সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, যশোর
অনিয়ম ও দুর্নীতির বেড়াজালে আটকে পড়েছে যশোর জেলা আনসার অফিস। খোদ জেলা কমান্ড্যান্ট কেএম মনিরুল ইসলামের প্রত্যক্ষ মদদে নিয়োগ ও ট্রেনিং বাণিজ্য হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সদর উপজেলা কর্মকর্তা আব্দুল মতিন (সাবেক), বাঘারপাড়া উপজেলা কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান ও ব্যাটিালয়ন সিপাহী নৃপেন মজুমদার উৎকোচ আদায়সহ নানা অনৈতিক কর্মকান্ডে সহযোগীতা করছেন। এনিয়ে আনসার সদস্যদের মধ্যে চরম অসি’রতা বিরাজ করছে বিভিন্ন সূত্রে দাবি করা হয়েছে।
অভিযোগে জানা যায়, যশোর জেলা আনসার অফিসে ইতিপূর্বে যারা অ্যাডজুডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের কর্মকান্ডের সাথে বর্তমানে কর্মরত জেলা কমান্ড্যান্ট কেএম মনিরুল ইসলামের কর্মকান্ড একেবারে আলাদা। তিনি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে যোগদান করার পর অনিয়ম ও দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিকরুপ দিতে ব্যস- হয়ে ওঠেন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে যোগদান করে প্রথমেই তিনি ৪ জন আনসারের নিয়োগ বাতিল করেন।
নিয়োগপত্র বাতিলের চিঠিতে তিনি প্রশাসনিক কারণ দেখিয়েছেন। প্রকৃত অর্থে প্রশাসনিক কারণ বলে কোনো কারণই নেই। যোগদানের আগেই নিয়োগপত্র বাতিল চাকুরী বিধির পরিপন’ী বলে দাবি করেছেন এড. মাধব চন্দ্র ঘোষ। তারমতে, অসৎ উদ্দেশ্যে এ কাজটি করেছেন কেএম মনিরুল। বিভিন্ন সূত্রের দাবি, এসব পদে ঘুষ নিয়ে ওই কর্মকর্তা তার পছন্দের লোক নিয়োগ করেছেন। এই নিয়োগের মধ্যদিয়ে মনিরুল ইসলামের দুর্নীতি শুরু বলে মন-ব্য করেছেন সংশ্লিষ্ট অফিসের কয়েকটি সূত্র।
চলতি মাস পর্যন- অর্ধশত ব্যক্তিকে ৩ বছরের মেয়াদে নিয়োগ দিয়ে প্রত্যেকের কাছ থেকে ২৫ থেকে ৩৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে সুত্রে জানা গেছে। এরআগে এই ঘুষের রেট ছিল জনপ্রতি ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার মধ্যে।
নাম প্রকাশ না শর্তে একাধিক সুত্র জানায়, মনিরুল ইসলামের আগে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন তারা ৩ থেকে ৫হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে বিভিন্ন বুদিয়াদী প্রশিক্ষণের সুযোগ করে দিয়েছেন। কিন’ এখন সেই ঘুষের রেট বাড়িয়ে করা হয়েছে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। সুত্র জানায়, গুরুত্বপুর্ণ কোনো প্রতিষ্ঠানে বা ক্যাম্পে চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ পেতে আগে যেখানে লাগতো ৫ থেকে ৭হাজার টাকা, এখন তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। ফলে দক্ষ অনেকেই চাকরী না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। অতিরিক্ত উৎকোচ আদায় ও কথিত অদক্ষ লোক খুঁজে বের করার দায়িত্ব পালন করছেন আব্দুল মতিন ও ব্যাটলিয়ন সিপাহী নৃপেন। এ দু’জন জেলা কমান্ড্যান্ট মনিরুল ইসলামের সেকেন্ড অফিসারের দায়িত্ব পালন করছেন। বিষয়টি এখন ওপেন সিক্রেট।
