্ন (আব্দুর রব), পূর্বস্থলী রত্ন (দীপঙ্কর চক্রবর্তী), গলসি রত্ন (সেখ নিজাম আলম), সমীরণ রত্ন (চন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়), যামিনী রায় রত্ন (দীপঙ্কর সমাদ্দার), অতুল্য ঘোষ রত্ন (অরবিন্দ সিংহ)।
এদিন তিনজন সাংবাদিককে সংবর্ধনা প্রদান করা হয় উদার আকাশ পত্রিকা ও প্রকাশনের পক্ষ থেকে। সম্মাননা পেলেন সুদিন মন্ডল (সংবাদ সারাদিন) ভাতার, পূর্ব বর্ধমান, সুভাষ মজুমদার (তারকেশ্বর নিউজ) তারকেশ্বর, হুগলি, সুরজ প্রসাদ (নুতন ভোর) সদর বর্ধমান, পূর্ব বর্ধমান।
কাজী নজরুল ইসলাম-এর জন্ম ২৫ মে ১৮৯৯ সালে তাঁর মৃত্যু হয় ২৯ আগস্ট ১৯৭৬ সালে। কাজী নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের জাতীয় কবি। তিনি ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম অগ্রণী বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ ও দার্শনিক যিনি বাংলা কাব্যে অগ্রগামী ভূমিকা রাখার পাশাপাশি প্রগতিশীল প্রণোদনার জন্য সর্বাধিক পরিচিত। তিনি বাংলা সাহিত্য, সমাজ ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব হিসেবে উল্লেখযোগ্য। বাঙালি মনীষার এক তুঙ্গীয় নিদর্শন নজরুল।
পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ দুই বাংলাতেই তাঁর কবিতা ও গান সমানভাবে সমাদৃত। তার কবিতায় বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তাকে বিদ্রোহী কবি নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাঁর কবিতার মূল বিষয়বস্তু ছিল মানুষের ওপর মানুষের অত্যাচার এবং সামাজিক অনাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ।
কবি কাজী নজরুল ইসলাম পুরস্কার পেয়েছেন স্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৭৭), একুশে পদক (১৯৭৬), পদ্মভূষণ।
বিংশ শতাব্দীর বাংলা মননে কাজী নজরুল ইসলামের মর্যাদা ও গুরুত্ব অপরিসীম। একাধারে কবি, সাহিত্যিক, সংগীতজ্ঞ, সাংবাদিক, সম্পাদক, রাজনীতিবিদ এবং সৈনিক হিসেবে অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে কাজী নজরুল ইসলাম সর্বদাই ছিলেন সোচ্চার। তাঁর কবিতা ও গানে এই মনোভাবই প্রতিফলিত হয়েছে। অগ্নিবীণা হাতে তাঁর প্রবেশ, ধূমকেতুর মতো তাঁর প্রকাশ। যেমন লেখাতে বিদ্রোহী, তেমনই জীবনে – কাজেই “বিদ্রোহী কবি”, তার জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী বিশেষ মর্যাদার সঙ্গে উভয় বাংলাতে প্রতি বৎসর উদযাপিত হয়ে থাকে।
নজরুল এক দরিদ্র মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রাথমিক শিক্ষা ছিল ধর্মীয়। স্থানীয় এক মসজিদে সম্মানিত মুয়াযযিন হিসেবেও কাজ করেছিলেন। কৈশোরে বিভিন্ন থিয়েটার দলের সাথে কাজ করতে যেয়ে তিনি কবিতা, নাটক এবং সাহিত্য সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞান লাভ করেন। ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কিছুদিন কাজ করার পর তিনি সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন।
এসময় তিনি কলকাতাতেই থাকতেন। এসময় তিনি ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ সংগ্রামে অবতীর্ণ হন। প্রকাশ করেন বিদ্রোহী এবং ভাঙার গানের মতো কবিতা;ধূমকেতুর মতো সাময়িকী। জেলে বন্দী হলে পর লিখেন রাজবন্দীর জবানবন্দী, এই সব সাহিত্যকর্মে সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা ছিল সুস্পষ্ট। ধার্মিক মুসলিম সমাজ এবং অবহেলিত ভারতীয় জনগণের সাথে তার বিশেষ সম্পর্ক ছিল। তার সাহিত্যকর্মে প্রাধান্য পেয়েছে ভালবাসা, মুক্তি এবং বিদ্রোহ। ধর্মীয় লিঙ্গভেদের বিরুদ্ধেও তিনি লিখেছেন। ছোটগল্প, উপন্যাস, নাটক লিখলেও তিনি মূলত কবি হিসেবেই বেশি পরিচিত। বাংলা কাব্যে তিনি এক নতুন ধারার জন্ম দেন। এটি হল ইসলামী সঙ্গীত তথা গজল, এর পাশাপাশি তিনি অনেক উৎকৃষ্ট শ্যামা সংগীত ও হিন্দু ভক্তিগীতিও রচনা করেন। নজরুল প্রায় ৩০০০ গান রচনা এবং অধিকাংশে সুরারোপ করেছেন যেগুলো এখন নজরুল সঙ্গীত বা “নজরুল গীতি” নামে পরিচিত এবং বিশেষ জনপ্রিয়।
মধ্যবয়সে তিনি পিক্স ডিজিজে আক্রান্ত হন। এর ফলে আমৃত্যু তাকে সাহিত্যকর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়। একই সাথে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে ১৯৭২ সালে তিনি সপরিবারে ঢাকা আসেন। এসময় তাকে বাংলাদেশের জাতীয়তা প্রদান করা হয়।