মারুফ সরকার, স্টাফ রির্পোটার ::

সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন এলাকায় কালোবাজারি চক্রের সক্রিয় সদস্যরা কাউন্টার হতে এবং অনলাইনে টিকিট ক্রয় করে অধিক মূল্যে বিক্রয় করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৮ ফেব্রয়ারি ২৩ ইং বিকাল হতে রাত পর্যন্ত চলমান র‍্যাব-৩ এর দুটি পৃথক অভিযানে রাজধানীর কমলাপুর এবং বিমানবন্দর রেলস্টেশন এলাকা হতে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি চক্রের মূলহোতা উত্তম দাস (৩২) ও তার তিন সহযোগী মোঃ ইলিয়াস (৫৯)মোঃ শাহ আলম (৩৪)মোঃ খোকন মিয়া (৫৫)কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

গ্রেফতারকৃত আসামীদের নিকট হতে ৪২ টি কালোবাজারি টিকিট (৫৬ টি আসন), ০৩ টি মোবাইল ফোন ০১ টি সীমকার্ড এবং নগদ ১৫০০/- টাকা উদ্ধার করা হয়।

দুপুরে র‍্যাব-৩ এর প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ জানান,রাজধানীর কমলাপুর এবং বিমানবন্দর রেলস্টেশনসহ সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন রেলস্টেশনে অধিক মুনাফার আশায় ট্রেনের টিকিট কালোবাজারির মাধ্যমে একটি সংঘবদ্ধ চক্র দীর্ঘদিন যাবৎ তাদের তৎপরতা চালিয়ে আসছে। কমলাপুর রেলস্টেশনে এই কালোবাজারি চক্রটির একজন অন্যতম মূলহোতা উত্তম দাস এবং অন্যান্য সদস্যরা মিলে রেলস্টেশনে লাইনে দাড়িয়ে এক একটি এনআইডি ব্যবহার করে টিকিট সংগ্রহ করে। এছাড়াও অনলাইনে বিভিন্ন পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও মুঠোফোন নাম্বার ব্যবহার করেও টিকিট সংগ্রহ করে থাকে। এরপর উত্তম দাস এর নেতৃত্বে এক একটি ট্রেন ছাড়ার ৩/৪ ঘন্টা আগে থেকে তারা অধিক মূল্যে টিকিট বিক্রির তৎপরতা শুরু করে। ট্রেন ছাড়ার সময় যত ঘনাতে থাকে তাদের মজুদকৃত কালোবাজারি টিকিটের দাম তত বাড়তে থাকে।

তারা সাধারণত দিগুণ মূল্যে টিকিট বিক্রি করে থাকে। সুযোগ এবং সময় বুঝে অনেক ক্ষেত্রে তারা টিকিটের দাম আরও বাড়িয়ে দেয়। এই চক্রটি মূলত সোনার বাংলা, কালনী এক্সপ্রেস,  চট্টলা এক্সপ্রেস, তূর্ণা নিশিথা, পঞ্চগড় এক্সপ্রেস, সুন্দরবন এক্সপ্রেস, তিস্তা এক্সপ্রেস, মহানগর প্রভাতী, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস এবং পারাবত এক্সপ্রেস এই সকল ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি করে থাকে। এই চক্রটির আরও সদস্য ইউনিট রয়েছে। প্রতিটি ইউনিটে ৫-৭ জন করে সক্রিয় সদস্য রয়েছে যারা তাদের টার্গেটকৃত ট্রেনসমূহের টিকিট কালোবাজারি করে সাধারন যাত্রীদের নিকট চড়াদামে বিক্রি করে প্রচুর মুনাফা অর্জন করে।

