৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী দিবস। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্ব আজকের এই দিনটি পালন করবে। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম হবে না। দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানবন্ধন, সভা সেমিনার, র্যালী হবে-হবে বড় বড় কথা। দুর্নীতিবাজদের ঘৃণা করতে হবে, তাদের আটক করতে হবে, তাদের বিচারের জন্য কাটগড়ায় দাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে প্রভূতি কথা সরকারসহ দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষ বিভিন্ন বছর বলা হয়। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হবে না। কিন্ত বিজয়ের ৪০ বছর পূর্তির বছরেও আজ প্রশ্ন আসছে দুর্নীতি মুক্ত বাংলাদেশের পথ কত দূর?
বাংলাদেশ স্বাধীনতা বিজয়ের ৩৯ বছর অতিক্রম করছে। মাত্র ৬ দিন পরে ৪০ বছর পূর্তি হবে। সে স্বপ্ন, আশা, প্রত্যাশা নিয়ে স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছে তার কতটুকু আমরা পূলণ করতে পেরেছি। দেশের সর্বত্র আজ নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি। সর্বত্র দুর্নীতি দুর্ণীতি আর দুর্নীতি। দেশে কোন অংশে দুর্নীতি কমে নি। বরং পূর্বের তুলনায় বেড়েছে। এবং প্রতিদিনই বেড়েই চলেছে। সমপ্রতি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) এর প্রতিবেদনে বাংলাদেশ শীর্ষ দুর্নীতি গ্রস্থের তালিকায় ১৩ তম অবস্থানে আছে। সূচকের ০-১০ এর স্কেলে ২দশমক ৭ পেয়ে বাংলাদেশ ১৮৩টি দেশের মধ্যে ১২০ তম আবস্থান পেয়েছে। যা তালিকায় নিন্মক্রম অনুযায়ী ১৩তম। বাংলাদেশের সমান স্কোর পেয়ে আরো ৮টি দেশ ইকুয়েডর, ইথিওপিয়া, গুয়াতেমালা, ইরান, কাজাখস্থান, মঙ্গোলিয়া, মোজাম্বিক ও সলোমন আইল্যান্ড একই অবস্থান নিয়েছে। গত বছরের তুলনায় জরিপে বাংলাদেশের অবস্থান কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে দুর্নীতির উন্নতি হয় বরং গতবছরের তুলনায় সরকাররের প্রভাবশালী এক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক। সূচকের সর্ব নিন্ম স্কোর পেয়ে ২০০৭. ২০০৮, ২০০৯ ও ২০১০ এর মতো সূচকে সর্বচ্চ নম্বর পেয়ে সোমালিয়া পরপর ৫বার শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে। একই স্থানে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। সঙ্গত কারণে ধরে নেওয়া হয় এই দুইটি দেশে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়। অন্যদিকে সূচকের সর্বচ্চ নম্বর ৯ দশমিক ৫ নম্বর পেয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে নিউজিল্যান্ড। সঙ্গতকারণে ধারণা করা হয় এ দেশে দুর্ণীতি হয় সবচেয়ে কম। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ডেনমার্ক ও ফিনল্যান্ড। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে উজবেকিস্থান, তুর্কমেনিস্তান ও সুদান আর চতুর্থ অবস্থানে আসে সিঙ্গাপুর, সুইডেন, নরওয়ে, নেদারল্যান্ড,অষ্ট্রেলিয়া, সুইজারল্যান্ড ও কানাডা।
বর্তমানে বাংলাদেশে দুর্নীতি নেই এমন কোন খাত নেই। সর্বত্র আক্টোপাসের ন্যায় দুর্নীতি জেকে বসে আসে। সরকারের নির্বাচনী অঙ্গিকার ও বিভিন্ন সময় দুর্ণীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তা কতটা কার্যকর হয়েছে? উল্টো সরকারের একাধিক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে। সরকার দুর্নীতি দমন কমিশনকে স্বাধীন করার কথা কললেও কার্যত তা করেন নি। দুর্নীতি দমন কমিশনকে নিজেদের হাতিযার হিসাবে আনেক ক্ষেত্রে ব্যবহার করছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষ থেকে ঘুষখোরদের ধরার জন্য বিভিন্ন ফাদ পাতা হচ্ছিল। যা সত্যিই হাস্যকর। কারণ বাংলাদেশে ঘুষখোরদের ধরার জন্য ফাদ প্রয়োজন হয় না। একটি ভূমি, থানা, জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন কার্যালয়ে, কোর্টে, রেজিষ্ট্রি অফিসে গিয়ে বসলেই দেখা যাবে ঘুষের চিত্র। নতুন করে ফাদ পেতে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের প্রয়োজন হয় না। বিভিন্ন সময় পত্রিকায় দেখা যায় বিভিন্ন ভাব দুর্নীতির সুনির্দিস্ট ব্যক্তিরা পুরষ্কার পাচ্ছেন-পাচ্ছেন পদন্নতি। দুদকের অনেক কর্মকর্তার নামে মামলার তদন্তের সময় ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ উঠে। অনেককে চাকরি থেকে সাসপেন্ড করা হয়। কিন্তু সরসের মধ্যে ভূত থাকলে তা কিভাবে দূর হবে। বরং এত কাজের ক্ষতিউ হয়। বর্তমানে দুদক টিআইবি‘র ন্যায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চেষ্টা করছে। তার জন্য দেশের প্রতিটি উপজেলায় গঠিত আছে জেলা ও উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি। কিন্তু ৯ ডিসেম্বর মানববন্ধন, সভা, সেমিনার আয়োজন ছাড়া তাদের আর কিছু করার থাকে না। জেলায় জেলায় দুর্নীতি দমন কমিশনের অফিস গুটিয়ে এখন ২২ সমন্বিত জেলার মাধ্যমে কার্যক্রম চলছে। অভিযোগ দিলেও মাসের পর মাস কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না। পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে তাদের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা আরো সুবিধা গ্রহণ কলে। ফলে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার আরো পার যায়। তত্বাবধায়ক সরকারের সময় দুদক যে ভাবে কাজ করেছিল আজ কেন তা করা যাচ্ছে না? কেন বড় বড় দুর্নীতিবাজদের ধরা যাচ্ছে না? কোন কোন অবিযান হচ্ছে না? তাহলে কি সরকার দুর্নীতিকে পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করছে? এ সব প্রশ্ন এখন আরো জোরে উকি দিচ্ছে। এ থেকে বেরিয়ে এসে দুর্নীতি মুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হলে সরকার ও দুর্নীতি দমন কমশিনকে এগিয়ে অসতেই হবে।
লেখক : নাজমুল হক, সদস্য, জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি, সাতক্ষীরা, দুর্নীতি দমন কমিশন