জেলা কমান্ড্যান্টের তল্পীবাহ এই দুই ব্যক্তি ছাড়া অফিসের কোনো কাজই হয় না। তাদের প্রতিদিনের রুটিন মাফিক কাজ হচ্ছে, মোটরসাইকেলে চেপে জেলার ৮টি উপজেলায় যতগুলো আনছার/ভিডিপি অফিস, ক্যাম্প বা গার্ড রয়েছে সেখানে যাওয়া। সেখানে আনছার কমান্ডারদের (পিসি) কাছ থেকে নির্ধারিত মাসিক ৫ থেকে ১০হাজার টাকা আদায়ের পাশাপশি বিভিন্ন ভয় দেখিয়ে অতিরিক্ত চাঁদা আদায় করাই হচ্ছে তাদের প্রধান কাজ। নিয়ম বর্হিভূত সকল কর্মকান্ড অর্থের বিনিময়ে বৈধতা দিয়েও একেএম মনিরুল আলোচনায় উঠে এসেছেন।
যার প্রমাণ পাওয়া যায় যশোরের বেনাপোল স’লবন্দরে কর্মরত আনসার পিসি মাহবুবুর রহমানের নিয়োগ নিয়ে। নিয়মানুযায়ী, প্রত্যেক আনসার পিসিদের একটানা তিন বছর অঙ্গিভূত (কর্মরত) থাকার পর দু‘বছর অবসরে থাকতে হবে। দু’বছর পর পূণরায় সে চাকরী পাবে। কিন’ পিসি মাহবুব ৬০হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে মাত্র এক মাসের মধ্যে বেনাপোল স’লবন্দরে অঙ্গিভূত হয়েছেন। বিধি বহির্ভুতভাবে এই নিয়োগ দেয়ার কারণে অসোনে-াষ ছড়িয়ে পড়ে সকলের মধ্যে। পিসি মাহবুবের নিয়োগ দেয়ার বিষয়টি এখানেই শেষ নয়। বেনাপোল স’লবন্দরে চাকরী দেয়া হয়েছে আর্থিক চুক্তির ভিত্তিতে।
তাকে প্রতি মাসে জেলা কমান্ড্যান্টকে ১৫হাজার এবং থানা অফিসারকে ৫হাজার টাকা সেলামি দিতে হয়। মৌখিকভাবে এই শর্তে রাজি হওয়ার পরই তাকে নিয়োগ দিয়েছেন কেএম মনিরুল ইসলাম। এসব অনৈতিক দেনদরবারের কারণে এখন বেপরোয়া পিসি মাহবুব। মাহবুব বন্দরে চোর সিন্ডিকেটের সাথে হাত মিলিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা। গত ৬ মাস তার অত্যাচারে অঙ্গিভূত আনসাররা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। এদিকে রেশনের চালের বস-া নিয়েও দুর্নীতি করে যাচ্ছেন আলোচিত এই জেলা কমান্ড্যান্ট। বস-া প্রতি এই কর্মকর্তা ঘুষ নেন ৫টাকা।
এরবাইরে কোন আনসার/ভিডিপি সদস্য অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরীর সুযোগ পেলে এবং সেকারণে আনসার অফিসের কোনো কাগজপত্রের প্রয়োজন দেখা দিলে তাকে দিনের পর দিন ধর্ণা দিতে হয় নৃপেনের কাছে। নুন্যতম ৫‘শ টাকা উৎকোচ দিতে না পারলে তাকে বাড়ি ফিরতে হয় খালি হাতে। ভেরিভেকেশন (ভি আর) রিপোর্টের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম বেঁধে দেয়া হয়েছে । গত ১৭ নভেম্বর যশোর সদরের রামনগর এলাকার আনসার/ভিডিপির এক মহিলা সদস্য অন্যত্রে চাকরীর আবেদন করার জন্য আনসার অফিসের ডকুমেন্টস নিতে আসলে নৃপেন দিনভর তাকে আটকে রেখে শেষ পর্যন- ৫‘শ টাকা উৎকোচ নেয়ার পর তার হাতে একটি নাদাবীপত্র ধরিয়ে দেয়। এভাবে প্রতিদিন কোন না কোন সদস্য বিভিন্ন কায়দায় হয়রানী হয় বলে বিস-র অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এসব অভিযোগের সত্যতা জানতে জেলা কমান্ড্যান্ট কে এম মনিরুল ইসলামের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।