milk

স্টাফ রিপোর্টার :: গো খাদ্য, দুধ, দই ও বাজারে থাকা পাস্তুরিত দুধের ওপর জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের জাতীয় নিরাপদ খাদ্য গবেষণাগারের (এনএফএসএল) জরিপ পরীক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএসটিআই এর আইনজীবী।

এ অবস্থায় হাইকোর্ট অসন্তোষ প্রকাশ করে বিএসটিআই এর আইনজীবী সরকার এম আর হাসানকে বলেছে, ‘অন্যের পরীক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন আপনারা। নিজেরা কেন পরীক্ষা করেন না? আপনারা কেন এত দিনেও পরীক্ষা করে রিপোর্ট দিতে পারলেন না! আপনারা কাজ করার দায়িত্ব নিয়েছেন কিন্তু দায়িত্ব পালন করছেন না। আপনাদের পরীক্ষায় সত্য উদঘাটন হচ্ছে না কেন? শুধু এসি রুমে বসে থাকবেন, তা হবে না। আন্তর্জাতিক পরীক্ষায় পাওয়া যাচ্ছে কিন্তু আপনারা পারছেন না কেন?’

এনএফএসএল এর প্রধান শাহনীলা ফেরদৌসীর বক্তব্য শোনার পর মঙ্গলবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের বেঞ্চ বিএসটিআই এর ভূমিকা নিয়ে এসব প্রশ্ন তোলেন।

পরে হাইকোর্ট ঢাকাসহ সারা দেশের বাজারে কোন কোন কোম্পানির দুধ ও দুধজাত খাদ্যপণ্যে কী পরিমাণ ব্যাকটেরিয়া, কীটনাশক ও সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি সিসা পাওয়া গেছে, তা জরিপ ও নিরূপণ করে একটি তালিকা এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে কী আইনি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, সে প্রতিবেদন দাখিল করেতে বিএসটিআইকে পুনরায় নির্দেশ দেন।

আদালতে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম ও বিএসটিআই এর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সরকার এম আর হাসান (মামুন)। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) আর্থিক সহায়তায় গো খাদ্য, দুধ, দই ও বাজারে থাকা প্যাকেটের পাস্তুরিত দুধ নিয়ে এনএফএসএল জরিপ চালায়। এনএফএসএল জরিপে বাজারের কাঁচা তরল দুধের ৯৬টি নমুনা বিশ্লেষণ করে ৯৩টি নমুনাতেই ক্ষতিকর রাসায়নিক পাওয়া যায়। প্যাকেটজাত তরল দুধের ৩১টি নমুনার (দেশি ২১টি এবং আমদানি ১০টির) মধ্যে ১৭টিতে ক্ষতিকর রাসায়নিক পাওয়া যায়।

এছাড়া দইয়ের ৩৩টি নমুনার ১৭টিতে টিপিসি, ৬টিতে পলিফরম কাউন্ট, ১৭টিতে ইস্ট/মোল্ড এবং ১টিতে সিসা ক্ষতিকর মাত্রায় বিদ্যমান। পশু খাদ্যের ৩০টির মধ্যে ১৬টিতে ক্রোমিয়াম, ৪টিতে আফলাটক্সিন, ২২টিতে টেট্রাসাইক্লিং, ২৬টিতে এনরোফ্লক্সাসিন, ৩০টিতে সিফরোফ্লক্সাসিন এবং ২টিতে পেস্টিসাইট (এন্ডসালফান) ক্ষতিকর মাত্রায় বিদ্যমান।

এই রিপোর্ট গণমাধ্যমে প্রকাশের পর হাইকোর্ট গত ১১ ফেব্রুয়ারি স্বত:প্রণোদিত হয়ে রুল ও আদেশ জারি করে।

ঢাকাসহ সারাদেশে দুধ, দুগ্ধজাত খাদ্য ও গো-খাদ্য পণ্যে কী পরিমাণ ব্যাকটেরিয়া, কিটনাশক এবং সিসাসহ বিভিন্ন রাসায়নিক মেশানো রয়েছে এবং কোন কোন কোম্পানির দ্রব্যে কি পরিমাণ রয়েছে তা নিরূপণ করে একটি জরিপ প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়।

১৫ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) চেয়ারম্যান ও কেন্দ্রীয় নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনা কমিটিকে এ প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়।

সে অনুযায়ী গত ৮ মে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ তাদের পরীক্ষার ফলাফলসহ হাইকোর্টে একটি প্রতিবেদন দাখিল করে। প্রতিবেদনে কোন কোন কোম্পানির দুধে এই ক্ষতিকর রাসায়নিক রয়েছে তা উল্লেখ না করায় আদালত ক্ষোভ প্রকাশ করে কোম্পানিগুলোর নাম-ঠিকানা দাখির করতে বলে।

