কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে আর্সেনিক রোগে জর্জরিত একটি গ্রামের প্রায় দু’হাজার মানুষ। আর্সেনিক রোগে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২৫জন গ্রামবাসীর। মৃত্যু মিছিলেও রয়েছে আরও গ্রামের অসংখ্য মানুষ। তারপরও আর্সেনিক রোগ দুষনে বা নিরসনে আজও সরকারী বা বে-সরকারীভাবে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি । আর্সেনিক মুক্ত বিশুদ্ধ পানির অভাবে নিরুপায় হয়ে জেনে শুনেই প্রতিনিয়ত আর্সেনিক বিষযুক্ত পনি পান করতে হচ্ছে ওই গ্রামের অসংখ্য মানুষকে। জানা গেছে, উপজেলার গ্রাগপুর ইউপি’র ভারত সীমান্ত ঘেঁষা পাকুড়িয়া গ্রামের অসংখ্য মানুষ আর্সেনিক রোগে এখন জর্জরিত। গ্রামের প্রায় প্রতিটি পরিবারেই এক বা একাধিক মানুষ এ আর্সেনিক রোগে আক্রান্ত।

ইতিমধ্যে আর্সেনিকোসিস বা আর্সেনিক রোগে আক্রান্ত হয়ে অন্ততঃ ২৫ জনেরও বেশী পুরুষ ও মহিলা মারা গেছে। কোন কোন পরিবারের আবার একাধিক সদস্য এ রোগে আক্রান্ত হয়ে অকালে পৃথিবী ছেড়েছে। স্থানীয় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ রোগ প্রতিরোধে আর্সেনিকযুক্ত নলকুপের পানির পরিবর্তে বিশুদ্ধ পানি পানের পরামর্শ দিলেও সামর্থের অভাবে প্রাণঘাতি জীবাণুযুক্ত পানিই পান করছেন ওই গ্রামের অধিকাংশ হত দরিদ্র মানুষ। ফলে দিনকে দিন রোগাক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ভূক্তভোগীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে ওই গ্রামের মানুষ এ সমস্যায় ভুগলেও কেবল বিশুদ্ধ পানি পানের পরামর্শ দেয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের কার্যক্রম। সরেজমিন গ্রামটি ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার সীমান্তে ঘেঁষা বর্ধিষ্ণু একটি গ্রাম পাকুড়িয়া। এ গ্রামে বসবাস করে প্রায় সহস্রাধিক পরিবার।

তবে আশপাশের গ্রামের মানুষের কাছে গ্রামটি আর্সেনিক গ্রাম বলে পরিচিত। এ নামকরনের  কারণ হিসেবে যা জানা যায় তা রীতিমত ভয়ংকর ও গা শিউরে উঠার মত। গ্রামের প্রতিটি পরিবারের অন্ততঃ একটি করে সদস্য হলেও আর্সেনিক রোগে আক্রান্ত। কোন কোন পরিবারের একাধিক সদস্য এ রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। ইতিমধ্যে এরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ২৫জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।

আবুল কালাম, ইসরাফিল, ইসলাম আলী, নুরাল ইসলাম ও ফুলবাস আলীসহ অনেকে জানান, স্থানীয় জনস্বাস্থ্যপ্রকৌশল বিভাগ ৩’শ ফুটের অধিক গভীরে মাটির স্তরে আর্সেনিক নেই সেই স্তরে পাইপ বসিয়ে নলকুপগুলো পুণঃস্থাপনের জন্য গ্রামের মানুষকে পরামর্শ দেয়। কিন্ত ওই এলাকার মাটির ৩’শ ফুট নিচে পাথরের স্তর রয়েছে। সে কারনে কেউ কেউ ৩’শ ফুটের বেশি পাইপ দিয়ে নলকুপ স্থাপনের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। এতে করে সেখানকার মানুষ দিনের পর দিন জীবাণুযুক্ত প্রাণঘাতী পানি পান করার ফলে আর্সেনিক আক্রান্ত দিনদিন বেড়েই যাচ্ছে। আক্রানত্মদের পাশাপাশি এলাকার জনপ্রতিনিধিরা অবিলম্বে এলাকায় বিশুদ্ধ পানির প্ল্লান্ট স্থাপনের দাবী জানিয়েছেন। আর্সেনিক আক্রানত্ম রিয়াজান জানান, তার স্বামী, শাশুড়ি ও দেবর আসেনিক আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। এরপর একে একে তিনি ও তার ছেলে মেয়ে এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এ গ্রামে এমন কোন পরিবার পাওয়া যাবে না যেখানে অন্তত: একজন আর্সেনিকে আক্রান্ত মানুষ নেই। এ কারনেই আশপাশের গ্রামের মানুষ গ্রামটিকে আর্সেনিক গ্রাম বলতেই জানে। আর্সেনিক আক্রান্ত ফুলবাস আলী জানান, ১৫/১৬ বছর আগে থেকেই তারা আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করে রোগাক্রান্ত হয়ে মারা গেলেও তারা জানতো না কোন রোগে আক্রান্ত হয়ে তাদের স্বজনরা মারা যাচ্ছে। কয়েক বছর আগে এলাকার কয়েকটি নলকুপের পানি পরীক্ষা করে মারাত্মক আর্সেনিক ধরা পড়ে। এখন এ গ্রামে সুস্থ মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল।

প্রাগপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম গেদু জানান, গ্রামের প্রায় ২ হাজার মানুষ আর্সেনিকোসিস রোগে ভূগছেন।স্থানীয় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ পানি পরীক্ষা করে গ্রামের অধিকাংশ নলকুপে আর্সেনিক পেয়েছে। তারা এসব নলকুপ নির্দিষ্ট পরিমান পাইপ দিয়ে পুণঃস্থাপনের পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্ত অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়ায় ও মাটির নিচে পাথরের স্তর থাকায় গ্রামের দরিদ্র মানুষের কাছে এ পদ্ধতিতে নলকুপ পুণঃস্থাপন অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মুন্সী মো. হাচানুজ্জামান পাকুড়িয়া গ্রামে ভয়াবহ আর্সেনিকের কথা স্বীকার করে বলেন, সীমিত সম্পদ ও লোকবল দিয়ে তারা পরিসি’তি মোকাবিলার সাধ্যমত কাজ করে যাচ্ছেন। মাটির নিচে পাথরের সত্মর থাকায় আর্সেনিকমুক্ত পর্যনত্ম তাদের পক্ষে পাইপ বসানো সম্ভব হচ্ছে না। তবে জাইকার একটি বিশেষ টিম ওই এলাকায় কাজ শুরু করেছে। অচিরেই সেখানকার মানুষের জন্য আর্সেনিকমুক্ত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা সম্ভব হবে।

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/কাঞ্চন কুমার/কুষ্টিয়া

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here