অপরুপ সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি সবুজ সমারোহে ভরপুর চায়ের রাজধানী খ্যাত পর্যটন নগরী শ্রীমঙ্গলে বিগত বৎসরের তুলনায় এবার পর্যটকদের উপছে পড়া ভীর লক্ষণীয়। পবিত্র ঈদুল আয্হার এই ছুটিতে বিগত বৎসরের চেয়ে এবছর শ্রীমঙ্গলে পর্যটকের সংখ্যা কয়েক গুন বৃদ্ধি পেয়েছে বলে পর্যটন সংশ্লিষ্ট দ্বায়িত্বশীলরা জানান। দেশের সর্বাধীক সংখ্যক পর্যটন স্পটের অবস্থান এই শ্রীমঙ্গলে। ঈদের প্রায় এক মাস পূর্ব থেকেই এখানকার সবগুলো রিসোর্ট, কটেজ, লাক্সারী হোটেল থেকে শুরু করে ছোট-বড় সকল ধরনের আবাসিক হোটেলে অগ্রীম বুকিং হয়ে যায়। একই সাথে ফেরার জন্য বুকিং দেওয়া হয়েছিল ট্রেন ও বাসের টিকেট।
বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র এবং আবাসিক হোটেল ও রিসোর্ট ঘুরে দেখা গেছে, ঈদের ছুটিসহ বাড়তি ছুটি নিয়ে পরো সময়টি উপভোগ করতে ঈদের পরপরই পর্যটকরা স্ব-পরিবারে এখানে চলে এসেছেন। শ্রীমঙ্গলে পৌছেই আবাসনটি বুঝে নিয়ে বেরিয়ে পরেছেন এক স্পট থেকে আরেক স্পটে। ছুটছেন আর আনন্দ উপভোগ করছেন প্রকৃতির কাছাকাছি থেকে। প্রতিটি পর্যটন কেন্দ্রের দ্বায়িত্বশীলদের ধারনা, এ অবস্থা থাকবে আগামী ১ মাস পর্যনত্ম। রেইন ফরেষ্ট অফিসার এনাম হোসেন চৌধুরী এ প্রতিবেদককে জানান, ঈদের ও ঈদের পরবর্ত্তী ছুটির পাশাপাশি শীতকালীন ছুটি উপভোগ করেতে পুরো ঋতুতেই এখানকার প্রতিটি পর্যটন স্পট থাকবে সরগরম।
শহরস্থ টি-টাউন রেষ্ট হাউসের স্বত্বাধীকারী আব্দুল আজিজ জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে। ফলে অনেকে ১মাস আগে থেকেই হোটেল বুকিং করে রেখেছেন। এর বাস্তবতা চোখে না দেখলে কখনই বিশ্বাস হবার নয়। আসলে যান্ত্রিকতার পেষনে যখন একঘেঁয়েমীতে মানুষ যখন হাঁফিয়ে উঠে তখনই মুক্তি পেতে সবাই ছুটে চলে শান্ত, অনাবিল সবুজ প্রাকৃতির কাছে। আর মানুষের এসব চাহিদা মেটাতেই বুঝি চির সবুজের সাজে স্বজ্জিত নয়নাভিরাম শ্রীমঙ্গল। শ্রীমঙ্গল তথা মৌলভীবাজার জেলা ঘিরে পর্যটকদের জন্য রয়েছে প্রায় শতাধিক পর্যটন স্পট। প্রত্যেকটি স্পট ঘিরে রয়েছে সীমাহীন আনন্দ আর নব নব অভিজ্ঞতার খোড়াক। গ্যাস বিস্ফোরনে ক্ষত-বিক্ষত মাগুড়ছরা, বৃটিশদের ডিন্সটন সিমিট্রি, শত শত পাহাড় টিলার বেষ্টনী, আশ্চর্য পাহাড়-ডোবা লেক, হামহাম জলপ্রপাত, মৌ-ভ্যালী, অপরূপ জলপ্রপাত যজ্ঞকুন্ডের ধারা, দেশের ঐতিহ্যবাহী জলাধার হাইল হাওড়ের অন্যতম আকর্ষন পাখিদের স্থায়ী অভয়াশ্রম বাইক্কাবিল, আনারস, লেবু ও কাঠালের সারি সারি বাগান, খাসিয়া পানের বরজ, ছোট-বড় পাহাড়ী লেক। বিশেষ করে শ্রীমঙ্গল উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, নয়নাভিরাম শ্যামলীর অপরূপ দৃশ্য, শ্রীমঙ্গলে বাংলাদেশ চা-গবেষনা কেন্দ্র, টি-মিউজিয়াম, পাহাড়ের চূড়ায় বৃটিশদের-তৈরী নয়নাভিরাম টি-রিসোর্ট (আনত্মর্জাতিক মান সম্পন্ন), প্রায় অর্ধশত চা-বাগানের মনোরম দৃশ্য, রমেশ রাম গৌরের সাতরঙ্গা চা, শ্রীমঙ্গলে সিতেশ বাবুর মিনি চিড়িয়াখানা, খাসিয়া পান পুঞ্জি, গাড়ো পল্লী, টিপরা পাহাড়, ঐতিহ্যবাহী মনিপুরীপাড়ায় মনিপুরী তাঁত শিল্প। বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা গাড়িতে বিভিন্ন ধরনের রং-বেরঙের ব্যানার ঝুলে রয়েছে। কেউ ব্যানারে লিখেছেন ‘ঈদ-মোবারক, শ্যামলীতে আনন্দ ভ্রমন’। আবার কেউবা লিখেছেন ‘ঈদের ছুটিতে আমরা ক’জনা’। কেউ ব্যানারে লিখেছেন ‘মাধবকুন্ডের জলপ্রপাতে আনন্দ ভ্রমণ’। দিন দিন মানুষের ব্যস্ততা বেড়েছে, ঠিক তেমনী বাড়ছে বিভিন্ন পর্যটন স্পটে পর্যটকদের ভীড়।
মৌলভীবাজার জেলার চা বাগানসহ শতাধিক পর্যটন এলাকা, শ্রীমঙ্গলে সিতেশবাবুর চিড়িয়াখানা, বড়লেখার মাধবকুন্ড জলপ্রপাত, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবপুর লেক, খাসিয়া পুঞ্জি, মৌলভীবাজারে বর্ষিজোড়া ইকোপার্ক, কোথাও তিল ধারনের ঠাই নেই। কেউ কেউ যাচ্ছেন শ্রীমঙ্গলের আদিবাসী মনিপুরী পল্লীতে পছন্দের পোষাক কিনতে। পরিবারের সাথে আসা শিশুদেরও আনন্দের সীমা নেই। দেশের বিভিন্ন এলাকার পর্যটকদের পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দারাও ঈদের ছুটিকে কাজে লাগিয়ে বের হয়েছেন নয়নাভিরাম ও আকর্ষনীয় এলাকা গুলোতে বেড়াতে। মাধবকুন্ড জলপ্রপাত,চা-বাগান,চিড়িয়াখানা,লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান,চা-গবেষনা কেন্দ্র ও সাত রঙ্গা চায়ের দোকানে পর্যটকের উপচে পরা ভীরের কারণে যেমন খুশী ব্যবস্থাপনা কর্তপক্ষ তেমনী পর্যটকরা খুশী হতে পারেননি সুযোগ-সুবিধার অপ্রতুলতার কারনে।
ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/ কাওছার ইকবাল/শ্রীমঙ্গল