পরে  হাইকোর্ট গত ১৫ মে জাতীয় নিরাপদ খাদ্য গবেষণাগারের (এনএফএসএল) প্রধান প্রফেসর ড. শাহনীলা ফেরদৌসীকে তলব করে। কী প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পরীক্ষা করা হয়েছিল তা জানার জন্য আদালত ওই তলব আদেশ দেয়। সে অনুযায়ী ড. শাহনীল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় আদালতে হাজির হয়ে তার গবেষণা প্রতিবেদনটি দাখিল করেন।

তার প্রতিবেদন উপস্থাপনের পর বিএসটিআই এর আইনজীবী বলেন, তাদের প্রতিবেদন যে সত্য তা প্রমাণ করার সুযোগ কি? তারা তো অন্য কোনো ল্যাবে যাচাই করেনি। তারা নমুনা সংগ্রহ করেছে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও সাভার থেকে। কিন্তু পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও যশোরেই সবচেয়ে বেশি দুধ উৎপাদিত হয়। সেখান থেকে তারা কোনো নমুনা সংগ্রহ না করে ঢালাওভাবে বলে দিল দুধে এইসব রয়েছে।

প্রতিবেদন দেখে আদালত বলে, প্রফেসর শাহনীলা ফেরদৌসী অভিযুক্ত নন, উনাকে আমরা সহযোগিতা করার জন্য ডেকেছি। এনএফএল এর জরিপ, পরীক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় বিএসটিআইএ এর ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক বলে, ‘জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ল্যাব আন্তর্জাতিক চুক্তির আওতায় প্রতিষ্ঠিত। এ প্রতিষ্ঠান তার পদ্ধতিতে এবং আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্য পণ্য ও পশু খাদ্য পরীক্ষা করেছে।’

এরপর আদালত শাহনীলা ফেরদৌসীর বক্তব্য শুনতে চাইলে তিনি বলেন, ‘২০১৫ সাল থেকে আমরা এই গবেষণা কাজ করে আসছি। আমাদের গবেষণা কাজ ফাও (আন্তর্জাতিক ফুড ও অ্যাগ্রিকালচার অরগানাইজেশান) আন্তর্জাতিকভাবে প্রকাশ করে।’

শাহনীলা বলেন, ‘আমাদের ল্যাবের মান অনেক দেশের চেয়েই উন্নত। আমাদের পরীক্ষার ফলাফল ঠিক আছে কি না তা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যাচাই করা হয়। পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়ার পরই তা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রকাশ করা হয়। এই পরীক্ষার ক্ষেত্রেও সেটা করা হয়েছে।’

‘এখানে শুধুই তিনটি জেলা নয়, বড় বড় প্রতিষ্ঠানের পণ্য রয়েছে। যেমন-মিল্কভিটা, প্রাণ, আড়ং, ফার্ম ফ্রেশ, স্বপ্ন অর্গানিক, আফতাব ডেইরি মিল্ক, ঈগলু ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান রয়েছে যাদের পণ্য সারাদেশেই পাওয়া যায়। সুতরাং বিএসটিআই এর দাবি যথাযথ নয়,’ যোগ করেন তিনি।

শাহনীলা বলেন, ‘খাদ্য দ্রব্যে রাসায়নিক, এন্টিবায়োটিক, সীসার উপস্থিতি নিয়ে আইসিডিডিআর, বি ও সায়েন্স ল্যাবরেটরির প্রতিবেদন ২০১৭ সালেও প্রকাশিত হয়েছে। তা ইন্টারনেটেই রয়েছে। তাই শুধু একমাত্র আমাদের প্রতিবেদনেই যে ওইসব ক্ষতিকর উপাদানের উপস্থিতি পাওয়া গেছে, তা নয়। আইসিডিডিআর, বি ও সায়েন্স ল্যাবরেটরির প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিএসটিআই কী করেছে তা জানা নেই।’

তখন আদালত শাহনীলা ফেরদৌসীকে নিরাপদ খাদ্য গবেষণাগারের (এনএফএসএল) প্রতিবেদন নিয়ে তার বক্তব্য হলফনামা আকারে এক মাসের মধ্যে জমা দিতে বলে। এ পর্যায়ে বিএসটিআই এর আইনজীবী যৌথ টিম গঠন করে বাজার থেকে নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষার নির্দেশনা চান। এর পরই আদালত পুনরায় নির্দেশ দেয়।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here