
সুলতান মাহমুদ আরিফ :: এই তো সেই দিন নির্বাচন কেন্দ্রিক নিজস্ব দলে ভোট কিংবা অন্য দল সমর্থনের জের ধরেই গণধর্ষণের স্বীকার হন নোয়াখালীর পাঁচ সন্তানের জননী। বিচারকার্য কতটুকু সম্পাদন হয়েছে তা আজ জাতির কাছে অজানা আর বিচার পাওয়া যেন আকাশকুসুম কল্পনা। টাঙ্গাইলের সখীপুরের ধর্ষণের লোমহর্ষক ঘটনা আজও সচেতন মনে আঘাত হানে বলে বিশ্বাস। সেদিন খেলার মাঠে গল্প করেছিলেন এক জোড়া তরুণ আর তরুণী। হঠাৎ করে তিনটি মোটর সাইকেলে করে পাঁচ জন যুবক এসে মেয়ে আর ছেলেটিকে কাছের জঙ্গলে নিয়ে ছেলেটিকে বেঁধে রেখে তিনজন মিলে গণধর্ষণ করলেন মেয়েটিকে। বাকি দুই জন ছিলো ক্যামরায়!
প্রথম আলোর এই প্রতিবেদন থেকে অনুমেয় যে, দেশে ধর্ষণের প্রবণতা বেড়েছে। সখিপুরেরর ঘটনায় ইতিবাচক হল সেই পাঁচজনের একজনকে পুলিশ ধরতে পেরেছেন। সেই একজনের জবানবন্দিতে উঠে আসে তিনজনের গণধর্ষণকৃত মেয়েটি তাদের প্রতিবেশি। অন্য গ্রামের ছেলের সাথে প্রেম করে বলে তাকে ধর্ষণ করা হয়। এত বড় সাহস পাওয়ার পিছনে তাদের বাংলাদেশের আইন প্রয়োগ থেকে বেঁচে থাকতে পারার চিন্তা থেকে ধর্ষনের কার্য সম্পাদন করা হয়নি তো!!
আর সত্যি বলতে কি তার সেই বিচার ও আজ নিরুদ্দেশ। ধর্ষনের বিচার করার ক্ষেত্রে আমাদের দেশের আইন জারি করা ব্যক্তিগুলো আগে ব্যক্তির ক্ষমতার দিকে নজর দেয়। যেই ধর্ষণ কারীর ক্ষমতা যত বেশি তার শাস্তি তত কম মনে হয়। কিংবা ধর্ষণকারীরা ধর্ষীতার নামে মিথ্যাঅপবাদে তার চরিত্রের মাঝে নষ্টামির চাপ প্রয়োগ করে নারীকেই দোষী করে তুলে। যার প্রেক্ষিতে বিচার হয় মুহ্যমান। ফলে অত্যান্ত কঠিন আাইন থাকা শর্তেও ধর্ষণ হয়ে যাচ্ছে ডাল ভাতের মত সহজীকরণ। এ জন্য অইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
চলতি মাসেই নরসিংদীতে মা- মেয়ে একই সাথে ধর্ষণের স্বীকার হন। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে তৃতীয় শ্রেণীর মেয়েকে ধর্ষণ করার পর হত্যার ভয়ংকর ঘটনাও আমাদের কাছে দৃশ্যমান। এছাড়াও আরো অনেকগুলো ধর্ষণের প্রতিবেদন আমাদের চোখে পড়লেও বিচারকার্য চোখে পড়ছে না বিচারালয়ের।
গত জানুয়ারী মাসে মানবাধিকার সংস্থা “আাইন ও সালিশ” কেন্দ্রের তথ্যমতে গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশে ৩ হাজার ৫৮৭ জন নারী-কিশোরী ধর্ষণের স্বীকার হয়েছেন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় ২৭৮ জনকে। অবাক করা ব্যপার এদের মধ্যে ৮৬ শতাংশ ই কিশোরী। বর্তমান ৫-১১ বছরের মেয়েরাই বেশি ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। যার প্রমান ২০১৯ জানুয়ারি মাসে প্রথম ১৮ দিনেই ধর্ষণ হয় ২৩ জন নারী- কিশোরী। তাদের মধ্যে ১৫ জন ই ছিলো কিশোরী। ১৯ হাজারেরও বেশি ধর্ষণের মামলা এসেছে পাঁচ বছরে।
তাহলে হিসাব করলে দেখা যায় গড়ে প্রতিদিন প্রায় ১১ টি মামলা হচ্ছে। দেশে ধর্ষণের তুলনায় ধর্ষণ মামলায় আসামীদের হার একদম কম। প্রথম আলো প্রতিবেদনে দেখা যায় নিষ্পত্তি হওয়া মামলাগুলোর মাত্র ৩ শতাংশের সাজা হয়েছে। এই যেন বিচার প্রয়োগে বাধা কারীর ধর্ষনের নিশায় মত্ত্ব হওয়ার মত। এরকম বিচারহীনতার পরিবেশ সরকার এখন থেকে কঠোরভাবে দমন না করলে “ডিজিটাল সোনার বাংলাদেশ” গড়ার লক্ষ্য ব্যহত হবে।
লেখকঃ অনার্স ৩য় বর্ষ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, ঢাকা।