ধর্ষনের ঘটনা প্রকাশ পাওয়ায় ধর্ষিতা ও তার মাকে মাথ্যা ন্যাড়া করে দেয়া হয়েছেতানসেন আলম, বগুড়া প্রতিনিধি:: বগুড়ায় ভাল কলেজে ভর্তির প্রলোভন দেখিয়ে কিশোরীকে (১৭) ধর্ষণের ১০ দিন পর ওই কিশোরী এবং তার মার মাথা ন্যাড়া করে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ শুক্রবার রাতেই অভিযান চালিয়ে শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সরকার (২৪) এবং তার ৩ সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে।

গ্রেফতার হওয়া তুফান সরকার জাতীয় শ্রমিক লীগ বগুড়া শহর শাখার আহবায়ক। সে বগুড়া শহরের চকসুত্রাপুর কসাইপাড়া এলাকার মজিবর রহমানের ছেলে। গ্রেফতার অপর ৩জন হলো: তুফানের সহযোগী একই এলাকার দুলু আকন্দের ছেলে আলী আজম দিপু (২২), শহরের কালিতলা এলাকার জহুরুল হকের ছেলে রুপম ( ২২) ও খান্দার সোনারপাড়ার মোখলেছার রহমানের ছেলে আতিক (২৩)। তবে অভিযুক্ত শ্রমিক লীগ নেতা তুফানের স্ত্রী আশা এবং ও বড় বোন ওয়ার্ড কাউন্সিলর মার্জিয়া হাসান রুমকিসহ অন্যরা পলাতক রয়েছে।

এর আগে রাত পৌণে ১০টার দিকে ধর্ষিতা ওই কিশোরী এবং তার মা মুন্নী বেগমকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসাপাতালে ভর্তি করা হয়। তারা শহরের নামাজগড় এলাকায় ভাড়া বাসায় বসাবাস করেন। ধর্ষিতা ওই কিশোরী এবার শহরের জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেছে। তার বাবা ইয়াকুব আলীর শাজাহানপুর উপজেলার রাতাইল বন্দরে তার একটি খাবারের ছোট হোটেল রয়েছে।

জানাযায়, এসএসসিতে পাশ করলেও জিপিএ-৫ না পাওয়ায় ভালো একটি কলেজে ভর্তির আশায় প্রায় ১০ দিন আগে এক পরিচিতের মাধ্যমে তুফান সরকারের সাথে পরিচয় হয়। বিষয়টি জানার পর তুফান তাকে ভালো কলেজে ভর্তি করে দেওয়ার ব্যবস্থা করবে বলে জানায়।

এরপর গত ১৭ জুলাই সকালে তুফান তাকে ফোন করে এবং কলেজে ভর্তি সংক্রান্ত কাগজপত্রে স্বাক্ষরের জন্য শহরের চকসুত্রাপারে তার বাড়িতে যেতে বলে। সে বাড়িতে গেলে ঘরের ভেতর নিয়ে কথা বলার এক পর্যায়ে তুফান তাকে ধর্ষণ করে। এতে রক্তপাত হলে তুফান তার সহযোগী আতিককে খবর দিলে সে ওষুধ এনে খাইয়ে দেয়। এরপর সে বাড়ি চলে যায়। তুফান রাজনৈতিকভাবে খুব প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে ধর্ষণের বিষয়টি ওই কিশোরী চেপে যায় এমনকি তার মাকেও বলার সাহস পায়নি।

ওই ঘটনার প্রায় ১০ দিন পর কিশোরীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের কথা জানতে পেরে তুফানের স্ত্রী আশা ক্ষিপ্ত হয়ে তার বড় বোন বগুড়া পৌরসভার সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মার্জিয়া হাসান রুমকিসহ তুফানের সহযোগী কয়েক জনকে সঙ্গে নিয়ে শুক্রবার দুপুরে ওই কিশোরীদের বাসায় যায়। সেখান থেকে তারা মা মেয়েকে কাউন্সিলর রুমকির বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ঘরের মধ্যে তুলে গালিগালাজ করতে করতে তাদের দু’জেনর (মা ও মেয়ে) মাথার চুল কেটে দেয়।

পরে নাপিত ডেকে এনে ন্যাড়া করে দেওয়া হয়। এরপর আশা এবং তার বোন রুমকিসহ অন্য সন্ত্রাসীরা তাদের বেধড়ক মারপিট করে। এতে তারা হাত-পাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ প্রচ- আঘাত পান। প্রায় ৪ ঘন্টা ধরে নির্যাতনের পর তুফানের স্ত্রী আশা ও তার বড় বোন রুমকি তাদেরকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়ে ২০ মিনিটের মধ্যে বগুড়া শহর ছাড়ার নির্দেশ দেয়। অন্যথায় তাদের আরও খারাপ পরিণতি ভোগ করতে হবে হুমকি দেয়।

বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্ত তুফান সরকার ওই কিশোরীকে ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে।
জাতীয় শ্রমিক লীগ বগুড়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শামছুদ্দিন শেখ হেলাল জানান, তুফান আমাদের সংগঠনের শহর শাখার আহবায়ক।

বগুড়া সদর থানার ওসি এমমাদ হোসেন জানান, ওই ঘটনায় ধর্ষিতা কিশোরীর মা মুন্নী বেগম বাদী হয়ে বগুড়া সদর থানায় নারী নির্যাতন ও অপহরণের অভিযোগে পৃথক ধারায় দুইটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলা দুইটিতে মোট ১০জনকে আসামী করা হয়েছে। এরমধ্যে ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এজাহারে তুফান সরকারের বিরুদ্ধে কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে। শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে তারা মা- মেয়েকে নির্যাতনের খবর পাওয়ার পর পরই আমরা দু’জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে দিই। পরে আসামীদের গ্রেফতারে অভিযানে নামি।

 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here