গোলাম মোস্তাফিজার রহমান মিলন, হিলি প্রতিনিধি ::
হাতে কাপড়ের ব্যাগ ধরিয়ে গাড়িতে ঊঠিয়ে দিয়েছিলো ছেলে ও ছেলের বউ, বলে দিয়েছিলো আর কোনদিন বাসায় আসবে না। গন্তব্য না জানা সেই অশীতিপর বৃদ্ধা শাকিলা বেগম (৮০) ভাগ্যচক্রে দিনাজপুরের হাকিমপুরে এসে পড়েন। নিজের নাম ও কুলাঙ্গার ছেলের নাম আর বাড়ি  ঢাকায় এ ছাড়া আর কিছু বলতে পারতেন না তিনি। বোঝা যাচ্ছিলো, প্রচণ্ড কষ্টে আর শোকে নিজের অতীত হয়ত বলতে চাননা বৃদ্ধা! ঘুরতে ঘুরতে ঠাঁই নেন হাকিমপুরে কর্মরত সাংবাদিক  (রবিউল ইসলাম সুইট) এর বাসার সামনের সিড়িঘরের ছোট্ট কোণে। সাংবাদিকের মাধ্যমে গত ২০ জুলাই খবর পৌছায় উপজেলা প্রশাসনের কাছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার অমিত রায় খবর পাওয়ার পর দ্রুত ব্যবস্থা নেন ও সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জেলা প্রশাসক দিনাজপুরকে বিষয়টি অবহিত করেন। 
মানবিক জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ হাকিমপুর উপজেলা সমাজসেবা অফিসের মাধ্যমে বিষয়টি যাচাই বাছাই করে দ্রুত অবহিত করার নির্দেশনা দেন।
শনিবার (২২ জুলাই) রাতে উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মাসুদ রানা বৃদ্ধা মহিলার সাথে কথা বলে জানতে পারেন, মহিলার নিজের নাম শাকিলা আর ছেলের নাম জামিল, আর মহিলার বাড়ি ঢাকার কোথাও। বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গে জেলা প্রশাসক দিনাজপুরকে অবহিত করেন। জেলা প্রশাসক শাকিল আহম্মেদ দ্রুত মহিলাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা প্রদানের নির্দেশ দেন।
বৃদ্ধা শাকিলা বেগম এর জন্য একটি সমাজসেবা কর্তৃক নিবন্ধিত নিরাপদ স্থায়ী ঠিকানা খোঁজার প্রচেষ্টা চলতে থাকে। জেলা প্রশাসক জেলা সমাজসেবার অফিসের উপ পরিচালককে অনুসন্ধান পূর্বক অবহিত করতে বলেন। গত শনিবার সন্ধ্যার একটু পরে বৃদ্ধাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শিফট করা হয় এবং আবাসিক মেডিকেল অফিসার ও ডিউটি ডাক্তারের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিশ্চিত করা হয়।
ঘটনা দ্রুত আগাতে থাকে। রবিবার ২৩ জুলাই খোঁজ পাওয়া যায় একটা বৃদ্ধাশ্রমের, নাম ‘সাফল্যের গল্প শোনাবো’। জানা যায়, এটা সমাজসেবা কর্তৃক নিবন্ধিত একটা বৃদ্ধাশ্রম এবং এটির অবস্থান রংপুর শহরে। আবারো সমাজসেবার মাধ্যমে বৃদ্ধাশ্রমের ঠিকুজি অন্বেষণ চলে, সার্বিক যোগাযোগের পর বৃদ্ধাশ্রমের কাজকর্ম সন্তোষজনক বলে উপপরিচালক, জেলা সমাজসেবা অফিস থেকে মতামত পাওয়া যায়। ইতোমধ্যে বৃদ্ধাশ্রমের তরফ থেকে জনৈক রেজাউল করিম যোগাযোগ করেন উপজলা প্রশাসনের সাথে ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার খোঁজখবর নিতে থাকেন। দ্রুতই আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, বৃদ্ধাশ্রম থেকে পরিবহন এম্বুলেন্স পাঠানো হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। ওই দিন ২৩ জুলাই রবিবার বিকাল ৫ টা নাগাদ জেলা প্রশাসক দিনাজপুরের প্রতিনিধি হিসেবে সেই বৃদ্ধাকে বৃদ্ধাশ্রমে হস্তান্তর কার্যক্রমে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার অমিত রায়, উপজেলা চেয়ারম্যান হারুন উর রশিদ, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ শ্যামল কুমার দাস, অফিসার ইনচার্জ মোঃ আবু ছায়েম মিয়া, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মাসুদ রানাসহ সাংবাদিকবৃন্দ।
হস্তান্তর কার্যক্রম সমাপনান্তে উপজেলা নির্বাহী অফিসার অমিত রায় বলেন, ‘জেলা প্রশাসক মহোদয়ের আন্তরিক ও সার্বক্ষণিক প্রচেষ্টার ফসল এই কার্যক্রম। এক জন মানবিক জেলা প্রশাসন গড়তে তিনি সব সময়ই প্রেরণা দেন, উদ্ধুদ্ধ করেন। এ রকম একটা মানবিক কাজের অংশীদার হতে পেরে আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি।
এদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, থানার অফিসার ইন চার্জ ও উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা এরকম একটি মহতী কার্যক্রমের অংশ হতে পেরে জেলা প্রশাসক দিনাজপুরের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
উপস্থিত সাংবাদিকবৃন্দ সার্বিক কার্যক্রমের এই সফল সমাপ্তির জন্য উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন এবং দ্রুত সাড়া দানের জন্য জেলা প্রশাসক দিনাজপুরকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। একই সাথে তারা উপজেলা প্রশাসন হাকিমপুরের এই কাজকে অনুসরণীয় মর্মে প্রশংসা করেন।
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here