সিরাজগঞ্জ জেলার সর্বত্রই তীব্র শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। গত তিন’দিনে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় শীতজনিত কারণে ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত ৬ দিন ধরে জেলার কোথাও সূর্য্যের মুখ দেখা যায়নি। দুস্থ ও নিম্নবিত্ত মানুষের দুর্ভোগ চরমভাবে বেড়ে গেছে। যমুনা ও করতোয়া নদীর তীর ঘেঁষা চরএলাকার মানুষের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। জেলা প্রশাসনের নিকট ৫ হাজার ৯৫৩টি কম্বল বরাদ্দ আসার পর তা বিতরণ করা হয়েছে। বর্তমানে বিতরণের জন্য কোনো শীতবস্ত্র প্রশাসনের হাতে নেই। বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্তও সূর্য্যের কোনো মুখ দেখা না যাওয়ায় তীব্র শীতে জনজীবন আরো বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে সকল স্থানে কুয়াশায় ছেয়ে যাচ্ছে। জেলা প্রশাসনের ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিভাগ সূত্র থেকে জানা গেছে, গত বুধবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ২৫ জনের মৃত্যু হয়, এর মধ্যে সদর উপজেলায় সয়দাবাদ পুনর্বাসন এলাকার হারুন মেকার (৭০) শাহজাদপুর আন্দার কোঠা গ্রামের মৃত কানাই লালের স্ত্রী ওজা খাতুন (৪৫), মৃত কালামের স্ত্রী শর্মিলা খাতুন (৭০)। রায়গঞ্জ উপজেলায় শীতে ৩ জনের মৃত্যু হয়। এরা হলো তেবাড়িয়া গ্রামের মৃত সিরাজ আলীর স্ত্রী রোজিনা (৬৫), জাফরউদ্দিনের পুত্র মেরু সেখ (৭৫) ও সামিল দাখিল গ্রামের মৃত আবু তালেবের পুত্র মোফাজ্জল (৭০), কাজিপুর উপজেলায় ৪ জনের মৃত্যু হয়। এরা হলো নতুন মাইবাড়ি গ্রামের জসিমের পুত্র মজিদ (৫৭), মৃত আবজালের স্ত্রী সামনা (৭৫), হাতনাদা গ্রামের মৃত কছিমউদ্দিনের পুত্র রহমান আলী (৮৫) ও সালাভরা গ্রামের মৃত জাফর আলীর পুত্র শাহজাহান (৭০)। বেলকুচি উপজেলায় ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরা হলো দিঘুলিয়া গ্রামের মৃত সগির সরকারের পুত্র জালাল মল্লিক (৬৫), মেহেরনগর গ্রামের আল প্রামানিকের পুত্র তাওহিদ (১২), মৃত এলাহী মোল্লার পুত্র রাজ্জাক মোল্লা (৫৫) ও তেবাড়িয়া গ্রামের জানা প্রামানিকের পুত্র আব্দুল ব্যাপারী (৭৫) ও বেলকুচি সদরের মছিরউদ্দীন মাস্টার (৮২)। তাড়াশ উপজেলায় ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে নওগাঁ গ্রামের হেমন্ত মুরারীর পুত্র ভীম চরন মুরারী (৯০), দেশী গ্রামের জংপূর্ণ চন্দ্র ওরাওয়ের কন্যা বরনী রাণী ওরাও (৭৫), গুরপিপুল গ্রামের প্রেমচানের স্ত্রী কংকনি ওরাও (৬৫)। এরা হলো সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার জুলফিকার আলী ও রায়গঞ্জের মেরু ও কাজিপুর উপজেলার তারাকান্দি গ্রামের সূজা ভূইয়া (৮০)। এ নিয়ে জেলায় ২৫ জনের মৃত্যু হলো। এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোঃ আমজাদ হোসেন ২৫ জনের মৃত্যুর খবরের সত্যতা স্বীকার করে জানান, বুধবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে বয়স্করা শীতে অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাদের মৃত্যু হয়েছে। বিভিন্ন উপজেলা থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস থেকে পাঠানো প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। যারা মৃত্যুবরণ করেছে সবাই দুস্থ এবং নিম্নআয়ের পরিবারের লোকজন। সরকারীভাবে এ পর্যন্ত ৫ হাজার ৯৫৩টি কম্বল পাওয়ার পর তা বিভিন্ন উপজেলায় পাঠানোর পর তা বিতরণ করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জের জেলা প্রসাশনের পক্ষ থেকে আরো ১০ হাজারটি কম্বল, ১৫ হাজারটি সোয়েটার এবং ২০ হাজারটি শিশু পোশাক বরাদ্দ চেয়ে জরুরী ফ্যাক্স বার্তা পাঠানো হয়েছে। গত ৫দিন ধরে বিগত বছরগুলোর চেয়ে সবচেয়ে বেশী শীত পড়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। আরো পর্যাপ্ত শীতবস্ত্রের প্রয়োজন বলে তিনি জানান।
ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/সুজন সরকার/সিরাজগঞ্জ