উক্ত চক্রের মূলহোতা উত্তম দাস নিজ জেলা কুমিল্লার বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তিদের পরিচয় ব্যবহার করে এবং রেলস্টেশনে কর্মরত অসাধু একটি চক্রের যোগসাজসে ২০১৮ সাল থেকে টিকিট কালোবাজারির ব্যবসা শুরু করে। সে মূলত নিজে টিকিট কাটার কাজ না করে তার অধিনস্ত অপরাপর ৪/৫ জন কর্মী দ্বারা বিভিন্ন মাধ্যমে টিকিট সংগ্রহ পূর্বক চড়ামূল্যে বিক্রি করে থাকে। ইতোপূর্বে উত্তম দাস বিভিন্ন সময়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী পুলিশ কর্তৃক ০২ বার গ্রেফতার হয়ে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা খেটে জামিনে মুক্ত হয়। জামিনে মুক্ত হয়ে সে পুনরায় একই পেশায় নিয়োজিত হয়। এই সংঘবদ্ধ চক্রটি দীর্ঘদিন যাবৎ চক্রের মূলহোতা উত্তম দাসের নেতৃত্বে বিমানবন্দর ও কমলাপুর রেলস্টেশন এলাকায় বিভিন্ন ট্রেনের টিকিট কালোবাজারির মাধ্যমে সাধারণ যাত্রীদের নিকট হতে প্রচুর পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয়।
রেলস্টেশনে যে পরিমাণ টিকিট বরাদ্দ থাকে তার মধ্যে ৫০ শতাংশ বিক্রি হয় অনলাইনে। যার ফলে কাউন্টারে এসে অনেকে টিকিট না পেয়ে ফিরে যান। আর এই সুযোগটিই গ্রহণ করে টিকিট কালোবাজারি চক্রের সদস্যরা। অনেক সময় তারা রিক্সাওয়ালা, কুলি, দিনমজুর এদেরকে অল্প টাকার বিনিময়ে লাইনে দাড় করিয়ে তাদের মাধ্যমে টিকিট সংগ্রহ করে। এছাড়াও অনলাইনে বিভিন্ন পরিচয়পত্র (এনআইডি) ব্যবহার করেও টিকিট সংগ্রহ করে থাকে। সংগ্রকৃত টিকিট নিয়ে এরা রেলস্টেশনের ভিতরে ছড়িয়ে পড়ে।তারা তখন দিগুন মূল্যে টিকিট বিক্রি করে থাকে। সুযোগ এবং সময় বুঝে অনেক ক্ষেত্রে তারা টিকিটের দাম আরও বাড়িয়ে দেয়। এটা তাদের স্বাভাবিক সময়ের কার্যক্রম হলেও সাপ্তাহিক সরকারী ছুটি অথবা বিভিন্ন ছুটিকে কেন্দ্র করে তারা এক একটি টিকিট ৩-৪ গুন বেশি মূল্যে বিক্রয় করে থাকে। তারা প্রত্যেকে দীর্ঘদিন যাবৎ এই পেশার মাধ্যমে তাদের জীবিকা নির্বাহ এবং যাবতীয় খরচ চালিয়ে আসছে বলে জানায়।

এছাড়াও গ্রেফতারকৃত মূলহোতা উত্তম দাসের নেতৃত্বে এবং রেল কর্তৃপক্ষের একটি অসাধু চক্রের যোগসাজসে ঢাকা শহরে টিকিট কালোবাজারীর একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তারা দেশব্যাপী টিকিট কালোবাজারীর কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে বলে জানায়। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় উত্তম দাসের ক্লায়েন্ট রয়েছে যাদের সাথে ফোনে যোগাযোগ করলে তারা মানুষের সুযোগ বুঝে চড়ামূল্যে কখনো দিগুন তিনগুন মূল্যে টিকিটগুলো বিক্রয়ের ব্যবস্থা করে থাকে।
এভাবেই দীর্ঘ ৫ বছর ধরে উত্তম দাস দেশব্যাপী টিকিট কালোবাজারির অপকর্ম চালিয়ে আসছে। ধৃত আসামী উত্তম দাসের বিরুদ্ধে টিকিট কালোবাজারীর দায়ে ০২ টি মামলা রয়েছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক সে ০২ বার গ্রেফতার হয়ে বিভিন্ন মেয়াদে জেল খেটে জামিনে ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে জামিনে মুক্ত হয়। জামিনে মুক্ত হয়ে সে পুনরায় একই পেশায় নিয়োজিত হয়।

এছাড়াও অপর আসামী মোঃ শাহ আলম এর বিরুদ্ধে টিকিট কালোবাজারির দায়ে ০৬ টি মামলা রয়েছে এবং বিগত সময়ে বেশ কয়েকবার গ্রেফতার আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান ফারজানা হক সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার স্টাফ অফিসার (মিডিয়া) র‍্যাব-৩।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here