নওগাঁয় একটি হার্ডওয়ারের দোকানে এক ক্রেতাকে মারপিট করা রক্তাক্ত করার ঘটনায় এলাকাবাসি ও উত্তেজিত জনতা ঐ দোকানে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়।  মঙ্গলবার সকাল ৯ টা থেকে দুপূর ১২ টা পর্যন্ত শহরের গোস্তহাটির মোড় এলাকায় অবস্থিত  হাজী ষ্টোরে হাজার হাজার উত্তেজিত জনতা অবিরত ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এ সময় ঐ এলাকা রণক্ষেত্রে পরিনত হয়। পুলিশের সাথে জনতার দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলতে থাকে। উত্তেজনা নিয়ন্ত্রনে দাঙ্গা পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়েন করতে হয়।

জানা গেছে দুলাল হোসেন(২৩) শহরের ডিগ্রি কলেজের মোড়ে একটি গ্রীল তৈরীর ওয়েল্ডিং ওয়ার্কশপ এবং সদর উপজেলা পরিষদের নিকটে প্রধান সড়কে এস এস পাইপের একটি শো-রুম পরিচালনা করে থাকেন। সেই সুবাদে তিনি এস এস পাইপের একজন নিয়মিত ক্রেতা। আগে নিয়মিতভাবে তিনি হাজী ষ্টোর থেকে এস এস পাইপ ক্রয় করতেন। কিন্তু অতিরিক্ত বেশী মুল্য নেয়ার কারনে হাজী ষ্টোর থেকে মালামাল কেনা বন্ধ করে অন্য দোকান থেকে ক্রয় করতেন।

দুলাল তার জরুরী প্রয়োজনে মালামাল কেনার জন্য ঘটনার সময় হাজী ষ্টোরে যান এবং তার চাহিদা অনুযায়ী ৫০ হাজার টাকা মুল্যের পাইপ ক্রয় করেন। সে টাকা পরিশোধ করার পরও মালামাল সরবরাহ করতে নানা টালবাহানা করতে থাকে। এ নিয়ে দোকান মালিকদের সাথে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন। বাক বিতন্ডার এক পর্যায় হাজী ষ্টোরের অন্যতম মালিক এরশাদ এস এস পাইপ দিয়ে দুলালকে এলোপাতারী মারপিট করতে থাকে। এতে দুলালের বাঁমহাতের একটি অংশের মাংস উঠে যায়। তার চিৎকারে পথচারী এবং পাশের লোকজন ছুটে আসেন এবং তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে নওগাঁ সদর হাসিপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান।

এদিকে দুলালকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে সেখানে উপস্থিত জনগনের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। বিক্ষোব্দ জনতা তখন হাজী ষ্টোরের উদ্দেশ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এ সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার জনতা সেখানে উপস্থিত হয়ে অব্যহতভাবে ইটপাটকেল নিক্ষেপে শরীক হন। প্রায় ৩ ঘন্টা ধরে দফায় দফায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ অব্যাহত থাকে। এতে হাজী ষ্টোরের সামনের সমুদয় গ্লাস ভেঙ্গে পড়ে। উত্তেজিত জনতাকে নিয়ন্ত্রন করতে পুলিশ চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। বরং পুলিশ উত্তেজিত জনতার রোষানলের শিকার হন। এস আই ফিরোজ জনতার উদ্দেশ্যে উচ্চ কন্ঠে বাক্য ছুঁড়ে দিলে জনতা তার উপর হামলা চালিয়ে লাঞ্ছিত করেন।

অবশেষে ঘটনাস্থলে র‌্যাবের একটি টহল দল অবস্থান নেয় এবং দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়। দাঙ্গাপুলিশ উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করে। তারপরও জনতা দুরে দাঁড়িয়ে দফায় দফায় বিক্ষোভ প্রকাশ করে। তাঁরা অভিযোগ করেন হাজী ষ্টোর হার্ডওয়ার ব্যবসায় একচ্ছত্র আধিপত্য বিরাজ করে অহেতুক অতিরিক্ত মুল্য আদায় করে থাকে। এ ছাড়াও খরিদ্দার এবং পার্শ্ববর্তী লোকজনের সাথে যখন তখন দুর্ব্যবহার করে থাকেন। এসব বিষয় নিয়ে এলাকার মানুষ এমনিতেই তাদের উপর ক্ষব্ধ ছিলেন। তারই বহিঃপ্রকাশ এই গণরােষ বলে উল্লেখ করেছেন উপস্থিত জনাতর অনেকেই।

জনগনের উত্তেজনা প্রশমনে পুলিশ তাৎক্ষনিকভাবে দোকানের অন্যতম মালিক ঘটনার নায়ক এরশাদকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

নওগাঁ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আমিনুর রহমার জানিয়েছেন এ ব্যাপারে থানায় একটি মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি চলছে। মামলা দায়ের হলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/তন্ময় ভৌমিক/নওগাঁ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here