কলিট তালুকদার, পাবনা প্রতিনিধি :: ‘এই হেমন্তে কাটা হবে ধান, আবার শূন্য গোলায় ডাকবে ফসলের বান’। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তার ‘এই নবান্নে’ কবিতায় এমনই আহবান জানিয়েছিলেন নবান্ন কে স্মরণ করে। ছয় ঋতুর দেশ বাংলাদেশে ঋতু পরিক্রমায় শুরু হয়েছে হেমন্ত। আর হেমন্ত মানেই নবান্ন উৎসব। বাতাসে দোল খাচ্ছে কৃষকরে স্বপ্ন। ফলন যেমনই হোক, কৃষকরে মুখে ধানকাটার গান মনে করেিয় দেয় নবান্ন উৎসবরে কথা।

ধান কেটে বাড়ি নেয়ার পর মাড়াই আর শুকানো। তারপর ধান থেকে চাল তৈরীতে ব্যস্ত কৃষাণীরা। নতুন ধানরে চালে হবে নানা পদের খাবারের আয়োজন। তবে দিন বদলরে পালায় গ্রামরে মানুষরে কাছে অনেকটাই ফিকে হয়ে গেছে নবান্নরে আনন্দ। আগে নতুন ধান গোলায় ওঠার সময় যেভাবে উৎসবের আমেজ বিরাজ করত, তা যেন ফিকে হয়ে যাচ্ছে। পিঠা-পায়েসের সেই আয়োজন আর তেমন চোখে পড়ে না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দিবদলের হাওয়ায় সংস্কৃতি পাল্টে যাচ্ছে। ফলে হারিয়ে যাচ্ছে নবান্নরে ঐতিহ্য। পাবনা সদর উপজেলার মালিগা গ্রামের মাঠে ধান কাটছিলেন কৃষক হোসেন আলী, আবুল হোসেন, কাশেম আলীসহ অনেকে। নবান্ন বা হেমন্ত সম্পর্কে তাদের কাছে জিজ্ঞাসা করতে তারা এ সর্ম্পকে কিছু জানে না বলে জানান। তারা বলেন, এই সময়টায় নতুন ধান কেটে বাড়িতে নেয়ার পর মাড়াই করতে হয়। সেই ধান শুকিয়ে মিলে ভাঙিয়ে চাল করতে হয়। তারপর সেই চালে তৈরী হয় পিঠা-পায়েশ।

গ্রামের বয়ষ্ক ব্যাক্তিরা জানান, আগে ঢেঁকিতে ধান ভানা ও পিঠা তৈরী করতনে গৃহিনীরা। মেয়ে-জামাতাসহ আত্মীয়-স্বজনদরে দাওয়াত করে খাওয়ানো হতো। তবে এখন নাগরকি সংস্কৃতরি আগ্রাসনে গ্রামীণ সংস্কৃতি যেন হারিয়ে যেতে বসেছে। আর আগের মতো ঢেঁকির দেখা মেলেনা। সারা গ্রাম ঘুরে একটি ঢেঁকি খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।

এখন সব বাড়িতে ঢেঁকি পাওয়া যায় না। পুরো গ্রাম ঘুরে হয়তো একজনের বাড়িতে ঢেঁকি পাওয়া যায়। আর ভাল পিঠা বানাতে ঢেঁকিতেই চাল কুড়ানো হয়। আর একজনের ঢেঁকিতে চাল কুড়াতে অনেকের ভীড় জমে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পারিবারিক বন্ধন থেকে দূরে সরে যাচ্ছে মানুষ। পাল্টে যাচ্ছে সংস্কৃতি। ফলে নবান্ন উৎসব আর আগের মতো নেই।

এ বিষয়ে পাবনার চাটমোহরের সংস্কৃতি বিষয়ক লেখক নাট্যকার আসাদুজ্জামান দুলাল বলেন, আসলে এখন পারিবারিক বন্ধনটা আর আগের মতো নেই। আগের মতো আর আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে আত্মিক টানটা নেই। তিনি বলেন, সংস্কৃতি ও অর্থনীতি পাল্টে যাওয়ার কারণে এখন আরে নবান্ন উৎসব আগের মতো দেখা যায়না। নবান্ন উৎসব এখন আনুষ্ঠানতিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here